প্রায় এক বছর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার পর দুই দেশ বর্তমানে আবারও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ শুরু করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়া আবারও উৎস দেশগুলো থেকে শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জানান দেয়।

১৩ মে ২০২৫ বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা ও বাংলাদেশের শ্রমিকদের অংশগ্রহণসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য গমন করেন এবং সেখানে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, আলোচনায় যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে, তা হচ্ছে নতুন করে শ্রমবাজার খোলা হলে বাংলাদেশ থেকে কী প্রক্রিয়ায় সেখানে লোক প্রেরণ করা হবে অর্থাৎ আগের মতো কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটই কাজ পাবে, নাকি বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিক প্রেরণের সুযোগ পাবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দ্বিতীয়ত যাঁরা গত বছর শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর যেতে পারেননি, তাঁদের মালয়েশিয়াতে যাওয়ার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এ ছাড়া এবারের আলোচনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশকে লেখা দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব আজমান মোহাম্মদ ইউসুফের ২৩ এপ্রিল তারিখের একটি চিঠির বিষয়বস্তু, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজের বরাতে প্রকাশ পেয়েছে। চিঠিতে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশকে মানব পাচারসংক্রান্ত বার্ষিক মার্কিন প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার রেটিং উন্নত করার জন্য দুই দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসনে অন্যায়ের ‘অপ্রমাণিত অভিযোগ’ পর্যালোচনা এবং প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখিত ইস্যুগুলো আমি এখন একটি করে আলোকপাত করব। প্রথমত, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের অধীন ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়ে প্রায় চার লক্ষাধিক শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে গমন করেন।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে কিছু সিলেক্টেড রিক্রুটিং এজেন্সি লোক প্রেরণের অনুমতি পায়। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি লোক প্রেরণের এই অনুমতি পেয়েছিল, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তারা বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এনলিস্টেড হয় বা শ্রমিক প্রেরণের অনুমতি পেয়েছিল। একজন অভিবাসী থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো চার্জ করা হয়। সে সময় অভিযোগ ওঠে যে শ্রমিকেরা হাজার হাজার ডলার পরিশোধ করেও মালয়েশিয়াতে প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি এবং ব্যাপকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর ও অনিশ্চিত জীবনের সম্মুখীন হয়েছেন।

এ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত কমিশনারের অফিস থেকেও তীব্র সমালোচনা করা হয়। এ ছাড়া কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের একটি নির্দিষ্ট ডেটলাইন বেঁধে দেওয়ায় প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি ভিসা, বিমানের টিকিট সবকিছু ঠিক থাকার পরও সে সময় মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি। ৩০ মে ২০২৪ তারিখ ছিল মালয়েশিয়া কলিং ভিসায় এন্ট্রির নির্দিষ্ট সময়সীমা। এর ফলে বেশির ভাগ শ্রমিক সম্পূর্ণ বা সিংহভাগ খরচ পরিশোধ করার পরও বিদেশে না যেতে পেরে ধারদেনায় দুর্বিষহ পরিস্থিতির স্বীকার হন। এগুলো সবই অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় লেক অব গভর্নেন্স বা সুশাসনের অভাবকেই ইঙ্গিত করে।

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন পদ্ধতি নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সিন্ডিকেট করা যায়, এমন সিস্টেম যেন আবারও ফিরিয়ে না নিয়ে আসা হয়। এর মাধ্যমে আবারও একই ধরনের পরিস্থিতি যথা উচ্চ অভিবাসন খরচ, ঠিকমতো কাজ না পাওয়া এবং ঋণগ্রস্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মাধ্যমে শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

রিক্রুটমেন্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসনের ফলে একটি বড় অভিযোগ এসেছে যে কোনো কারণ ছাড়াই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণের কারণে অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা শ্রমিকদের ওপর চার্জ করা হয়। এ টাকা সিন্ডিকেটের মূল হোতাগণ অন্যায্যভাবে বা অন্যায়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাই অবশ্যই সিন্ডিকেট সিস্টেম থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে কিংবা সব এজেন্সির জন্য লোক প্রেরণের অধিকার প্রদান করতে হবে, যা মালয়েশিয়ার সরকার অন্যান্য উৎস দেশগুলোর ক্ষেত্রেও দিয়ে থাকে।

দ্বিতীয়ত, মানব পাচার এবং অর্থ পাচারের অভিযোগকে অমূলক ঘোষণা দিয়ে বা সেগুলো বিচার না করে এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য উৎস দেশকে চাপ প্রদান করা মূলত ন্যায়বিচার পরিপন্থী। এটা সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করবে প্রতিকার না করে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার পরিস্থিতি (টিআইপি) রিপোর্টে মালয়েশিয়ার রেটিং শুধু বাংলাদেশ কর্তৃক অভিযোগ প্রত্যাহারের ওপর নির্ভর করে না। শ্রমিকদের অমানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রিপোর্ট এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বেশ কিছু কোম্পানি শ্রমিকদের কর্মব্যবস্থা করতে পারেনি, কাজ না পেয়ে অনেক শ্রমিকেরা অনাহার–অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন, যা সময়-সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্ট হচ্ছে।

শ্রম অভিবাসনের উচ্চ খরচ শ্রমিকদের ঋণের বোঝায় ফেলে এবং বিদেশে যাওয়ার পর তাঁদের নির্যাতনের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। মানবাধিকারকর্মীরা বহু বাংলাদেশি ও অন্যান্য অভিবাসী শ্রমিকদের নির্যাতন, এমনকি ঋণের জালে আটকে পড়ার ঘটনাও নথিভুক্ত করেছেন, যা প্রথম পয়েন্টে বর্ণিত রিক্রুটমেন্ট সিস্টেমের যে জটিলতা ও অসারতার দিকেই আবারও ইঙ্গিত করে। মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থকে সংরক্ষণ করে যে ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছে, তার আশু পরিবর্তন দরকার। কেননা, সিন্ডিকেটের কারণেই অভিবাসন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে বিগত ১০ বছরে।

এসব ঘটনা মালয়েশিয়ার মানব পাচারসংক্রান্ত রেকর্ডকে প্রভাবিত করেছে। এক দশকের অধিকাংশ সময় ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মালয়েশিয়া মার্কিন মানব পাচার শিকার সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মান পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত ১০ বছরে অন্তত ৮ বার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মালয়েশিয়া হয় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না, নয়তো নেওয়া পদক্ষেপগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে আলোচনা হচ্ছে, সেখানে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মানব পাচার ও অর্থ পাচারের যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিকার না করে উল্টো বাংলাদেশকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার চাপ দেওয়া মূলত আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়ার অবস্থানকে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং এটা সংঘটিত অন্যায়গুলোকে আরও প্রশ্রয় দেবে এবং পুনরায় শ্রমিকদের একই পরিণতির শিকার হতে হবে।

গত বছরে শ্রমিক প্রেরণের অব্যবস্থাপনার বা শ্রম অভিবাসনসংক্রান্ত অনিয়মগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং অভিবাসন সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে অভিযোগ করা হয়।

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ পুলিশ মালয়েশিয়ার সরকারকে দুজন অভিবাসন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করে, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিবাসী শ্রমিকদের পাচার, অর্থ পাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনও কতিপয় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মালিক ও সাবেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এমতাবস্থায় মালয়েশিয়ার চাপে বাংলাদেশকে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও অর্থ আত্মসাৎ–সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো যদি প্রত্যাহার করতেও হয়, তবুও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়াতে যে মামলাগুলো চলমান, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এটি অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতাও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। ভুক্তভোগী শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং তাঁদের যে অভিযোগগুলো রয়েছে, তা আমলে নিয়ে অবশ্যই এই দুষ্টুচক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তৃতীয়ত, ৩০ মে ২০২৪ মালয়েশিয়াতে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার কারণে যেসব শ্রমিক বৈধ কাগজপত্র বা ভিসা থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাঁদের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা। বিগত এক বছরে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা শ্রমিকদের বিষয়ে অনেক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরকালে যাঁরা কলিং ভিসা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারেননি, তাঁদের মালয়েশিয়াতে কাজের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আশ্বাস দেন এবং মালয়েশিয়া থেকে জানানো হয় এ রকম বৈধ কলিং ভিসা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারেননি, তার সংখ্যাটি আনুমানিক ১১,০০০ হাজার।

আনোয়ার ইব্রাহিম তাঁদের নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে একাধিকবার জানান দেন। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন যে প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া আট হাজারের মতো (গতবার না যেতে পারা) শ্রমিককে মালয়েশিয়াতে কাজের সংস্থান করে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক ও সংবাদমাধ্যমের সূত্রমতে, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

কিন্তু মালয়েশিয়ার সরকার সম্প্রতি যে সংখ্যাটি বলেছে, তা খুবই কম। সুতরাং প্রকৃত সংখ্যাটি আসলে কত, কী নিরূপণ জরুরি এবং অন্য যাঁরা একই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটাও আলোচনায় আসা উচিত। তাঁদেরকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ বা পুনর্বাসনের জন্য ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

অভিবাসী শ্রমিকেরা আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম মূল উৎস। তাঁরা সম্মানের সঙ্গে যাতে মাইগ্রেশন করতে পারেন এবং নিশ্চয়তার সঙ্গে তাঁরা গন্তব্য দেশে যাতে কাজ পেতে পারেন—এর নিশ্চয়তা বিধান করা বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং অগ্রাধিকারের বিষয়। তা না হলে আমাদের কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক আয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ড.

মোহাম্মদ রাশেদ আলম ভূঁইয়া পিএইচডি (অভিবাসন ও অনিশ্চয়তা/ ঝুঁকি), সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, রামরু

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অর থ প চ র শ রমব জ র প রক র য পর স থ ত র সরক র ব যবস থ পদক ষ প গ রস ত প র নন মন ত র র জন য র অন য অন য য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ