অন্তর্বর্তী সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। আজ দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য দেন। সংসদ না থাকায় এবারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।

বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে তা যথাসম্ভব সাশ্রয়ী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত; না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোও পর্যালোচনা করছি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমাতে এনার্জি অডিট করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছরের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট ২০২৫ ২৬

এছাড়াও পড়ুন:

২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তে ভারতের ইলেকট্রনিকস, জেনেরিক ওষুধ, গয়না ও অটো পার্টসসহ একাধিক খাত ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ এবং দেশটি সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বিষহ প্রকৃতির বাণিজ্য–প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার যে চেষ্টা ভারত করে আসছিল, এই ঘোষণা তার জন্য বড় ধাক্কা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরের পর থেকেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ ভূরাজনৈতিক কারণে তা এক রকম ভেস্তে গেল। প্রতিযোগীদের মধ্যে ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ ও জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি শুল্কহার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ২০২৪ সালে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৯২০ কোটি ডলারের।

তবে শুল্কের মূল প্রভাব নির্ভর করবে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ভারতের অবস্থানের সাপেক্ষে। কোন খাতে কত শুল্ক বসানো হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে নিচের খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—

রত্ন ও গয়নাশিল্প

ভারতীয় রত্ন ও গয়না রপ্তানিকারক পর্ষদ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক এই খাতের জন্য ‘গভীর উদ্বেগজনক’। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হবে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই খাত থেকে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি হয়। কিন্তু নতুন এই শুল্ক পুরো মূল্যশৃঙ্খলে—শ্রমিক থেকে বড় বড় উৎপাদক পর্যন্ত—ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।

ওষুধশিল্প

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে ভারত। এর বার্ষিক মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার। সান ফার্মা, ড. রেড্ডিজ, সিপলার মতো শীর্ষ ওষুধ কোম্পানিগুলোর আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে মার্কিন বাজার থেকে।

তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রতিটি ১০টি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে চারটিতেই ভারতীয় কোম্পানির ওষুধের পরামর্শ ছিল। সে বছর ভারতীয় ওষুধের কল্যাণে মার্কিন স্বাস্থ্য খাতের সাশ্রয় হয়েছিল ২২০ বিলিয়ন বা ২২ হাজার কোটি ডলার। ২০১২-২২ পর্যন্ত এই সাশ্রয়ের পরিমাণ ছিল মোট ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।

টেক্সটাইল ও পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান যেমন গ্যাপ, ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক, হোম ফ্যাব্রিক ও জুতা সরবরাহ করে ভারত। এই খাতের দাবি ছিল— ভিয়েতনাম বা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ওপর শুল্ক কম থাকুক।

কিন্তু কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মতে, এখন এই খাতকে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে হবে। ভারতের উৎপাদকেরা শুল্কে কোনো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবেন না। ভার্ডমান টেক্সটাইলস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মার্কিন বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে কার্যাদেশ কমছে। ওয়েলস্পান, ইন্ডো কাউন্ট, অরবিন্দ ফ্যাশনসের মতো কোম্পানিগুলোর অবস্থাও দুর্বল হবে।

ইলেকট্রনিকস

অ্যাপল কিছু আইফোন ভারতে তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে; এটা মূলত চীনের শুল্ক এড়ানোর কৌশল। কিন্তু এখন ভারতের ওপর যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকলে, তবে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষকদের মতে, ভারত থেকে আইফোন আমদানিতে যদি ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে অ্যাপলকে তার পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

পরিশোধন ও জ্বালানি খাত

রিলায়েন্স, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে ভারত মোট অপরিশোধিত তেলের ৩৭ শতাংশের বেশি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে তারা এই তেল কিনছে। ফলে পরিশোধনাগারগুলো মুনাফা ধরে রাখতে পারছে। কিন্তু রাশিয়ার তেল আর পাওয়া না গেলে বা তা নিষিদ্ধ হলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। তাতে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলোর মুনাফা কমবে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চলছে। আগামী অক্টোবরে তাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার আগ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন