কোরবানির জন্য পশু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কারণ, এটি শরিয়াহর নির্দিষ্ট শর্ত ও গুণাবলির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কোরবানির জন্য কোন পশু সবচেয়ে উত্তম? উট, গরু, ভেড়া, নাকি ছাগল? ইসলামি শরিয়াহ এবং হাদিসের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

কোরবানির জন্য উত্তম পশু

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, কোরবানির জন্য পশুগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে উত্তমতা রয়েছে। প্রখ্যাত আলেম সালেহ আল মুনাজ্জিদ পরিচালিত ইসলাম কিউ অ্যান্ড এ-এর ফতোয়া কেন্দ্রের মতে, কোরবানির জন্য পশুগুলোর ক্রম নিম্নরূপ:

পশুর আকার, মাংসের পরিমাণ এবং এর মাধ্যমে বেশি মানুষের উপকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, উট বা গরুর মাধ্যমে বেশি মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা সম্ভব।

১.

উট: একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য সবচেয়ে উত্তম পশু হলো উট।

২. গরু বা ষাঁড়: একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ গরু বা ষাঁড় দ্বিতীয় স্থানে।

৩. ভেড়া: এরপর রয়েছে ভেড়া।

৪. ছাগল: ভেড়ার পর ছাগল।

৫. উটের সাত ভাগের এক ভাগ: একাধিক ব্যক্তি মিলে উটের অংশে অংশগ্রহণ করলে।

৬. গরুর সাত ভাগের এক ভাগ: একাধিক ব্যক্তি মিলে গরুর অংশে অংশগ্রহণ করলে।

এই ক্রমানুসারে উত্তমতা নির্ধারণের পেছনে পশুর আকার, মাংসের পরিমাণ এবং এর মাধ্যমে বেশি মানুষের উপকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, উট বা গরুর মাধ্যমে বেশি মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা সম্ভব, যা দরিদ্রদের জন্য বেশি উপকারী।

আরও পড়ুনকোরবানি যাঁর জন্য ওয়াজিব, যেভাবে করতে হবে১৭ জুলাই ২০২০

উত্তম পশুর বৈশিষ্ট্য

শুধু পশুর ধরনই নয়, কোরবানির পশুর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসের আলোকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

মোটা ও মাংসল: পশুটি মোটা, স্বাস্থ্যবান এবং মাংসে পরিপূর্ণ হওয়া উচিত। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) দুটি শিংওয়ালা, সাদা-কালো মিশ্রিত ভেড়া কোরবানি করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৫৭)

শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ: পশুটি শারীরিকভাবে সুস্থ ও অক্ষত হতে হবে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একটি সম্পূর্ণ (খাসি না করা), শিংওয়ালা, কালো মুখ, চোখের চারপাশে কালো বৃত্ত এবং কালো পা বিশিষ্ট পুরুষ ভেড়া কোরবানি করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১১,৩১৫)

যদি পশু জন্মগতভাবে এই ত্রুটি নিয়ে জন্মায়, তবে তা কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪

মোটা বা খাসি করা: আবু রাফি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কোরবানির জন্য দুটি মোটা ভেড়া কিনতেন, যার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে খাসি করা ভেড়াও ছিল। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২৩,৪৫৩)

খাসি করা পশুর মাংস সাধারণত সুস্বাদু হয়, তবে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ পশু বেশি মর্যাদাপূর্ণ।

মাকরুহ বা অপছন্দনীয় পশু

কিছু পশু কোরবানির জন্য মাকরুহ বা অপছন্দনীয়; কারণ, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে। বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু কোরবানির জন্য এড়ানো উচিত: স্পষ্ট খোঁড়া পশু, স্পষ্ট এক চোখ বিশিষ্ট পশু, স্পষ্ট রোগাক্রান্ত পশু এবং এমন কৃশ পশু যা কেউ পছন্দ করবে না।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১,০০৪)

এ ছাড়া নিম্নলিখিত ত্রুটিযুক্ত পশুগুলো মাকরুহ:

১. যার শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি কাটা বা যার শিং পুরোপুরি উপড়ে ফেলা হয়েছে।

২. যার কান সামনে বা পেছনে ক্রস করে কাটা বা লম্বালম্বি কাটা বা ছিদ্র করা, কিংবা এতটাই কাটা যে কানের নালি দৃশ্যমান।

৩. যে পশু এতটাই কৃশ যে তার হাড়ে মজ্জা নেই।

৪. যে পুরোপুরি অন্ধ, যদিও চোখ উপস্থিত।

৫. যে পশু পালের সঙ্গে না চলে, যতক্ষণ না তাকে তাড়ানো হয়।

রাসুল (সা.) একটি সম্পূর্ণ (খাসি না করা), শিংওয়ালা, কালো মুখ, চোখের চারপাশে কালো বৃত্ত এবং কালো পা বিশিষ্ট পুরুষ ভেড়া কোরবানি করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১১,৩১৫)

৬. যার লেজের অর্ধেক বা তার বেশি কাটা।

৭. যার জননাঙ্গ কাটা।

৮. যার দাঁত (সামনের বা পেছনের) কিছু হারিয়েছে (জন্মগতভাবে না হলে)।

৯. যার স্তনবৃন্ত কাটা (জন্মগতভাবে না হলে) বা যার দুধ বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ত্রুটিগুলো পশুর শারীরিক অখণ্ডতা বা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা কোরবানির মানকে হ্রাস করে। তবে যদি পশু জন্মগতভাবে এই ত্রুটি নিয়ে জন্মায়, তবে তা কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।

কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শরিয়াহর নির্দেশনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে এটি কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয় বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রকাশ। উত্তম পশু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য বেশি মাংস বিতরণ করতে পারি।

সূত্র: ইসলাম কিউএ ডটইনফো

আরও পড়ুনঈদুল আজহা ও হজ যখন প্রতিবাদের ক্ষেত্র১২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৮ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ

পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত আট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন, ২০২৫) ও অর্ধবার্ষিক (জানুয়ারি-জুন, ২০২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, এনআরবি ব্যাংক পিএলসি, এসবিএসি ব্যাংক পিএলসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি

৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ

এর আগে বুধবার (৩০ জুলাই) অনুষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (৯.২৪) টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৪৪ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১৪.০১) টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৪ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২.৩৯ টাকা।

এনআরবি ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.২৯) টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.১৩ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (১.২৪) টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.১৫ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১১.৪৫ টাকা।

এসবিএসি ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.০৫ টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.২৩ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.১৪ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৪৬ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৩.৭২ টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৩২ টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৩৮ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১.১৮ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.১৬ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৭.২৬ টাকা।

এক্সিম ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (০.০৮)। টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৯০ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.১৩ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.১৪ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২১.৮৪ টাকা।

পূবালী ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩.০২ টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২.১৯ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৪.৪৪ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৩.৩২ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৪৪.১৭ টাকা।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১.৪৩ টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.৫০ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.৪৭ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২.৫৯ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২২.৩৩ টাকা।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৭৮ টাকা আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৬ টাকা। দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৮৩ টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৯৮ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২১.৪৫ টাকা।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ