এসএসসি ২০২৬ সালের পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসিত সিলেবাস
Published: 3rd, June 2025 GMT
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা এখন দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছ। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে আগামী ২০২৬ সালে। এখন থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনা করলে পরীক্ষার আগে তোমরা কোনো ধরনের চাপে পড়বে না। ২০২৬ সালের সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রথম শর্ত হলো সিলেবাস সংগ্রহ করা। তারপর সেই সিলেবাস অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া। সে জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত পুনর্বিন্যাসিত সিলেবাসটি দেওয়া হলো। নিচে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাসে বিষয়, বিষয়ের পূর্ণ নম্বর, পরীক্ষায় নির্ধারিত অধ্যায় ইত্যাদি রয়েছে, তা দেওয়া হলো।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬–এর পুনর্বিন্যাসিত সিলেবাস দেওয়া হলো—
১.
বাংলা প্রথম পত্র—[বিষয় কোড: ১০১, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
গদ্য:
১. প্রত্যুপকার—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,
২. সুভা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
৩. বইপড়া—প্রমথ চৌধুরী,
৪. আম আঁটির ভেঁপু—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,
৫. মানুষ মুহাম্মদ (সা.)—মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী,
৬. নিমগাছ—বনফুল,
৭. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব—মোতাহের হোসেন চৌধুরী,
৮. প্রবাস বন্ধু—সৈয়দ মুজতবা আলী,
৯. একুশের গল্প—জহির রায়হান।
কবিতা:
১. কপোতাক্ষ নদ—মাইকেল মধুসূদন দত্ত,
২. জীবন বিনিময়—গোলাম মোস্তফা,
৩. উমর ফারুখ—কাজী নজরুল ইসলাম,
৪. সেই দিন এই মাঠ—জীবনানন্দ দাশ,
৫. বৃষ্টি—ফররুখ আহমদ,
৬. আমি কোনো আগন্তুক নই—আহসান হাবীব,
৭. তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা—শামসুর রাহমান,
৮. বোশেখ—আল মাহমুদ।
উপন্যাস:
১৯৭১—হুমায়ূন আহমেদ।
২.
বাংলা দ্বিতীয় পত্র—[বিষয় কোড: ১০২, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
ব্যাকরণ অংশ:
পরিচ্ছেদ–৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩।
নির্মিত অংশ:
৪৪. পরিচ্ছেদ–৪৪ (অনুচ্ছেদ ও অনুবাদ),
৪৫. (সারমর্ম ও সারাংশ লিখন),
৪৬. (ভাব সম্প্রসারণ),
৪৭. (চিঠিপত্র),
৪৮. (সংবাদ প্রতিবেদন),
৪৯. (প্রবন্ধ)।
৩.
ইংরেজি প্রথম পত্র—[বিষয় কোড: ১০৭, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
Unit-1: Lesson-1, 3.
Unit-2: Lesson-1, 2, 3, 4, 5.
Unit-3: Lesson-1, 2, 3, 4, 5.
Unit-6: Lesson-1, 2, 3, 4, 5.
Unit-10: Lesson-1, 2, 3, 4.
Unit-11: Lesson-1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11.
Unit-13: Lesson-1, 2, 3.
Unseen Passage—
1. Information transfer.
2. Summarizing.
3. Matching.
4. Re-arrange.
Writing Part—
1. Completing a story.
2. Describing graphs and charts.
3. Writing dialogue.
1. Writing letters/e-mail (Formal).
৪.
ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র— [বিষয় কোড: ১০৮, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
Grammar/Writing Items—
1. Adjective:
Contents: Articles, Determiners, Degree of Comparisons, Quantifiers.
2.Verbs and Tenses:
Contents: Regular and Irregular Verbs, Be Verbs, Finite Verbs, Transitive and Intransitive Verbs, Infinitive, Gerunds, Participle, Modals.
3. Adverb and Adverbials.
4. Prepositions.
5. Sentences:
Contents: Types of Sentences (Affirmative, Negative, Interrogative, Exclamatory, Simple, Complex, Compound), WH Questions, Tag Questions, Sentence Connectors, Punctuation and Capitalization.
Writing Part—
1. Writing Paragraph,
2. Writing CV with cover letter,
3. Writing short Composition,
4. Practice Class.
৫.
গণিত—[বিষয় কোড: ১০৯, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-২, ৩, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৬, ১৭।
৬.
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি—[বিষয় কোড: ১৫৪, পূর্ণ নম্বর: ৫০]
অধ্যায়–২, ৪, ৫, ৬।
৭.
পদার্থবিজ্ঞান—[বিষয় কোড: ১৩৬, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৩, ৪, ৭, ৮, ১০।
৮.
রসায়ন—[বিষয় কোড: ১৩৭, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১১।
৯.
জীববিজ্ঞান—[বিষয় কোড: ১৩৮, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৩, ৪, ১১, (আংশিক), ১২, ১৩।
১০.
উচ্চতর গণিত—[বিষয় কোড: ১২৬, পূর্ণ নম্বর : ১০০]
অধ্যায়-২, ৭, ৮ (আংশিক), ৯, ১০, ১১, ১২, ১৪।
১১.
বাংলাদেশের ও বিশ্বপরিচয়—[বিষয় কোড: ১৫০, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-২, ৩, ৬, ১০, ১১, ১৩।
১২.
বিজ্ঞান—[বিষয় কোড: ১২৭, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৩, ৭, ১০, ১১।
১৩.
অর্থনীতি—[বিষয় কোড: ১৪১, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-২, ৩, ৪, ৬, ৭, ১০।
১৪.
পৌরনীতি ও নাগরিকতা—[বিষয় কোড: ১৪০, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮।
১৫.
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা—[বিষয় কোড: ১৫৩, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-২, ৪, ৬, ৮, ৯, ১৩।
১৬.
হিসাববিজ্ঞান—[বিষয় কোড: ১৪৬, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ (আংশিক)।
১৭.
ব্যবসায় উদ্যোগ—[বিষয় কোড: ১৪৩, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৪, ৬, ৮, ৯, ১১।
১৮.
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং—[বিষয় কোড: ১৫২, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ৪, ৫, ৬, ৯, ১০, ১১।
১৯.
ভূগোল ও পরিবেশ—[বিষয় কোড: ১১০, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৩, ৪, ৬, ১০, ১৪।
২০.
কৃষিশিক্ষা—[বিষয় কোড: ১৩৪, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ২, ৪ (আংশিক), ৫ (আংশিক)।
২১.
গার্হস্থ্যবিজ্ঞান—[বিষয় কোড: ১৫১, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
ক বিভাগ: অধ্যায়-১: পাঠ-১: ১, ২, ৩, ৪, ৫।
অধ্যায়-৫: পাঠ- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬।
খ বিভাগ: অধ্যায়-৬: পাঠ-১: ১, ২, ৩, ৪, ৫।
অধ্যায়-৭: পাঠ-১, ২, ৩, ৪।
গ বিভাগ: অধ্যায়-১১: পাঠ-১: ১, ২, ৩।
অধ্যায়-১৩: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬।
ঘ বিভাগ: অধ্যায়-১৫: পাঠ-১-৩, ৪-৫।
অধ্যায়-১৬: পাঠ-১, ২-৩।
অধ্যায়-১৭: পাঠ-১-৩, ৪-৫।
২২.
ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা— [বিষয় কোড: ১১১, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১: পাঠ-২, ৬, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৪।
অধ্যায়-২: পাঠ-১, ৫, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪।
অধ্যায়-৩: পাঠ-২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ১০, ১২, ১৩।
অধ্যায়-৪: পাঠ-২, ৩, ১০, ১৫, ১৮, ২২।
অধ্যায়-৫: পাঠ-১, ৪, ৫, ১০, ১১।
২৩.
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা—[বিষয় কোড: ১১২, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১: প্রথম পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪।
অধ্যায়-৪: পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮।
অধ্যায়-৬: পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯।
অধ্যায়-৮: পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ও ৯।
অধ্যায়-৯: পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯।
অধ্যায়-১০: পরিচ্ছেদ-১, ২, ৩, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ।
২৪.
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা—[বিষয় কোড: ১১৩, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-৩: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬।
অধ্যায়-৪: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭।
অধ্যায়-৭: পাঠ-১, ২, ৩।
অধ্যায়-৮: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬।
অধ্যায়-৯: পাঠ-১, ২, ৩, ৪।
অধ্যায়-১০: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫।
২৫.
খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা—[বিষয় কোড: ১১৪, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ৩, ৬, ৭, ৯, ১২, ১৫।
২৬.
চারু ও কারুকলা—[বিষয় কোড: ১৪৮, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১, ৪, ৫, ৬, ৭।
২৭.
ক্যারিয়ার শিক্ষা—[বিষয় কোড: ১৫৬, পূর্ণ নম্বর: ৫০]
অধ্যায়-৪।
২৮.
শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা—[বিষয় কোড: ১৪৭, পূর্ণ নম্বর: ৫০]
অধ্যায়-১, ৬, ৮, ৯, ১০।
২৯.
সঙ্গীত—[বিষয় কোড: ১৪৯, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১ পরিচ্ছেদ-১, ২।
অধ্যায়-২ পরিচ্ছেদ-১, ২, ৪ ।
অধ্যায়-৩, ৪।
৩০.
আরবি—[বিষয় কোড: ১২১, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১: পাঠ-১, ২, ৯, ১৯, ২২।
অধ্যায়-২: পাঠ-১, ৪।
অধ্যায়-৩: আস-সরফ: পাঠ-১, ৩, ৪, ৫, ৬। আস-নাহ: পাঠ-১, ২, ৩, ৬।
৩১.
সংস্কৃত—[বিষয় কোড: ১২৩, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
প্রথম ভাগ—গদ্যাংশ: পাঠ-১, ২, ১০, ১৪।
দ্বিতীয় ভাগ—পদ্যাংশ: পাঠ-২, ৪, ৫।
তৃতীয় ভাগ—ব্যাকরণ: পাঠ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১১, ১২, ১৫।
চতুর্থ ভাগ—অনুবাদ।
৩২.
পালি—[বিষয় কোড: ১২৪, পূর্ণ নম্বর: ১০০]
অধ্যায়-১ (আংশিক), ২ (আংশিক), ৩ (আংশিক), ৪ (আংশিক), ৫ (আংশিক), ৬ (আংশিক), ৮, ৯ (আংশিক), ১০ (আংশিক), ১১, ১৫।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর চ ছ দ ১ ২০২৬ স ল পর ক ষ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।