নির্বাসনে থেকেও কীভাবে ইরানে বিপ্লব সফল করলেন রুহুল্লাহ খোমেনি
Published: 3rd, June 2025 GMT
সৈয়দ রুহুল্লাহ মুসাবি খোমেনি (১৯০২–১৯৮৯) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতা। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবন ও চিন্তাধারা শুধু ইরান নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
খোমেনি ১৯০২ সালে ইরানের খোমেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন একটি ধর্মপরায়ণ শিয়া পরিবারে। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর তিনি কোম শহরে গিয়ে ইসলামি শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ফিকহ (ইসলামি আইন), দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার গভীর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে তিনি একজন মুজতাহিদ বা স্বাধীন ধর্মীয় ব্যাখ্যাদানের যোগ্য আলেম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৬০-এর দশকে সৈয়দ রুহুল্লাহ ইরানের রাজতন্ত্র, বিশেষত মোহাম্মদ রেজা শাহ পহলভির পশ্চিমঘেঁষা ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ১৯৬৩ সালের ৫ জুন তাঁর নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ, যা ‘১৫ খরদাদ বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। সরকারের বিরুদ্ধে এই অবস্থানের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার ও পরে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
১৯৬৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খোমেনি তুরস্ক, ইরাক ও পরে ফ্রান্সে নির্বাসনে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ‘বিলায়াত-এ-ফকীহ’ (ধার্মিক শাসকের অভিভাবকত্ব) মতবাদ প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয় একজন যোগ্য আলেম রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার রাখেন। এ ধারণা পরে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
১৯৭৯ সালে বিপ্লব চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং শাহ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। খোমেনি স্বদেশে ফিরে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন এবং গণভোটের মাধ্যমে ইরানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা ধারণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ইরান ইসলামি আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
খোমেনির প্রভাব বহুস্তরীয়। একদিকে তিনি একজন ধর্মীয় সংস্কারক, যিনি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে একত্র করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে তিনি ছিলেন উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্কিন ও ইসরায়েলি প্রভাববিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর ভাষণ ও লেখাগুলো বিশ্বের বহু ইসলামি আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
খোমেনি ১৯৮৯ সালে মারা যান। তাঁর জানাজায় অংশ নেয় প্রায় এক কোটি মানুষ—এটা ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম জানাজাগুলোর একটি। তাঁর জীবন ও মৃত্যু ঘিরে ইরানে গড়ে উঠেছে এক বিশাল প্রতীকের রাজনীতি। সেই রাজনীতি আজও ইরানের ভবিষ্যৎকে নির্ধারিত করে। তিনি একদিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধের প্রতীক, অন্যদিকে এক স্বপ্নভঙ্গের কেন্দ্র।
আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির পোস্টার নিয়ে ইরানে শাহবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স