প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাথর ভাঙার কাজ করতে হয় নাকুগাঁও স্থলবন্দরের শ্রমিকদের। দৈনিক মজুরি পান ৩০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালানোর পর সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না। তার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে অনেকের সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। এর মধ্যে ঈদ এলেই বাড়তি চাপ বোধ করেন শ্রমিকরা। এ অবস্থায় বেতন বৃদ্ধি ও প্রতি ঈদে বোনাসের দাবি জানিয়েছেন তারা।

নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাথর ভাঙার শ্রমিক রয়েছে চার হাজারের অধিক। তাদেরই একজন মোহাম্মদ আলী। জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই তাঁর। বন্দরের পাশে সরকারি একটি আশ্রয়ণের ঘরে বসবাস করেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। ছেলে এইচএসসি পাস করে বেকার। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

ছোট মেয়ে পড়ালেখা করছে। মোহাম্মদ আলী প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মজুরি পান ৩০০ টাকা। এই সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। এর মধ্যে ঈদ মানেই তাঁর কাছে বাড়তি চাপ। কারণ যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পর সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। সে ক্ষেত্রে ঈদ উৎসবে সন্তানদের পোশাক, বাজার-সদাই করাটা রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কেবল মোহাম্মদ আলী নন, একই অবস্থা অন্য শ্রমিকদেরও।

শ্রমিকরা জানান, মজুরির ৩০০ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে তাদের হিমশিম অবস্থা। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারেন না। পরিবারের লোকজনের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। কোনো দিন কাজ বন্ধ থাকলে থাকতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে। সংসার চালাতে ধারদেনাও করতে হয়। পাথর ভাঙার কাজে মজুরি ছাড়া বাড়তি সুযোগ সুবিধা পান না। এ কাজে রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি। শ্রমিকদের দাবি, তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। এ অঞ্চলে তেমন কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা কম মজুরিতেই পাথর ভাঙার কাজ করেন।

বন্দরের পাথর ভাঙার শ্রমিক রাব্বানী, নাজমুল ও বেলায়েত হোসেনের ভাষ্য, পাথর ভাঙার কাজে মজুরি ছাড়া বাড়তি কোনো সুযোগসুবিধা পান না। আসন্ন ঈদে এখনও বোনাস পাননি। তাদের দাবি, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন।

কথা হয় নারীশ্রমিক বণিতা নেংমিনজার সঙ্গে। তিনি জানান, পাথর ভাঙার সময় পাথরের কণা, ধুলাবালু চোখে-মুখে লাগে। সর্দি-কাশি সারাবছরই লেগে থাকে। মেশিনের শব্দে মাথা ঝিমঝিম করে। পাথর ভাঙার যন্ত্রে কাজ করলে শরীরের ক্ষতি হয় জানার পর কাজ করছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বণিতা বলেন, ‘পেটের দায়ে আমরা পাথরের কাজ করি। পাথর ভাঙার কাজটা খুব কষ্টের।’

পাথর ভাঙা শ্রমিক মোহাম্মদ আলীর ভাষ্য, প্রায় ৫ বছর আগে একদিন পাথর ভাঙার সময় একটি বড় কণা তাঁর চোখে প্রবেশ করে। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ কিনে ব্যথা কমিয়ে আবারও কাজে নেমে পড়েন। কয়দিন যেতে না যেতেই চোখে খুব জ্বালাপোড়া শুরু হয়। সে সময় কিছুটা চোখে ঝাপসা দেখলেও পরে চিকিৎসার অভাবে একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায়ই কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানোই মুশকিল। ঈদে কোরবানি দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না।’

পাথর ভাঙার আরেক শ্রমিক আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে টাকার জন্য কাজ করি, কিন্তু ন্যায্য টাকা পাই না; যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে জীবন চালাই। ঈদ এলেই বাড়তি চাপ তৈরি হয়।’ তাঁর ভাষ্য, সচ্ছল পরিবারগুলোতে যখন ঈদের আনন্দ লেগে থাকে, তখন তাদের মতো পাথর ভাঙা শ্রমিকদের পরিবারে থাকে চাপা কান্না। কোরবানির ঈদে তাকিয়ে থাকতে হয় অন্যের মুখের দিকে।

বন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ এনায়েত হোসেন বলেন, ঈদুল ফিতরে বন্দরের কার্ডধারী শ্রমিকদের ঈদ বোনাস হিসেবে নগদ অর্থ, শাড়ি, লুঙ্গি ও সেমাই-চিনি দেওয়া হয়। আর দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকদের শুধু সেমাই-চিনি দেওয়া হয়। ঈদুল আজহার সময় শ্রমিকদের কোনো বোনাস দেওয়া হয় না। তাদের দুই ঈদেই সমানভাবে বোনাস দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বন্দরের শ্রমিকনেতা সুজন মিয়া জানান, পাথর ভাঙা মেশিনের উচ্চ শব্দ আর ধুলাবালুর মধ্যে কাজ করতে হয় তাদের। রাতে মাথাব্যথা ও নিদ্রাহীনতায় ভোগেন অধিকাংশ শ্রমিক। অর্থের অভাবে অনেকে চিকিৎসাও করাতে চান না। বর্তমান বাজারে সামান্য মজুরিতে ঠিকমতো সংসার চলছে না শ্রমিকদের। এ কারণে ঈদ উৎসবে আনন্দের বদলে অনেক পরিবারে চাপা কান্না বিরাজ করে। 

বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের ভাষ্য, কোনো শ্রমিক কাজ করার সময় দুর্ঘটনার শিকার বা অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের বেতন-বোনাসের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক জ কর পর ব র অবস থ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে। 

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী

প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক  আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।  

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন। 

ঢাকা/কাওছার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ