এবারের আইপিএলে শুধু খেলোয়াড়দের বেতন বাবদই ১০০ কোটি রুপির বেশি খরচ করেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। গতকাল রাতে দলটি ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে প্রাইজমানি হিসেবে পেয়েছে ২০ কোটি রুপি। খেলোয়াড়দের বেতনে প্রায় একই খরচ করা পাঞ্জাব কিংস রানার্সআপ হিসেবে পেয়েছে ১৩ কোটি রুপি।

আর ফাইনালে কে জিতবে—এই বাজি ধরেই ১১ কোটি রুপির বেশি পেয়ে গেছেন ড্রেক। কানাডার এই র‍্যাপার ও সংগীতশিল্পী আইপিএল ফাইনালে বেঙ্গালুরুর পক্ষে বাজি ধরেছিলেন।

বিভিন্ন আলোচিত ঘটনায় ড্রেকের বাজি ধরা নতুন কিছু নয়। মঙ্গলবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএল ফাইনাল শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ড্রেক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানান, কারা চ্যাম্পিয়ন হবে, তা নিয়ে বাজি ধরেছেন তিনি।

বেঙ্গালুরুর দলীয় স্লোগান ‘এ সালা কাপ নামদে (এই বছর কাপ আমাদের) শিরোনামের পোস্টে দেখা যায়, ক্রিপ্টো-বেটিং প্ল্যাটফর্ম স্টেক-এ বেঙ্গালুরুর পক্ষে সাড়ে সাত লাখ মার্কিন ডলার বাজি ধরেছেন ড্রেক, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৬ কোটি ৪১ রুপির মতো। বাজিতে বেঙ্গালুরুর পক্ষে অড ছিল ১.

৭৫।

ফাইনালে বেঙ্গালুরু ৬ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ড্রেক বাজিতে জিতেছেন ১৩ লাখ মার্কিন ডলার বা ১১ কোটি রুপির বেশি।

আইপিএলের ট্রফি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উল্লাস বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়দের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প বনাম মাস্ক: এক্স–যুদ্ধের পর বিচ্ছেদ

এক সপ্তাহ আগেও তাঁরা দুজন ছিলেন ‘বেস্ট বাডিস’ অর্থাৎ ‘জানি দোস্ত’। মাস্ক ট্রাম্পকে নির্বাচিত করতে নিজের গাঁটের প্রায় ২০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন। প্রতিদানে কৃতজ্ঞ ট্রাম্প মাস্কের জন্য হোয়াইট হাউসের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুই ঘণ্টার এক্স–যুদ্ধের পর সেই প্রেমকাহিনি পূর্ণ বিচ্ছেদে গড়িয়েছে।

ট্রাম্প ও মাস্কের এই সম্পর্কের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রোম্যান্স’ (ব্রো, ব্রাদারের সংক্ষিপ্ত রূপ + রোম্যান্স)। গোড়া থেকেই এই সম্পর্ক ছিল খোলামেলাভাবে ‘ট্রানজ্যাকশনাল’। মাস্ক টাকা ঢালবেন ট্রাম্পকে নির্বাচিত করতে, নির্বাচিত হলে মাস্ক ও তাঁর কোম্পানির জন্য বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করবেন ট্রাম্প।

হয়েছিল তাই। ওয়াশিংটন পোস্ট হিসাবে করে বলেছে, কম করে হলেও ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে আদায় করেছেন। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। প্রেসিডেন্ট হয়েই ট্রাম্প মাস্ককে পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) পুরো দায়িত্ব তুলে দেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসী মাস্ক, হাতে একখানা করাতকল নিয়ে ঘোষণা করলেন, তিনি কম করে হলেও দুই ট্রিলিয়ন ডলারের খরচ কমিয়ে আনবেন।

বাস্তবে ঘটল উল্টো। আগপাছ বিবেচনা না করে তিনি ঢালাও অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিলেন, প্রায় আড়াই লাখ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর চাকরি খেয়ে বসলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থা করলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। দেখা গেল, এমন সব লোকজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে, যাঁরা না থাকায় বিমানবন্দরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে আবহাওয়া দপ্তরে জরুরি সেবা দেওয়ার লোক পাওয়া গেল না। কর্মী ছাঁটাই হওয়ায় সোশ্যাল সিকিউরিটির চেক পাঠানো বা রাজস্ব আদায়ের কাজে গাফিলতি বাড়ল। এমনকি সাবেক সেনাসদস্যদের সেবাকাজেও বিঘ্ন দেখা গেল। এ নিয়ে চারদিক থেকে সমালোচনা উঠল, আদালত থেকেও ঢালাও ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে রায় এল। ফলে ট্রাম্পকে বাধ্য হয়ে ঘোষিত অনেক কাটছাঁট আবার পুনর্বহাল করতে হলো।

মাস্ক দাবি করেছিলেন তিনি দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অপচয় ঠেকাবেন। তিন মাস পর হিসাব নিয়ে দেখা গেল, তিনি বড়জোর দেড় শ বিলিয়ন ডলার কমাতে পেরেছেন।

মাস্ক ও ডিওআইজি যে বিষফোড়া হয়ে উঠেছে, এ কথা ট্রাম্প বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন। মিডিয়াতে মাস্কের চৌপ্রহর উপস্থিতি নিয়েও তাঁর বিরক্তি বেড়ে চলছিল। তিনি মাস্ককে যতই ভালোবাসুন না কেন, মিডিয়ায় তাঁর জায়গাটা অন্য কেউ নেবে, সেটি তিনি সহ্য করবেন না। ফলে উভয়ের সম্মতিতেই মাস্ককে ডিওআইজি থেকে বিদায় নিতে হলো। ৩০ মে ছিল মাস্কের হোয়াইট হাউসে চাকরির শেষ দিন। বিদায় দিতে গিয়ে ট্রাম্প আবেগভরা গলায় জানালেন, মাস্ক নিজের ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছেন, কিন্তু হোয়াইট হাউস তিনি ছাড়ছেন না। অর্থাৎ বাইরে থেকেও মাস্ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে কথাযুদ্ধের পর সে সম্ভাবনা উবে গেছে। তাঁদের মতভেদের প্রধান কারণ, যে নতুন বাজেট প্রস্তাব কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত হয়েছে, মাস্ক তাকে ‘জঘন্য’ বলে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি ডিওআইজিতে এসেছিলেন ব্যয় কমাতে, অথচ নতুন বাজেট প্রস্তাব গৃহীত হলে আগামী ১০ বছরে মার্কিন ঋণের বোঝা অতিরিক্ত তিন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আপাতভাবে সেটাই মাস্কের আপত্তি। তিনি দাবি করলেন, এই বাজেট প্রস্তাব বাতিল করতে হবে।

ট্রাম্প ও মাস্কের বাগ্‌যুদ্ধ শুরুতে এই বাজেট প্রশ্নেই সীমিত ছিল। ট্রাম্প নিজে এই প্রস্তাবকে বলেছেন তাঁর ‘বিগ বিউটিফুল বাজেট’, ফলে এটি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যক্তিগত লবিংয়ের ফলেই রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা নিজেদের মতভেদ ভুলে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছেন। বর্তমানে তা সিনেটের বিবেচনায় রয়েছে, কোন কোন সিনেটর কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তিও তুলেছেন। ঠিক সেই সময় বাজেটের বিরুদ্ধে মাস্কের এই ‘যুদ্ধ’ ট্রাম্পকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।

নিজের হতাশা ব্যক্ত করে ট্রাম্প জানান, এই বাজেট প্রস্তাবে কী আছে, সে কথা মাস্ক খুব ভালো করেই জানেন। আপত্তি থাকলে তাঁর আগে বলা উচিত ছিল। সে কথা বলামাত্রই মাস্ক তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে জানালেন, সব বাজে কথা, এই বাজেট প্রস্তাব আমি পড়ারই সুযোগ পাইনি। গভীর রাতে চুপি চুপি প্রস্তাবটি পাস হয়েছে।

এতে ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। মাস্ক তাঁর প্রিয় পুত্রের মতো, কিন্তু সে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেখে এরপর তিনি লাগাম টানতে বাধ্য হলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, মাস্ক খেপেছে, কারণ এই বাজেট প্রস্তাব থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি হিসাবে মাস্কের টেসলার জন্য এত দিন যে কর রেয়াতি দেওয়া হতো, তা বাদ গেছে। মাস্কের প্রতি নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি এমন কথাও বলেন, মাস্কের সঙ্গে তাঁর চমৎকার বন্ধুত্ব ছিল, সেই বন্ধুত্ব আর থাকবে কি না, তাতে সন্দেহ আছে।

ছেড়ে দেওয়ার লোক মাস্ক নন। এবার তিনি বললেন, ‘আমার জন্যই ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। তর্ক আরও উসকে দিয়ে তিনি ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি তুলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। এরপর তাঁদের সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেকটি ছোড়েন মাস্ক। তিনি মনে করিয়ে দেন, একসময় ট্রাম্প ও যৌন কেলেঙ্কারির জন্য অভিযুক্ত জেফ্রি এপস্টেইন গলায়-গলায় বন্ধু ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের বিচার বিভাগ সে কথা কাউকে জানতে দিতে চায় না। তাঁদের দুজনের একটি পুরোনো ছবিও তিনি এক্সে জুড়ে দেন।

যাঁরা ভেবেছিলেন ট্রাম্প ও তাঁর বিপথগামী এই বন্ধুর সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানো সম্ভব, তাঁরাই বলছেন এপস্টেইনকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলার পর সে আশা কার্যত শূন্য।

এই অতি প্রকাশ্য ‘বিচ্ছেদ’ ট্রাম্পের জন্য বিব্রতকর তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু তাঁর জন্য গভীর কোনো দুর্যোগ বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্প একজন নেতা, তাঁর অনুগত সমর্থকেরা মাস্কের কথা শুনে তাঁকে ছেড়ে যাবেন না। ট্রাম্প আর কোনো নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামবেন না, ফলে মাস্কের অর্থের কোনো প্রয়োজনও তাঁর নেই। রিপাবলিকান পার্টির নেতারা, যাঁরা এত দিন মাস্ককে ‘বিস্ময় বালক’ ভেবে স্তুতি করে এসেছেন, তাঁরা এরই মধ্যে সুর বদলে ফেলেছেন। যেমন স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, মাস্ক যত প্রতিভাধরই হোক না কেন, বাজেট প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য ভুল।

অন্যদিকে এই বিচ্ছেদের ফলে বড় আর্থিক ধাক্কায় পড়ে যেতে পারেন মাস্ক। ট্রাম্পের সুরে মাস্কের বিরুদ্ধে সমালোচনা বেজে উঠতেই তাঁর টেসলা কোম্পানির শেয়ারমূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ পড়ে গেছে, যার অর্থমূল্য দেড় শ বিলয়ন ডলার। ট্রাম্প বলেছেন, মাস্কের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক চুক্তি আছে, তা–ও তিনি বাতিল করে দেবেন। এর ফল মাস্ক ও তাঁর কোম্পানির জন্য ভয়াবহ হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

মাস্কের ক্ষিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ যে বাজেট প্রস্তাবে টেসলাসহ সব ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য এত দিন চালু রেয়াতি বাতিল করা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আরও কিছু কারণ থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদ পোর্টাল এক্সিওস। নাসার প্রশাসক হিসেবে মাস্ক তাঁর বন্ধু জ্যারেড আইজাকম্যানের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, ট্রাম্প সে প্রস্তাব মানেননি। মাস্ক তাঁর ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংককে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য স্যাটেলাইট সিস্টেম ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাতেও কান দেয়নি।

ট্রাম্পের সমালোচনায় ভেঙে পড়ার লোক মাস্ক নন। রিপাবলিকান নেতাদের সাবধান করে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকবেন আর মাত্র সাড়ে তিন বছর। আমি থাকব কম করে হলেও ৪০ বছর। সেই কথাটা মাথায় রেখো।

আপাতত ট্রাম্প-মাস্কের প্রেমকাহিনির প্রথম অধ্যায় শেষ হলো কিন্তু তাঁদের গল্প যে শেষ হলো, তা নয়। এই গল্প কোথায় গড়ায় আমরা জানি না। অতএব, চোখকান খোলা রাখুন। দেখুন, আরও কী কী ঘটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ