১৪২ কোটি টাকার প্রস্তাব ফেরালেন নয়নতারা
Published: 5th, June 2025 GMT
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার ‘লেডি সুপারস্টার’ নয়নতারা। দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি সবই কুড়িয়েছেন। দক্ষিণী সিনেমায় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের অন্যতম নয়নতারা। বর্তমানে প্রতি সিনেমার জন্য ১০-১২ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন এই অভিনেত্রী।
নয়নতারা গত কয়েক বছর খুব বেশি সিনেমায় অভিনয় করেননি; যা করেছেন তা-ও বেছে বেছে। এবার প্রায় দেড়শ কোটি টাকার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন এই অভিনেত্রী। যা নিয়ে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জোর চর্চা চলছে।
সিয়াসাত ডটকমের তথ্য অনুসারে, নয়নতারা যে অভিনেতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, তার নাম সারাভানান। সারাভানান স্টোরসের মালিক তিনি। ২০২২ সালে, ‘দ্য লিজেন্ড’ সিনেমায় নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন সারভানান। এটি বড় বাজেটের সিনেমা ছিল। এতে বলিউড অভিনেত্রী উর্বশী রাউতেলা অভিনয় করেন। সিনেমাটিতে ঝলমলে দৃশ্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল তারকাবহুল। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর এটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
আরো পড়ুন:
‘দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে লিভ-ইন করছি’
‘স্যার আপনার সঙ্গে সময় কাটাতে চান’
সারাভানান আরেকটি সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নয়নতারার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। আলাপচারিতায় সারভানান জানান, যত টাকা লাগে নেন। ১০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি) দিতেও রাজি আছি। কিন্তু নয়নতারা স্পষ্টভাবে ‘না’ বলে দেন।
চলচ্চিত্রের কাজ হাতে নেওয়ার সময়ে শক্তিশালী গল্প ও গুণী পরিচালক কি না তা নিশ্চিত করেন নয়নতারা। শুধু অর্থ নয়, অর্থপূর্ণ কাজে বিশ্বাসী তিনি। সারাভানানের কাছে টাকা ছিল, তবু তিনি মনে করেননি সিনেমাটি তার জন্য সঠিক।
কিছুটা বিরতি নিয়ে আটটি সিনেমার কাজ হাতে নিয়েছেন নয়নতারা। এর মধ্যে তামিল-মালায়ালাম ভাষার দুটো সিনেমার কাজ শেষ করেছেন। ‘মেগা ১৫৭’, ‘হিট’, ‘টক্সিক’সহ ছয়টি সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী।
২০০৫ সালে ‘আয়া’ সিনেমার মাধ্যমে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক ঘটে নয়নতারার। একই বছর নয়নতারা ৬টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এর মধ্যে অন্যতম ‘গজনি’। ২০০৮ সালে এ সিনেমার রিমেক হয় বলিউডে। তাতে দেখা যায় আমির খানকে। ২০০৬ সালে ‘লক্ষ্মী’ সিনেমার মাধ্যমে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন নয়নতারা। এ বছরও তাকে মোট ৬টি সিনেমায় দেখা যায়।
২০১০ সালে ‘সুপার’ সিনেমার মাধ্যমে কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করেন। তবে বলিউডে অনেকবার কাজের প্রস্তাব পেয়েও তা প্রত্যাখান করেন নয়নতারা। সর্বশেষ শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন। নয়নতারা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘টেস্ট’। গত ৪ এপ্রিল মুক্তি পায় এটি।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ল ম ইন ড স ট র ত র প রস ত ব ন নয়নত র
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।