সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে জানার আগ্রহ অনেক বিজ্ঞানীদের। যদিও বলা হয় মাত্র ০.০০১ শতাংশ মোট সমুদ্র এলাকা এখন পর্যন্ত অন্বেষণ করা হয়েছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশজুড়ে থাকলেও গভীর সমুদ্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের জানার পরিধি বেশ কম। সায়েন্স অ্যাডভান্সেসে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, মানবজাতি এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রতলের মাত্র ০.
২০০ মিটারের বেশি গভীরতা থেকে গভীর মহাসাগর শুরু হয়, যা পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে বিস্তৃত। বিশালতা সত্ত্বেও সমুদ্র সবচেয়ে কম অন্বেষণ করা অংশ। গভীর মহাসাগর বিভিন্ন ধরনের জীবের আবাসস্থল, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন উৎপাদন আর খাদ্য ও ওষুধের মতো মূল্যবান সম্পদ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমুদ্রপৃষ্ঠে বসবাসকারী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন পৃথিবীর প্রায় ৮০ ভাগ অক্সিজেন উৎপন্ন করে। এসব জীব গভীর সমুদ্রস্রোত থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে। সামুদ্রিক জীব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে সহায়তা করছে। জলবায়ু স্থিতিশীলতায় সমুদ্রের অবদান অনেক।
সমুদ্র সরাসরি মানুষকে সহায়তা করছে। প্রতিবছর ২০ কোটি টন সামুদ্রিক খাবার সরবরাহ করা হয় সমুদ্র থেকে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে সমুদ্র। এ ছাড়া স্পঞ্জ ও ব্যাকটেরিয়ার মতো সামুদ্রিক জীব এইচআইভি, স্তন ক্যানসার ও কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখছে। পাঁচ দশক ধরে বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার নতুন সামুদ্রিক যৌগ খুঁজে যাচ্ছেন।
সমুদ্রের অনেক গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও মানুষ গভীর সমুদ্র সম্পর্কে কম জানে। ওশান ডিসকভারি লিগের একদল গবেষক ১৯৫৮ সাল থেকে পরিচালিত প্রায় ৪৪ হাজার গভীর সমুদ্র ডাইভ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের অনুসন্ধান দৃশ্যমান অনুসন্ধানের তীব্র সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরছে। ওশান ডিসকভারি লিগের সভাপতি ও বিজ্ঞানী কেটি ক্রফ বেল বলেন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার প্রয়োজন। মানুষের কার্যকলাপ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গভীর সমুদ্রের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দূষণ, সম্পদ শোষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে সমুদ্রের ওপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। গবেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সমুদ্রে মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও উষ্ণায়নের কারণে ভবিষ্যতে ক্ষতিকর প্রভাব প্রায় দ্বিগুণ হবে। মহাসাগর ইতিমধ্যে মানুষের কার্যকলাপ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত তাপ ও ৩০ শতাংশ কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করেছে। এর ফলে উষ্ণ তাপমাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস ও সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তন গভীর সমুদ্রের আবাসস্থলকে অযোগ্য করে তুলছে। বিভিন্ন গভীরতায় সামুদ্রিক জীবনকে ব্যাহত করছে। বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করছে।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং