২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিগণিত হলেও জাতীয় বাজেট প্রণয়নকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি বাজেট প্রণেতাদের কাছে যথাযথ গুরুত্ব পায় না, যার প্রতিফলন হচ্ছে মোট বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ১.৩ শতাংশ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জার্মান ওয়াচের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-২০২৫’ অনুসারে প্রতি বছর দুর্যোগে বাংলাদেশে গড়ে তিন বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। অবশ্য যে বছর দেশে অস্বাভাবিক দুর্যোগ সংঘটিত হয় সে বছর এ ক্ষতির হিসাব বহুগুণ বেড়ে যায়; যেমন– ত্রাণমন্ত্রীর তথ্যমতে গত বছর আগস্টে বন্যায় আর্থিক ক্ষতি হয় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা (সমকাল ২৩ অক্টোবর ২০২৪)। এর আগে একই বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমেল ছাড়াও আরও কিছু দুর্যোগ দেখা দেয়। সৌভাগ্যবশত ২০২৫-এ বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত বড় কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়নি। 

যা হোক, বাজেটে এ খাতে বরাদ্দকৃত টাকার (১০ হাজার ৩৬২ কোটি) আওতায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো– দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস, জরুরি সাড়া প্রদান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন, নীতি, বিধিমালা, স্থায়ী আদেশাবলি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, হালনাগাদকরণ ও বাস্তবায়ন; জরুরি মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ডেটাবেজ প্রস্তুত ও সংরক্ষণ; দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা, গ্রামীণ এলাকায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ, বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, উপকূলবর্তী অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ও মেরামত, দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উদ্ধার যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমও (কাবিখা, টিআর, জিআর, ভিজিএফ ইত্যাদি) এ বরাদ্দের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অনেকগুলোই সরকারের নিয়মিত কাজ। যেমন– সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম। 

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে দক্ষ উদ্যোগ হলো দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলির (এসওডি) আওতায় জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি (ডিএমসি) গঠন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ে (ইউনিয়ন, ওয়ার্ড) এ ধরনের কমিটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়। অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সহযোগীদের চলমান প্রকল্পের আওতায় স্থানীয়ভাবে ডিএমসি গঠন এবং তাদের সক্রিয় রাখতে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এ ব্যবস্থা স্থায়ীত্বশীল নয়; কারণ প্রকল্প শেষ হলে কমিটিগুলো মনিটরিং ও সহযোগিতার অভাবে সক্রিয় থাকে না। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় সক্ষমতা বাড়াতে হলে ডিএমসিগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে এবং কমিটির সদস্যদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজন এবং উপকরণ নিশ্চিত করতে চাই প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশ হিসেবে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চলের বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা নিতান্তই অপর্যাপ্ত (৫ হাজার ৩১৬) বিধায় পর্যাপ্তসংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর নিয়মিত মেরামতের জন্য প্রয়োজন পর্যপ্ত বাজেট বরাদ্দ। বন্যাপ্রবণ এলাকায় উপযুক্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং সেখানে সিপিপির অনুকরণে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহের আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলমান। জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার গ্রাস থেকে বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট সংস্থান থাকা চাই। দুর্যোগের ক্ষতি পুনরুদ্ধারে কৃষি বীমার কথা ভাবতে হবে এবং সেজন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা উচিত। জাতিসংঘের ‘সবার জন্য পূর্ব সংকেত’ লক্ষ্য অর্জনের জন্যও প্রয়োজন চলমান ক্যাম্পেইন জোরদার করা এবং সংকেত ব্যবস্থাকে বিপদাপন্ন মানুষের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ।

দুর্যোগব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতিসংঘ সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের ঘোষণা (২০১৫) বিবেচনায় রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে আমাদের সব উদ্যোগ হতে হবে শুধুই পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া নয়, বরং দুর্গতদের তাদের আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্যও দরকার বাজেট বরাদ্দ এবং অংশীজনের সম্মিলিতি অংশগ্রহণ। 

কালবৈশাখী (মার্চ-মে) ও ঘূর্ণিঝড় (এপ্রিল-মে) মৌসুম শেষ হয়েছে। এখন অর্থাৎ জুন থেকে আশঙ্কা বন্যার। ইতোমধ্যে দেশের কোনো কোনো এলাকায় সীমিত আকারে বন্যা হয়েছে, যা প্রবল হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। ২০২৫ সালও উষ্ণতম বছর হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। নীরব দুর্যোগ নদীভাঙনের কারণে নদীসিকস্তি মানুষের ভূমি হারানো ও বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা তো থাকছেই। বলা বাহুল্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের কারণে সব দুর্যোগেরই ধরন, সময়, মাত্রা, ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের বাজেট প্রণয়নে এসব দৃশ্যমান ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ-দুর্বিপাক (অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প ইত্যাদি) বিবেচনায় রাখতে হবে। 

বিশ্বের অনেক দেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি খাতে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখে। দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও নেপাল তাদের জাতীয় বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে যুক্তিযুক্ত বরাদ্দ রাখে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবেই বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখে। জার্মানি তাদের জাতীয় বাজেটে শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি উপাদান এন্টিসিপেটরি অ্যাকশন অর্থাৎ দুর্যোগের আগে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা খাতে ৫ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ রাখে। 
জাতিসংঘ বলছে, দুর্যোগের আগে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে দুর্যোগের পরে ১০ ডলার সমপরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভব। একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক। দুর্যোগের আগে বন্যা প্রতিরোধক বাঁধ মেরামত করা গেলে দুর্যোগে আর তা ভেঙে যাবে না। ফলে বন্যার পর বাঁধ মেরামত এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি মেরামত বা পুনর্নির্মাণের জন্য কয়েক গুণ অতিরিক্ত খরচ সাশ্রয় সম্ভব হবে। তাই ঘোষিত জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনা অর্থাৎ কোন কোন কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় পড়বে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাজীবী ও অংশীজনের সঙ্গেও মতবিনিময় করা যেতে পারে, যা এ খাতে একটি অংশগ্রহণমূলক ও যুক্তিযুক্ত বাজেট বরাদ্দে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। 

এম এ হালিম: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
halim_64@hotmail.

com


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট বর দ দ র খ প রণয়ন এল ক য় র জন য ম র মত অর থ ৎ প রবণ আওত য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা সিটি কলেজে একাদশে ভর্তি, জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য

ঢাকা সিটি কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা—
বিজ্ঞান বিভাগ:
১. প্রভাতি (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৪.৭৫ (উচ্চতর গণিতসহ)
২. প্রভাতি (ইংরেজি ভার্সন)—জিপিএ ৪.৭৫ (উচ্চতর গণিতসহ)
৩. দিবা (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৫.০০ (উচ্চতর গণিতসহ)
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ:
১. প্রভাতি (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৩.৫০
২. প্রভাতি (ইংরেজি ভার্সন)—জিপিএ ৪.০০
৩. দিবা (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৪.০০
মানবিক বিভাগ:
১. প্রভাতি (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৩.৫০
২. দিবা (বাংলা ভার্সন)—জিপিএ ৪.০০

আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে৮ ঘণ্টা আগে

ভর্তি ও কলেজসংক্রান্ত তথ্য
১. অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কলেজকে পছন্দের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় থানা ‘ধানমন্ডি’ নির্বাচন করতে হবে।
২. অনলাইনে আবেদনের ওয়েবসাইট
৩. অনলাইনে ২২০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ৫টি কলেজ ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রম অনুসারে আবেদন করতে হবে।
৪. আবেদনের তারিখ ৩০ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট ২০২৫।
৫. প্রভাতি শাখা ছাত্রী এবং দিবা শাখা ছাত্রদের জন্য।
৬. ছাত্রীদের ক্লাস সকাল ৭:৩০টা থেকে এবং ছাত্রদের ক্লাস দুপুর ১২:৩০টা থেকে শুরু হয়।
বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুননটর ডেম কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, ও লেভেল শিক্ষার্থীদের আবেদন নয়, আসন ৩২৯০টি২৬ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনকমনওয়েলথ ফেলোশিপে আবেদনের সুযোগ, মাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সঙ্গে নানা সুবিধা১১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১ আগস্ট ২০২৫)
  • সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাণিজ্য-বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে: ঢাকা চেম্বার
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্দেশনা মাউশির, কে কত টাকা পাবেন
  • বাটা সু’র মুনাফা কমেছে ২৬.৮৪ শতাংশ
  • বাংলাদেশের কাছে আবারো ইলিশের জন্য অনুরোধ করেছে ভারত
  • ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চান উমামা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৩১ জুলাই ২০২৫)
  • ঢাকা সিটি কলেজে একাদশে ভর্তি, জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য
  • আইন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
  • এইচএসসি পরীক্ষা: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্রে ভালো করতে হলে