নাটোরে ছাগলের পুরো চামড়া ২০ টাকা, আজ পরিদর্শনে যাচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 10th, June 2025 GMT
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম নাটোরে সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে না। ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ২০ টাকায় পুরো একটি চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। গরুর চামড়াও কেনা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ৫৫ থেকে ৬৫ টাকার বদলে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। পরিস্থিতি দেখতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরে আসছেন।
নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৫ লাখ গরু ও ১৫ লাখ ছাগলের চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। মোকামের দুই শতাধিক দোকানে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে দেশের ৩২ জেলার লবণযুক্ত চামড়া নাটোর মোকামে বিক্রির জন্য আসতে শুরু করবে। সেই সময় ঢাকার ট্যানারিমালিকেরাও চামড়া কিনতে এখানে আসবেন।
সোমবার দুপুরে নাটোর শহরের বনবেলঘরিয়া এলাকায় চামড়া মোকাম ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে বেচাকেনা নেই। গরুর চামড়া লবণযুক্ত করে সংরক্ষণ করা হলেও ছাগলের চামড়া অবহেলায় পড়ে আছে। কয়েকজন ফড়িয়া চামড়া নিয়ে এলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না। লবণ ছাড়া এসব কাঁচা চামড়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আখের উদ্দীন বলেন, ‘চামড়ার দাম নিয়ে এখানে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। ইচ্ছাকৃতভাবে আড়তদারেরা ছাগলের চামড়ার ন্যায্যমূল্য দিচ্ছে না। প্রতি পিস ১০–২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে। এতে গাড়ি ভাড়াও ওঠে না।’
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, কাঁচা চামড়া মূলত ঈদের দিন ও পরদিন কেনাবেচা হয়। এরপর লবণযুক্ত চামড়া সাপ্তাহিক হাটবারে (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) কেনাবেচা হয়। প্রবীণ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, চামড়া পচনশীল জিনিস। এর দামদর সব সময় ঠিক রাখা যায় না। তবে এবার সরকার নির্ধারিত দরেই কেনাবেচা হচ্ছে।
চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হালিম সিকদার বলেন, সরকার ছাগলের চামড়ার দর নির্ধারণের সময় আকারের বিষয়টি বলেনি। পাঁচ ফুটের ওপরে যেসব চামড়া, সেগুলো নির্ধারিত দরে কেনা যাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ চামড়াই ছোট, তাই গড়পড়তা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর চামড়া প্রতিটি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ২০ ট ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।