Samakal:
2025-07-31@07:27:09 GMT

কী চমৎকার চামড়া-বাজার!

Published: 10th, June 2025 GMT

কী চমৎকার চামড়া-বাজার!

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীদের দুর্গতি আর গেল না। এবারও চামড়া ব্যবসায় লাভবান হলেন ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা। সংবাদমাধ্যমের খবর, লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার, ঢাকার বাইরের জন্য যা নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা। সেই হিসাবে ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারিত হয় ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা। তবে সমকালের খবর, শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ছোট ও মান কিছুটা খারাপ এমন চামড়া ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবর, গত বছর গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রায় একই দরে।
আর খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ছাগলের চামড়া কেনায় ব্যবসায়ীদের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। অনেক স্থানে ব্যবসায়ীরা বিনা মূল্যেই ছাগলের চামড়া পেয়েছেন। 

ঢাকার বাইরে গরুর চামড়ার দাম ছিল আরও কম। ‘আড়তদাররা প্রতিটি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনতে চেয়েছে।’ বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো.

মুসলিম উদ্দিন বলেছেন, এবার চামড়ার দাম ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। অর্থাৎ তিনিও স্বীকার করেন, চামড়া সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে।
কোরবানির চামড়া প্রথমত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করেন। তারা তা বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। আড়তদার চামড়াটি বিক্রি করেন ট্যানারি মালিকের কাছে।
পুঁজিস্বল্পতার পাশাপাশি সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দিনের মধ্যেই চামড়াটি বিক্রি করতে হয়। তুলনামূলক বড় পুঁজি এবং আয়োজন থাকার কারণে আড়তদার চামড়াটি সংরক্ষণ করে ট্যানারি মালিকের সঙ্গে দরাদরিও করতে পারেন। ফলে এ ব্যবসায় লাভের গুড় সাধারণত শেষ দুই পক্ষেরই ভাগে যায়।

এমন কথা বলার কারণ হলো, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যখন ধার-কর্জ করে সংগৃহীত পুঁজি ধরে রাখতে হিমিশিম খাচ্ছেন, তখন কিন্তু চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে বেশ ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১০৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। অন্তত এ পরিসংখ্যান বলছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসানের দায় রপ্তানির ওপর দেওয়া হলেও বাস্তবতা তা নয়।
নিঃসন্দেহে কাঁচা চামড়ার রপ্তানি বাজারে এক যুগ আগের রমরমা ভাব এখন নেই। বিশেষত বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে। সে সমস্যা কাটাতেই রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে সাভারের হেমায়েতপুরে নেওয়া হয়। কিন্তু ২১ বছরেও এই চামড়া শিল্পনগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। ফলে বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে চীন। কম দামে বাংলাদেশি চামড়া তারা কিনে নেয়।

এ অবস্থা জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। এটি বড় ব্যবসায়ীদের ছোট চামড়া ব্যবসায়ীদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে সাহায্য করছে– সেটি স্পষ্ট। না হলে হেমায়েতপুরের এ অচলাবস্থা প্রায় দুই যুগ ধরে চলত না।
এখানেই সরকারের ভূমিকা নিয়ামক হয়ে আসে। তাদের বোঝা উচিত, গতানুগতিক পন্থায় চামড়ার একটি দর নির্ধারণ করে বসে থাকলেই চলে না। তা বাস্তবায়ন ও তদারক করতে হয়। আরও যা গুরুত্বপূর্ণ, হেমায়েতপুরে যে বর্জ্য শোধনাগার-সংক্রান্ত জটিলতা, সেখানকার কারখানাগুলো পরিবেশ সার্টিফিকেট পাচ্ছে না। সে সমস্যার সমাধান দ্রুতই হওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে, কোরবানিই হলো সারাবছরের চামড়া সংগ্রহের প্রধান উৎস। তদুপরি এ চামড়ার প্রধান হকদার গরিব মানুষ। ফলে বছরের পর বছর চামড়া নিয়ে তেলেসমাতির অর্থ শুধু জাতীয় লোকসানই নয়, গরিব মানুষের হক নষ্ট করাও বটে।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র আড়তদ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • বেসরকারি ব্যাংক নেবে এমটিও, বেতন শুরু ৬০০০০, প্রবেশন শেষে ৭৬০৬৫ টাকা, করুন আবেদন
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
  • হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা
  • জুলাইয়ের ২৭ দিনে ৯ ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি