Risingbd:
2025-09-18@11:42:26 GMT

আশির দশকের যাতায়াত

Published: 12th, June 2025 GMT

আশির দশকের যাতায়াত

আশির দশকে গ্রামের বেশিরভাগ রাস্তায় ছিল কাঁচা। পাকা রাস্তা ছিল না বললেই চলে। যান চলাচল করতে পারতো এরকম  একটু উঁচু রাস্তাগুলোকে ‘রাস্তা’ বলা হতো। তার থেকে একটু নিচু পায়ে হাঁটা রাস্তাগুলোকে বলা হতো হালট। এ ছাড়া ক্ষেতের আইল দিয়েও মানুষ যাতায়াত করতো। চার পাঁচ কিলোমিটার পথ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, এমনটা বেশিরভাগ মানুষই চিন্তা করতো না। 

ফসল বা শস্য আনা-নেওয়ার জন্য গরু-মহিষের গাড়ি ব্যবহৃত হতো। অনেক সময় গরু-মহিষের গাড়িতে ছই লাগিয়ে যানবাহন বা মানুষের যাতায়াতের গাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়াও ছিলো ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ি মূলত দুই রকম। এক্কা গাড়ি অর্থাৎ এক ঘোড়া দিয়ে চালিত গাড়ি। আর ছিলো টমটম। এটি দুই ঘোড়া টানতো। এর কেবিনটা একটু বড় ছিল। 

বিয়ে বাড়িতে দেখা যেত টমটমে বরযাত্রী আসতো আবার কনেকে ওই গাড়িতে করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেত। এ ছাড়া ছিলো ডুলি বা পালকি। ডুলিতে একজন মানুষ চড়তে পারতো। আর পালকিতে একাধিক লোক চড়তে পারতো। এটার বাহক সাধারণত চারজন হতো। বড় পালকির বাহকের বা বেহারার সংখ্যা আরও বেশি হতো।

এক্কা বা টমটমগুলো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার সময় অবস্থা সম্পন্ন মানুষেরা ব্যবহার করতো। কিছু পয়সাওয়ালা মানুষের বাইসাইকেল থাকতো। বাইসাইকেলগুলোর মধ্যে সে সময় বহুল পরিচিত ছিল ‘র‌্যালি’ এবং ‘হারকিউলিস’। বাইসাইকেল খুবই সীমিত আকারে ছিল। এবং বাইসাইকেল থাকাটা খুবই প্রেসটিজিয়াস ব্যাপার ছিল।

অনেক সময় এক জনের বাইসাইকেল আরেকজন ধার করতো। ধার করে নিয়ে সে হয়তো কোথাও যেত- আবার ফিরে এসে যার সাইকেল তাকে ফেরত দিতো।  বর্ষার আগে সাইকেলমেকাররা বাড়িতে বাড়িতে আসতো। তারা সাইকেলগুলো ওয়েলিং করে দিতো। এরপরে এই সাইকেলগুলো বর্ষার দুই, তিন মাস উঁচু জায়গা ঝুলিয়ে রাখা হতো। যাতে কোনো জং না ধরে। কারণ বর্ষার সময় সাইকেল ব্যবহার করার উপায় থাকতো না।

বর্ষায় নৌকায় একমাত্র যানবাহন ছিলো। কারণ ওই সময়ের রাস্তাগুলো ছিলো অনেকটা নিচু, বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে রাস্তাগুলো ডুবে যেত। ওই সময়টাতে হাট,বাজার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, স্কুল-কলেজে যাওয়া, হাসপাতালে যাওয়াসহ যেকোন জায়গায় যেতে বিভিন্ন ধরণের নৌকার ব্যবহার করা হতো। যেমন-ডিঙ্গি, কোসা, পানসি ইত্যাদি। সাধারণত ডিঙ্গি এবং কোসা এই ধরণের নৌকা বেশি ব্যবহৃত হতো। যাদের টাকা পয়সা একটু বেশি ছিলো তারা পানসি নৌকা ব্যবহার করতো। 

বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় নৌকা বাইচ হতো । বাইচের নৌকাগুলোকে ‘খেল্লা নৌকা’ বা ‘ছিপ নৌকা’ বলা হতো। এ ছাড়া খেয়া পারাপারের জন্য ছোট ছোট নদী-খালে এক ধরণের ঘাট ব্যবস্থা ছিল। সেগুলোকে বলা হতো গুদারা ঘাট। গুদারা নৌকায় গুদারা ঘাট পার করে দিতেন পাটনী।  

রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। কাঠের তক্তা দঁড়ি ও বাঁশের সাহায্যে বেঁধে-রোগীকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।

হাট বাজারে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন শস্য বা অন্যান্য জিনিসপত্র ঘোড়ার পিঠে দিয়ে হাঁটে নেওয়া হতো। ঘোড়ার গাড়ি যেমন ছিল আবার অনেকে শুধু ঘোড়া ব্যবহার করতো। 
পানসি নৌকা নিয়ে মানুষ ভ্রমণে যেত। দেখা যেতো যে তিন চার দিনের জন্য ঘুরে তারপর আসতো।  আবার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যেত। পানসি নৌকার জন্য আলাদা মাঝি থাকতো। তারা খুবই এক্সাপার্ট ছিল। 

কোসা, ডিঙ্গি সবাই চালাতো পারতো। গুদারা নৌকায় মাঝি থাকতো। সাধারণত ১০ থেকে ৩০ জন একটি গুদারা নৌকায় পারপার করতে পারতো। সে সময় বিয়েতে যৌতুক হিসেবে জামাইকে সাইকেল দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। অনেক সময় কনের বাড়ি থেকে উপহার দেওয়া হতো। বর্ষা শেষে রাস্তাগুলে জেগে উঠতে শুরু করতো।

বর্ষা শেষে নৌকাগুলো পানিতে ডুবিয়ে রাখা হতো। তখন মোটামুটি  পুকুরে, খালে, বিলে, নদীতে সব সময় পানি থাকতো। আর বর্ষার সময় কলাগাছের ভেলাকেও যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যাদের নৌকা কেনার মতো সামরথ ছিল না তারা কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করতো। পায়ে হেঁটে অথবা নৌকায় নিকটস্থ পাকা সড়কে এসে বাসে চড়ে অপেক্ষাকৃত বড় শহরে যেত মানুষ। সে সময়  এক গ্রামে হয়তো একজনের একটি মোটর সাইকেল থাকতো। অন্যদের চোখে মোটর সাইকেল ছিল বিষ্ময়ের ব্যাপার। কেউ যখন রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যেতো-গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মোটর সাইকেলের পেছনে পেছনে দৌড়ানো শুরু করতো। হোন্ডা এইচ হানড্রেড এবং ইয়ামাহা হান্ড্রেড সিসি ছিলো সেই সময়ের জনপ্রিয় মোটর সাইকেল।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র করত ব যবহ র কর অন ক সময় জন র ব র জন য বর ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ। 

পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন। 

১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”

ঢাকা/এমদাদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ
  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ