আশির দশকে গ্রামের বেশিরভাগ রাস্তায় ছিল কাঁচা। পাকা রাস্তা ছিল না বললেই চলে। যান চলাচল করতে পারতো এরকম একটু উঁচু রাস্তাগুলোকে ‘রাস্তা’ বলা হতো। তার থেকে একটু নিচু পায়ে হাঁটা রাস্তাগুলোকে বলা হতো হালট। এ ছাড়া ক্ষেতের আইল দিয়েও মানুষ যাতায়াত করতো। চার পাঁচ কিলোমিটার পথ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, এমনটা বেশিরভাগ মানুষই চিন্তা করতো না।
ফসল বা শস্য আনা-নেওয়ার জন্য গরু-মহিষের গাড়ি ব্যবহৃত হতো। অনেক সময় গরু-মহিষের গাড়িতে ছই লাগিয়ে যানবাহন বা মানুষের যাতায়াতের গাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়াও ছিলো ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ি মূলত দুই রকম। এক্কা গাড়ি অর্থাৎ এক ঘোড়া দিয়ে চালিত গাড়ি। আর ছিলো টমটম। এটি দুই ঘোড়া টানতো। এর কেবিনটা একটু বড় ছিল।
বিয়ে বাড়িতে দেখা যেত টমটমে বরযাত্রী আসতো আবার কনেকে ওই গাড়িতে করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেত। এ ছাড়া ছিলো ডুলি বা পালকি। ডুলিতে একজন মানুষ চড়তে পারতো। আর পালকিতে একাধিক লোক চড়তে পারতো। এটার বাহক সাধারণত চারজন হতো। বড় পালকির বাহকের বা বেহারার সংখ্যা আরও বেশি হতো।
এক্কা বা টমটমগুলো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার সময় অবস্থা সম্পন্ন মানুষেরা ব্যবহার করতো। কিছু পয়সাওয়ালা মানুষের বাইসাইকেল থাকতো। বাইসাইকেলগুলোর মধ্যে সে সময় বহুল পরিচিত ছিল ‘র্যালি’ এবং ‘হারকিউলিস’। বাইসাইকেল খুবই সীমিত আকারে ছিল। এবং বাইসাইকেল থাকাটা খুবই প্রেসটিজিয়াস ব্যাপার ছিল।
অনেক সময় এক জনের বাইসাইকেল আরেকজন ধার করতো। ধার করে নিয়ে সে হয়তো কোথাও যেত- আবার ফিরে এসে যার সাইকেল তাকে ফেরত দিতো। বর্ষার আগে সাইকেলমেকাররা বাড়িতে বাড়িতে আসতো। তারা সাইকেলগুলো ওয়েলিং করে দিতো। এরপরে এই সাইকেলগুলো বর্ষার দুই, তিন মাস উঁচু জায়গা ঝুলিয়ে রাখা হতো। যাতে কোনো জং না ধরে। কারণ বর্ষার সময় সাইকেল ব্যবহার করার উপায় থাকতো না।
বর্ষায় নৌকায় একমাত্র যানবাহন ছিলো। কারণ ওই সময়ের রাস্তাগুলো ছিলো অনেকটা নিচু, বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে রাস্তাগুলো ডুবে যেত। ওই সময়টাতে হাট,বাজার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, স্কুল-কলেজে যাওয়া, হাসপাতালে যাওয়াসহ যেকোন জায়গায় যেতে বিভিন্ন ধরণের নৌকার ব্যবহার করা হতো। যেমন-ডিঙ্গি, কোসা, পানসি ইত্যাদি। সাধারণত ডিঙ্গি এবং কোসা এই ধরণের নৌকা বেশি ব্যবহৃত হতো। যাদের টাকা পয়সা একটু বেশি ছিলো তারা পানসি নৌকা ব্যবহার করতো।
বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় নৌকা বাইচ হতো । বাইচের নৌকাগুলোকে ‘খেল্লা নৌকা’ বা ‘ছিপ নৌকা’ বলা হতো। এ ছাড়া খেয়া পারাপারের জন্য ছোট ছোট নদী-খালে এক ধরণের ঘাট ব্যবস্থা ছিল। সেগুলোকে বলা হতো গুদারা ঘাট। গুদারা নৌকায় গুদারা ঘাট পার করে দিতেন পাটনী।
রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। কাঠের তক্তা দঁড়ি ও বাঁশের সাহায্যে বেঁধে-রোগীকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।
হাট বাজারে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন শস্য বা অন্যান্য জিনিসপত্র ঘোড়ার পিঠে দিয়ে হাঁটে নেওয়া হতো। ঘোড়ার গাড়ি যেমন ছিল আবার অনেকে শুধু ঘোড়া ব্যবহার করতো।
পানসি নৌকা নিয়ে মানুষ ভ্রমণে যেত। দেখা যেতো যে তিন চার দিনের জন্য ঘুরে তারপর আসতো। আবার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যেত। পানসি নৌকার জন্য আলাদা মাঝি থাকতো। তারা খুবই এক্সাপার্ট ছিল।
কোসা, ডিঙ্গি সবাই চালাতো পারতো। গুদারা নৌকায় মাঝি থাকতো। সাধারণত ১০ থেকে ৩০ জন একটি গুদারা নৌকায় পারপার করতে পারতো। সে সময় বিয়েতে যৌতুক হিসেবে জামাইকে সাইকেল দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। অনেক সময় কনের বাড়ি থেকে উপহার দেওয়া হতো। বর্ষা শেষে রাস্তাগুলে জেগে উঠতে শুরু করতো।
বর্ষা শেষে নৌকাগুলো পানিতে ডুবিয়ে রাখা হতো। তখন মোটামুটি পুকুরে, খালে, বিলে, নদীতে সব সময় পানি থাকতো। আর বর্ষার সময় কলাগাছের ভেলাকেও যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যাদের নৌকা কেনার মতো সামরথ ছিল না তারা কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করতো। পায়ে হেঁটে অথবা নৌকায় নিকটস্থ পাকা সড়কে এসে বাসে চড়ে অপেক্ষাকৃত বড় শহরে যেত মানুষ। সে সময় এক গ্রামে হয়তো একজনের একটি মোটর সাইকেল থাকতো। অন্যদের চোখে মোটর সাইকেল ছিল বিষ্ময়ের ব্যাপার। কেউ যখন রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যেতো-গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মোটর সাইকেলের পেছনে পেছনে দৌড়ানো শুরু করতো। হোন্ডা এইচ হানড্রেড এবং ইয়ামাহা হান্ড্রেড সিসি ছিলো সেই সময়ের জনপ্রিয় মোটর সাইকেল।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র করত ব যবহ র কর অন ক সময় জন র ব র জন য বর ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল যাত্রীবাহী বাসটি। ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই আসার পর হঠাৎ বাসটি ধাক্কা দেয় একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। দুর্ঘটনায় আহত হন বাসের দুই যাত্রী। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মিরসরাই ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রীদের বরাতে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাসচালক। তাই বাসটি নিয়ে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের একজন দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসের সামনের আসনে আটকে ছিলেন। বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
আহত দুজন হলেন আনোয়ার হোসেন (২৮) ও মো. রায়হান ইসলাম (৩৮)। তাঁদের মধ্যে খুলনার বাসিন্দা আনোয়ারকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মো. রায়হান ইসলাম নৌবাহিনীতে কর্মরত। তাঁকে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম নগরে নেভি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের পাশের একটি গ্যারেজে কাজ করছিলেন মো. শামসুল আলম। তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাস ধাক্কা দিয়েছে। বাসের ভেতরে যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে আনেন। আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে একজন বাসে আটকে থাকায় বাসিন্দাদের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস তাঁকে উদ্ধার করে। আহত দুজনই বাসের সামনের দুটি আসনের যাত্রী বলে জানান শামসুল আলম।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি নিউ বলেশ্বর পরিবহনের বলে জানান উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের মিরসরাই স্টেশনের দলনেতা হায়াতুন্নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটকে পড়া এক যাত্রীকে অনেক কষ্টে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহত অপর ব্যক্তিকে আমরা আসার আগেই স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন, চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের একজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি হেফাজতে নিয়েছি। তবে বাসের চালক দুর্ঘটনার পরেই সটকে পড়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’