সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু তার কোনো সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না। বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত ভরাট হয়ে যাওয়া ড্রেন, নালা, খাল ও ছড়া পরিষ্কার এবং খননের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিলেট নগরীতে ছোট-বড় ১১টি ছড়া (প্রাকৃতিক খাল) প্রবহমান। ছড়াগুলোর রয়েছে ১৬টি প্রশাখা। সবগুলো মিশেছে সুরমা নদীতে। ২৭ থেকে বেড়ে নগরীর ওয়ার্ড হয়েছে ৪২। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। প্রকৃত চিত্র তার কাছে না থাকায় নতুন নতুন জটিলতা সামনে আসছে বলে মনে করছেন নগরবাসী।
এরই মধ্যে নতুন করে সিলেট সিটি করপোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে পৃথক প্রকল্প জমা দিলেও মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি। জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের পর প্রকল্প হলেও নেই স্বচ্ছতা। যথাযথ পরিকল্পনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি, নদী ও খাল খনন এবং বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে অপসারণের ব্যবস্থা করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান মিলবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের মার্চে রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়কে কালভার্ট বড় এবং চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের সিভিল সার্জন অফিসের সামনে থেকে দরগা গেটের মূল ফটকের সামনে পর্যন্ত সড়কের নিচে বড় ড্রেন তৈরি করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। একই সময়ে সোবহানীঘাটে ড্রেন প্রশস্ত করা হয়।
গত বছর কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধান প্রধান সড়কের কয়েকটি ড্রেনের প্রবেশমুখ বড় করার উদ্যোগ নেয় সিসিক। এতে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজ না হওয়ায় বিভিন্ন সড়কের ড্রেনের পকেট কেটে বড় করা হয়। কিন্তু পকেট মুখগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমছে। কাজ করছে না নতুন ড্রেনগুলো। ফলে গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটুপানি জমে।
নগরবাসী মনে করেন, ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হওয়া, ছড়াগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নর্দমার উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলা এবং পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
বৃষ্টিতে নগরীর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে পানি দেখা দেয়। স্থানীয়দের পক্ষে বাহুবল ইউনিক ক্লাব জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেন নির্মাণের দাবিতে সিসিক প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার স্মারকলিপি দেন।
সিসিক ও পাউবো কর্মকর্তারা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবনা পাঠালে সময়ক্ষেপণ করে। ফলে যথাসময়ে কাজ শুরু ও শেষ করা যায় না। ঢল ও বৃষ্টির পানি নগরীর ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলে। অথচ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান। সিসিক দীর্ঘ ১৪ বছরে বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘কানাইঘাট থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমা নদী খননের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে সুফল পাবে নগরবাসী।’
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনে। আমরা সেই অর্থে ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেন করেছি। নতুন ১৪টি ওয়ার্ড সংযুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সুপারিশ করা হলেও, বরাদ্দ অনুমোদন হয়নি।’
প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরবাসীকে সবার আগে সচেতন হতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।’
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প নগরব স প রক শ নগর র ন সড়ক সড়ক র ন রসন
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?
এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?
অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?
তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।
তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।
এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।
এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।