মাদারীপুর সদরে বিয়ের হলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো ও নাচের সময় নারীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ার ভাঙ্গা ও উত্তর খাগছাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫টি দোকান ও বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন সুচিয়া ভাঙ্গা গ্রামের আলামিন সন্ন্যামাত (১৮), জামাল ঢালী (২১), অলিল ঢালী (২৫), শাহ আলম সন্ন্যামাত (৩০); উত্তর খাগছাড়া গ্রামের রেজাউল চৌকিদার (৪৫), কাওসার তালুকদার (২৬), কামাল হোসেন (২৮) ও সাব্বির শিকদার (২০)। তাঁদের মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে উত্তর খাগছাড়া গ্রামের কাওসার তালুকদারের মেয়ের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল। পার্শ্ববর্তী সুচিয়ার ভাঙ্গা ও উত্তর খাগছাড়া গ্রামের কয়েক কিশোর একসঙ্গে উচ্চ শব্দে বাজানো গানে নাচ করছিল। এ সময় হলুদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে ওই দুই গ্রামের কিশোরদের মধ্যে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরদিন গতকাল বিকেলে দুই পক্ষের লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসার জন্য উত্তর খাগছাড়া নতুন বাজার এলাকায় বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় অন্তত ১৫টি দোকান ও বাড়িঘরে।

সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাগর ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কিশোররা শুধু নাচ করছিল। অথচ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সালিসে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। পরে হাকিম কাজীর নেতৃত্বে উত্তর খাগছাড়া গ্রামের লোকজন আমাদের গ্রামে হামলা চালায়।’

অন্যদিকে উত্তর খাগছাড়া গ্রামের হাকিম কাজী বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের গ্রামের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে পাশের গ্রামের ছেলেরা। সালিসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছিল, কিন্তু উল্টো সাগর মেম্বারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে আমাদের গ্রামে হামলা চালায়।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো.

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে দুই গ্রামেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয় পক্ষকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র গ র ম স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ