এক সময় সাধারণ দশজনের মতোই শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন রফিজ উদ্দিন (৫২)। ছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ছিল জীবন গড়ার আশা। সেই জীবন গড়তে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। জীবনের হিসাব নয়, এখন প্রতিদিন খাবার খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রফিজ উদ্দিন। 

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যারা যাতায়াত করেন তাদের চেনা মুখ হতে পারেন রফিজ উদ্দিন। ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে এই লঞ্চঘাটে বসেই পানি বিক্রি করেন তিনি। এই লঞ্চঘাটেই একদিন শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন। এই ঘাটেই হারিয়েছেন পা। তবুও ঘাট ছাড়েননি তিনি। দায়িত্ববোধ থেকে, ৫ জনের সংসারের ঘানি টানছেন দু’পায়ের সহায়তা ছাড়াই। 

রফিজ উদ্দিন চাঁদপুর পৌর ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের টিলাবাড়ী এলাকার মৃত আজিজ মাঝির বড় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সংসার কাঁধে চেপে বসে। লঞ্চঘাটে হকারি শুরু করেন। এই আয় থেকেই আদরের ছোট বোন মাজেদা খাতুনের বিয়ে দেন। নিজেও বিয়ে করেন অনেক পরে। বর্তমানে তিনি টিনশেড ঘরে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন।

রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা এবং সন্ধ্যা থেকে আবার রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে পানি বিক্রি করি। গড়ে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা আয় হয়। এই দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।’’

‘‘ঘরে স্ত্রী ভানু বেগম অসুস্থ। বাম পা অকেজো। বড় ছেলে বাদশা মাঝি বেকার। ছোট ছেলে শাহাদাত মাঝি সামান্য কিছু আয়ের চেষ্টা করছে। মেয়ে মানসুরা খাতুন স্কুলে পড়ে। পুরো পরিবারের চিকিৎসা খরচ, মেয়ের পড়ালেখার খরচ, ঘরভাড়া, বাজারসদাই আমাকে সামলাতে হয়।’’

একটু দম নেন রফিজ উদ্দিন। দুঃখের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এক সময় লঞ্চঘাটে কলা, রুটি, সিগারেট বিক্রি করতাম। ১৯৯৫ সালে লঞ্চ থেকে কলা নিয়ে নামার সময় দুই লঞ্চের মাঝখানে পড়ে পা দুটো থেতলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাকে বাঁচাতে পা দু’টো কেটে ফেলা হয়। সবাই ভেবেছিল আমাকে হয়ত ভিক্ষা করে খেতে হবে। কিন্তু আমি ওপথে যাইনি। একটা পুরোনো হুইল চেয়ার সংগ্রহ করে লঞ্চঘাটেই পানি বিক্রি করছি।’’

নতুন হুইল চেয়ার এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে জীবনে এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন রফিজ উদ্দিন। 

বিষয়টি চাঁদপুরের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন নন্দীকে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘‘রফিজ উদ্দিন ভোটার আইডি কার্ড, শরীরের ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে এলে আমরা তাকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন একটি ট্রাই সাইকেল বা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেব। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যাপারটি নিয়েও আমরা কাজ করবো।’’

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ