হুইল চেয়ার নিয়ে রফিজ উদ্দিনের জীবন সংগ্রাম
Published: 13th, June 2025 GMT
এক সময় সাধারণ দশজনের মতোই শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন রফিজ উদ্দিন (৫২)। ছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ছিল জীবন গড়ার আশা। সেই জীবন গড়তে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। জীবনের হিসাব নয়, এখন প্রতিদিন খাবার খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রফিজ উদ্দিন।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যারা যাতায়াত করেন তাদের চেনা মুখ হতে পারেন রফিজ উদ্দিন। ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে এই লঞ্চঘাটে বসেই পানি বিক্রি করেন তিনি। এই লঞ্চঘাটেই একদিন শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন। এই ঘাটেই হারিয়েছেন পা। তবুও ঘাট ছাড়েননি তিনি। দায়িত্ববোধ থেকে, ৫ জনের সংসারের ঘানি টানছেন দু’পায়ের সহায়তা ছাড়াই।
রফিজ উদ্দিন চাঁদপুর পৌর ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের টিলাবাড়ী এলাকার মৃত আজিজ মাঝির বড় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সংসার কাঁধে চেপে বসে। লঞ্চঘাটে হকারি শুরু করেন। এই আয় থেকেই আদরের ছোট বোন মাজেদা খাতুনের বিয়ে দেন। নিজেও বিয়ে করেন অনেক পরে। বর্তমানে তিনি টিনশেড ঘরে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন।
রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা এবং সন্ধ্যা থেকে আবার রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে পানি বিক্রি করি। গড়ে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা আয় হয়। এই দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।’’
‘‘ঘরে স্ত্রী ভানু বেগম অসুস্থ। বাম পা অকেজো। বড় ছেলে বাদশা মাঝি বেকার। ছোট ছেলে শাহাদাত মাঝি সামান্য কিছু আয়ের চেষ্টা করছে। মেয়ে মানসুরা খাতুন স্কুলে পড়ে। পুরো পরিবারের চিকিৎসা খরচ, মেয়ের পড়ালেখার খরচ, ঘরভাড়া, বাজারসদাই আমাকে সামলাতে হয়।’’
একটু দম নেন রফিজ উদ্দিন। দুঃখের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এক সময় লঞ্চঘাটে কলা, রুটি, সিগারেট বিক্রি করতাম। ১৯৯৫ সালে লঞ্চ থেকে কলা নিয়ে নামার সময় দুই লঞ্চের মাঝখানে পড়ে পা দুটো থেতলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাকে বাঁচাতে পা দু’টো কেটে ফেলা হয়। সবাই ভেবেছিল আমাকে হয়ত ভিক্ষা করে খেতে হবে। কিন্তু আমি ওপথে যাইনি। একটা পুরোনো হুইল চেয়ার সংগ্রহ করে লঞ্চঘাটেই পানি বিক্রি করছি।’’
নতুন হুইল চেয়ার এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে জীবনে এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন রফিজ উদ্দিন।
বিষয়টি চাঁদপুরের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন নন্দীকে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘‘রফিজ উদ্দিন ভোটার আইডি কার্ড, শরীরের ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে এলে আমরা তাকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন একটি ট্রাই সাইকেল বা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেব। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যাপারটি নিয়েও আমরা কাজ করবো।’’
তারা//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’