সৃষ্টিকর্তার সেরা প্রাণীর শরীরে বয়ে চলা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রক্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরের অভ্যন্তরে থাকা যতটা অপরিহার্য, তেমনি একজন অসুস্থ ব্যক্তির শরীর সুস্থ করার জন্যও জরুরি। রক্তদান ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। বিভিন্ন কারণে গুরুত্বের দিক থেকে রক্তদানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জুনের ১৪ তারিখ ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’ পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য দেশের সর্বস্তরের ব্যক্তিকে এই মহৎ কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসাহিত করা।
সহজ পরিভাষায় বললে, যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
রক্তদানে রক্তদাতা বিভিন্নভাবে উপকৃত হন। যেমন একজনের দান করা রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচায়; রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
বছরে তিনবার রক্তদান মানবদেহের লোহিত কণিকার প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, রক্তদানের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়। নিয়মিত রক্ত দিলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেন, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছিল। নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা, তা বিনা খরচে জানা যায়। যেমন– হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি। প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া রক্তদান উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে রক্তদান দিবস পালন শুরু হয়। ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’ থিম নিয়ে পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল ‘বিশ্ব রক্তদান দিবস’। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়। এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনও বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজ পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছেন রোগীদের, যা মোটেও কাম্য নয়। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহ’ করার মূল ভিত্তি স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত।
রক্ত যেমন একদিকে জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে সঠিকভাবে রক্তদাতা নির্বাচিত না করে রক্ত নিলে জীবন বিপন্নও হতে পারে। নিরাপদ রক্তের প্রাপ্যতা নির্ভর করে সঠিক রক্তদাতা নির্বাচন, নির্ভরযোগ্য স্ক্রিনিং ও রক্তের উপাদানের সঠিক ব্যবহারের ওপর। রক্ত এবং রক্তজাত দ্রব্যের সঞ্চালন প্রতিবছর লাখ লাখ জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
সঞ্জয় হরিজন মাখন: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
sanjoyhorizon2000@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বস র রক ত রক ত র রক ত দ দ ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ ওড়ার শক্তি হারায় উড়োজাহাজটি
ভারতের গুজরাট প্রদেশের রাজধানী আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ (বোয়িং ৭৮৭-৮) বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত থ্রাস্ট (আকাশে ওঠার শক্তি) না পাওয়া, দুই ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যাওয়া, ফুয়েল মিটারিং সিস্টেম বন্ধ হওয়া কিংবা বার্ড স্ট্রাইক (পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ) মতো কারণগুলোকে সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভারতীয় তদন্তকারীদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরাও যোগ দিয়েছেন। সহায়তা দেবে বোয়িংও।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উড়োজাহাজটি ৬২৫ ফুট উঁচুতে উঠে আর ওড়ার শক্তি পাচ্ছিল না। শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক্স পোস্টে লেখেন, ধ্বংসের দৃশ্যটি দুঃখজনক।
শুক্রবার রয়টার্সকে দুটি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম কক্ষের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরিবার মুখ দেখে শনাক্ত করায় ছয়টি মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে ভারত সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান বহর বন্ধ রাখার কথা ভাবছে। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে বোমা আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছে একটি ফ্লাইট।
বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফ্লাইট ডেটা অনুসারে, বিমানটি ৬২৫ ফুট (প্রায় ১৯০ মিটার) উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছিল। এর পর বিমানটি ওড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং ক্রমেই নিচে নেমে যায় ও বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানটি আকাশে ছিল মাত্র ৩০ সেকেন্ড।
বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে (স্থানীয় সময়) উড্ডয়ন করে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রাকালে ফ্লাইট এআই১৭১ গুজরাট বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। তাতে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন। একজন বাদে বাকি সবারই মৃত্যু ঘটেছে। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ায় ছয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। বিমানটি চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্ডার। বিমান চালনায় তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আকাশে ওড়ার আগে শেষ মুহূর্তে তোলা একটি ছবি শেষ স্মৃতি হয়ে রইল। বিমানে থাকা চিকিৎসক দম্পতি ও তাদের তিন শিশুর সেই সেলফি এখন সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। ছবিতে দেখা যায়, ডা. প্রত্যুষ জোশী ও ডা. কৌমি ব্যাস প্লেনের এক পাশে পাশাপাশি বসে আছেন। অন্য পাশে বসা তাদের তিন সন্তান– আট বছরের মেয়ে মিরায়া আর পাঁচ বছরের যমজ দুই ছেলে নকুল ও প্রদ্যুৎ। শিশুদের চোখেমুখে প্লেনে চড়ার আনন্দ, বাবার ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসির চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু কে জানত, এই ছবিই হয়ে উঠবে পরিবারটির শেষ ছবি।