যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। “নো কিংস” নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এটি মূলত ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ট্রাম্পের বিরল সামরিক কুচকাওয়াজের প্রতিবাদে আয়োজিত হয়। সূত্র: বিবিসি

শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই সামরিক কুচকাওয়াজটি ছিল ট্রাম্পের জন্মদিন এবং একইসঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকীর আয়োজন। তবে অনুষ্ঠান ঘিরে যেকোনো ধরনের প্রতিবাদে “কঠোর প্রতিরোধ” গড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে রাজধানীতে সেনাবাহিনীর মহড়া—অন্যদিকে দেশের ভেতরে সেনা দিয়ে বিক্ষোভ দমন—এই দুই চিত্রে মারাত্মক সাংঘর্ষিক বার্তা যাচ্ছে।

আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী অনেক শহরে বিক্ষোভ হয়েছে এবং এতে অংশ নিয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। সংগঠনটির নাম “নো কিংস” বা “কোনো রাজা নয়”। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এদিন নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া ও হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে জনসমাগম ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব শহরে আইনপ্রণেতা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও অধিকারকর্মীরা বক্তব্য দেন। অংশগ্রহণকারীরা হাতে আমেরিকার পতাকা ও ট্রাম্পবিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হন।

ফিলাডেলফিয়ার লাভ পার্কে আয়োজিত এক সমাবেশে ৬১ বছর বয়সী নার্স কারেন ভ্যান ত্রিয়েস্তে বলেন, “আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করা এখন জরুরি।” তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে জনস্বাস্থ্য খাতে জনবল ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদ করছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড় ও উত্তেজনাপূর্ণ। অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরেই সেখানে বিক্ষোভ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশনাল গার্ড) মোতায়েন করেন, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এর বিরোধিতা করেছিলেন।

বিক্ষোভের সময় ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।

‘ব্রাউন বেরেটস’ নামের একটি নাগরিক অধিকার সংগঠনের সদস্য হোসে অ্যাজেতক্লা বলেন, এটা শুধু কঠোর নয়, এটা নিষ্ঠুর। পরিবারগুলোকে আলাদা করা যায় না।

বিক্ষোভ ব্যাপক হলেও জনমত এখনো বিভক্ত। সিবিএস/ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের ট্রাম্পের নীতিকে ৫৪ শতাংশ আমেরিকান সমর্থন করেন। ৪৬ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন।

৪২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন এই নীতিতে তারা নিজেদের আরও নিরাপদ বোধ করেন এবং ৫৩ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প মূলত বিপজ্জনক অপরাধীদের লক্ষ্য করেই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

“নো কিংস” আন্দোলনের মূল বক্তব্য হলো— ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং কার্যত একজন রাজা হিসেবে আচরণ করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি নির্বিচারে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ তাদের।

ওয়াশিংটনে আয়োজিত সামরিক প্যারেডে হাজারো সেনাসদস্য, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং ব্যান্ড দল অংশ নেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাঁড়িয়ে থেকে কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং স্যালুট জানান।

ট্রাম্প তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের সৈনিকরা কখনও হার মানে না, কখনও আত্মসমর্পণ করে না, তারা লড়াই করে, জয় ছিনিয়ে আনে।

অনেক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এই আয়োজনকে ট্রাম্পের “দামি ইগো প্রজেক্ট” বলে আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, প্যারেডের ব্যয় ছিল প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া মেলভিন গ্রেভস বলেন, “যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে কোনো সংবর্ধনা পাইনি। এই কুচকাওয়াজই সেই শূন্যতা কিছুটা পূরণ করল।” তবে তিনি স্বীকার করেন, এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।

শেষবার যুক্তরাষ্ট্রে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছিল ১৯৯১ সালে, প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের আমলে। তখন উপসাগরীয় যুদ্ধজয়ের উদযাপন উপলক্ষ্যে ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। এবার বৃষ্টির কারণে উপস্থিতি অনেক কম ছিল।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক বারবারা স্টার বলেন, অভিবাসন বিতর্কে বিভাজনের এই সময়ে এমন প্যারেড এক অস্বস্তিকর বার্তা দেয়, যা হয়তো সেনাবাহিনী পরিকল্পনা করেনি।

এদিকে মিনেসোটায় “নো কিংস” আন্দোলনের কিছু কর্মসূচি বাতিল করা হয়। কারণ ওই রাজ্যে এক নারী রাজনীতিক ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির গাড়িতে ওই আন্দোলনের ফ্লায়ার পাওয়া যায়। গভর্নর টিম ওয়ালজ বিক্ষোভ স্থগিত রাখতে আহ্বান জানালেও, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র ক ন য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতে থেকে থাকলে, তাঁদের উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে।

ভারত থেকে কিছু মানুষকে বিভিন্ন জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আমাদের দেশের নাগরিক যদি ভারতে থাকেন, তাহলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠালে আমরা নেব। কিন্তু তাঁদের জঙ্গলের ভেতর ও নদীতে ফেলে যাওয়া কোনো সভ্য দেশের আচরণ হওয়া উচিত নয়।’

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে মারধর করলে পুলিশকে খুব সচল বলে ভাবা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এমন পুলিশ চাইছে না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি, যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে। এখনকার পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে, পুলিশ সচল হয়নি। বর্তমান পুলিশ কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়।’

আরও পড়ুন২৪ দিনে ১১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ০১ জুন ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী প্রস্তুত রয়েছে।’

আরও পড়ুনভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা০৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা
  • ইরানে ইসরায়েলের হামলা বিশ্বকে বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে: খেলাফত মজলিস