শুধুমাত্র বিএন‌পির স‌ঙ্গে বৈঠ‌ক ক‌রে নির্বাচ‌নের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধার‌ণের প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য ক‌মিশ‌নের সংলাপ বয়কট ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ জামায়া‌তে ইসলামী।

সং‌বিধান সংস্কা‌রে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ‌বেই‌লি রো‌ডের ফ‌রেন সা‌র্ভিস একাডে‌মি‌তে ঈ‌দের ছু‌টির পর দ্বিতীয় ধা‌পের সংলাপ শুরু হয়। তিন‌ দিনব্যাপী এ সংলা‌পে ৩০ রাজ‌নৈ‌তিক দল ও জোট‌কে আমন্ত্রণ জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে। বিএন‌পি, এন‌সি‌পিসহ অন্যন্য দল এ‌লেও আ‌সে‌নি জামায়াত।

দল‌টির সহকারী সে‌ক্রেটা‌রি জেনা‌রেল এবং এত‌দিন সংলা‌পে প্রতি‌নি‌ধিত্ব করা ড.

হা‌মিদুর রহমান আযাদ সমকাল‌কে ব‌লেন, ‘এক‌টি দ‌লের স‌ঙ্গে বৈঠক ক‌রে নির্বাচ‌নের সময়সীমা ঠিক করায়, সরকা‌রের অবস্থান নি‌য়ে প্রশ্ন তৈ‌রি হ‌য়ে‌ছে ব‌লে ম‌নে ক‌রে জামায়াত। এর প্রতিবা‌দে জামায়াত সংলা‌পে যায়‌নি। সরকার অবস্থান প‌রিষ্কার কর‌বে ব‌লে জামায়াত আশা ক‌রে।’

আগামীকাল বুধবার এবং পরশু বৃহস্প‌তিবারও সংলাপ চল‌বে। জামায়াত সূত্র জা‌নি‌য়ে‌ছে, প্রতী‌কী প্রতিবাদ হি‌সে‌বে আজ‌কের সংলাপ বয়কট করা হ‌য়ে‌ছে। কাল থে‌কে আ‌লোচনায় ফির‌বে জামায়াত। ত‌বে অতী‌তে সংলা‌পে প্রতি‌নি‌ধিত্ব করা একজন নেতা সমকাল‌কে ব‌লে‌ছেন, ‘ঐকমত্য ক‌মিশন নিশ্চয় আজ‌কের সংলা‌পের পর জান‌তে চাই‌বে, জামায়াত কেন যোগ দে‌য়নি। তখন জামায়াত দলীয় অবস্থান তু‌লে ধর‌বে। ঐকমত্য ক‌মিশ‌নের জবাব স‌ন্তোষজনক হ‌লে জামায়াত সংলা‌পে ফির‌বে।’

জানা যায়, ডি‌সেম্বর থে‌কে জু‌নের ম‌ধ্যে নির্বাচন হ‌বে- সরকা‌রের এ অবস্থান‌কে জামায়াত সমর্থন কর‌লেও বিএন‌পি ডি‌সেম্ব‌রের ম‌ধ্যে নির্বাচ‌নের দা‌বি‌তে সরকার‌কে চা‌পে রে‌খে‌ছিল। এ‌প্রিলের প্রথমা‌র্থে নির্বাচ‌নের ঘোষণাও দল‌টি প্রত্যাখান ক‌রে‌ছিল।

গত ১৩ জুন লন্ড‌নে প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূ‌সের স‌ঙ্গে বৈঠক ক‌রেন বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমান। বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তিতে বলা হয়, সংস্কার ও বিচা‌রের অগ্রগ‌তি সা‌পে‌ক্ষে আগামী ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচন হ‌তে পা‌রে।

প‌রে দ‌লের নির্বাহী প‌রিষ‌দের বৈঠক থে‌কে এ যৌথ বিবৃ‌তি নি‌য়ে প্রশ্ন তোলে ৫ আগ‌স্টের পর বিএন‌পির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় থাকা জামায়াত। দল‌টি ব‌লে, যৌথ বিবৃ‌তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টার একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।

জামায়াত ১৪ জুন বিবৃ‌তিতে বলে‌ছিল, সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ‌বিবৃ‌তি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা ক‌রে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট কর‌বে।

লন্ডন বৈঠ‌কের বিষ‌য়ে জামায়া‌তের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছি‌লেন, জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। বিএনপিকে তোয়াজ করতে লল্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে– ঠিক আছে। কিন্তু আলোচনার পর ঢাকায় সর্বদলীয় বৈঠক করে রমজানের আগে ভোটের ঘোষণা দিলে সব দল এবং সরকারের জন্য ভালো হতো। লন্ডন বৈঠকের পর ঘোষণা দেওয়ায় মানুষের কাছে বার্তা গেল– বিএনপিই একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে ইউনূস সরকার। এ বার্তার কারণে অন্য দলগুলো নির্বাচনের মাঠে প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিবন্ধকতায় পড়বে। এক-এগারো সরকারের তথাকথিত ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনার কারণেই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ অস্বাভাবিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। এবারও তা হ‌বে।

জামায়াত নেতারা সমকাল‌কে বলে‌ন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। জামায়াতসহ অন্যরা গৌণ। এর প্রতিবা‌দেই জামায়াত সংলাপে‌ যায়‌নি। য‌দি সরকার সবদ‌লের প্রতি সমান আচরণ না ক‌রে, ত‌বে জামায়াত সরকার‌কে সহ‌যো‌গিতা অব্যাহত রাখ‌বে কী তা ভাব‌বে। জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ সমকালকে বলেন, ‌‌‘আজ আমরা সংলাপে যাচ্ছি না।’

৩ জুন মুলত‌বির পর আজ শুরু হওয়া সংলা‌পে ৭০ অনু‌চ্ছেদ, সংর‌ক্ষিত নারী আস‌নের নির্বাচর পদ্ধ‌তি এবং কোন কোন সংসদীয় স্থায়ী ক‌মি‌টির সভাপ‌তি পদ বি‌রোধী দল‌কে দেওয়া হ‌বে; এ বিষ‌য়ে আ‌লোচনা চলে। সব ইস্যুতেই বিএন‌পির স‌ঙ্গে জামায়া‌তের মত‌বি‌রোধ র‌য়ে‌ছে।

জামায়া‌তের অবস্থান ঐকমত্য ক‌মিশ‌নের সুপা‌রিশের কাছাকা‌ছি। মৌ‌লিক সংস্কারেও দল‌টির একই অবস্থান। সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত একজন জামায়াত নেতা সমবাল‌কে ব‌লে‌ছেন, ‘বিএন‌পি সংস্কা‌রের প্রতি প‌দে প‌দে বাধা দি‌চ্ছে। জামায়াত যথাসম্ভব ছাড় দি‌য়ে নি‌জের অবস্থান বদল ক‌রে‌ছে ঐকম‌ত্যের স্বা‌র্থে। তারপরও সরকার বিএন‌পির স‌ঙ্গে আ‌লোচনায় নির্বাচ‌নের সময়‌ নির্ধারণ ক‌রে, একপ্রকার স্বীকার ক‌রে নি‌য়ে‌ছে বিএন‌পি চাই‌লে সংস্কার হ‌বে। নয়তো হ‌বে না। বিএন‌পি যেসব বিষ‌য়ে রা‌জি হ‌বে, শুধু সেগু‌লো‌তেই ঐকমত্য হ‌য়ে‌ছে ধ‌রে জুলাই সনদ হ‌বে। তাই সংস্কা‌রের সংলাপ এখন অর্থহীন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ঐকমত য ক ম শ গ রহণয গ য র অবস থ ন ব এন প র সময়স ম রহম ন সরক র ব এনপ সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান

গণভোটের বিষয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান  জানান। 

বিস্তারিত আসছে...

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কেন এমন দুর্বোধ্য পথ
  • এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান
  • অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
  • বোয়েসেলে বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ, পদসংখ্যা ১৪
  • ট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন