মামলার ঘটনার বিষয়ে জানেন না মোশাররফ, আনিসুল বলেন, ‘এ কথা বলে কোনো লাভ নেই’
Published: 18th, June 2025 GMT
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাঠগড়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে তোলার পর তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরানো হাতকড়া খুলে দেয় পুলিশ। তাঁর বাঁ হাতে পরানো ছিল হাতকড়া। তখন সকাল ১০টা ৩ মিনিট। বিচারক এজলাসে আসেননি।
আনিসুল হকের সামনে এগিয়ে যান তাঁর আইনজীবী আসিফুর রহমান। তখন আনিসুল তাঁর আইনজীবী আসিফুরকে বলেন, আজ কোন কোন মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে?
জবাবে আসিফুর বলেন, ‘স্যার, আজ আপনার দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন, অন্যটি রিমান্ড শুনানি।’
আনিসুলের সামনে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আনিসুলের ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি আনিসুলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
মোশাররফের কাছে আনিসুল জানতে চান, আজ কোন মামলায় তাঁর শুনানি। হাসিমুখে মোশাররফ জানান, কোন মামলায় আজ তাঁকে আনা হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন।
তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলতে থাকেন, বনানী থানার একটি মামলায় আনিসুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করার পর বিচারক আসামি আনিসুলের নাম ধরে ডাকেন। আনিসুল তখন আদালতে উপস্থিত আছেন জানিয়ে দেন।
এরপর বিচারক আনিসুলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাকে বনানী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো।’
পরে মোশারফকে পল্টন থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই সঙ্গে তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। তখন মোশাররফের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আমার মক্কেলের বয়স এখন ৮২। তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তিনি খুব অসুস্থ। তাঁকে ১৫টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। প্রতিটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। যখনই তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পাবেন, তখনই তাঁকে নতুন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।’
মোশাররফের আইনজীবী আদালতকে আরও বলেন, ‘আমার মক্কেল একজন বয়স্ক মানুষ। আপনার (বিচারক) সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর শরীরটা ভালো নেই। তিনি কোনো ধরনের হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
মোশাররফের রিমান্ডের সপক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আপনার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। যিনি গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে আসেন, তিনি সাফাই গান, কোনো অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।’
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত মোশারফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আনিসুলের সঙ্গে মোশাররফ কথা বলেন। তিনি আনিসুলের কাছে বলেন, মামলার ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
তখন মোশাররফকে আনিসুল বলেন, ‘এ কথা বলে কোনো লাভ নেই।’ আনিসুলের এ কথা শুনে মোশারফ তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হেসে দেন।
এ সময় আনিসুলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা মাঈন হাসান সজীব। শাহবাগ থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। তিনি আনিসুলকে বলেন, ‘স্যার, আমার লেখাপড়া এখনো শেষ হয়নি। কবে লেখাপড়া শেষ করব, কপালে কী আছে জানি না, স্যার।’ তখন আনিসুল ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সান্ত্বনা দেন।
‘আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি’
আগে থেকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুল ও মোশাররফ। তাঁদের সামনে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। বিচারক এজলাসে ছিলেন। তবে তখনো শুনানি শুরু হয়নি।
এ সময় দুজন পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারীকে কাঠগড়ায় হাজির করেন। তখন তিনি কাঠগড়ায় পায়চারি করছিলেন। তাঁর স্ত্রী নাজমা আক্তার কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাবুল সরদার তাঁর স্ত্রীর দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল চাখারীর নাম ধরে ডাকা হয়। তিনি কাঠগড়ার সম্মুখভাগে এগিয়ে যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম শ ররফ র র আইনজ ব ক ঠগড় য় র স মন ব চ রক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে ৪ আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে রিট
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করার নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা ছাত্রলীগ নেতার রিট বাতিল
বাগেরহাট প্রেস ক্লাব ও অন্যান্যদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন রিট পিটিশন দাখিল করেন। এছাড়া চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট ১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল একই বিষয়ে পৃথক রিট পিটিশন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “আমরা রিট পিটিশন করেছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন এবং ১০ দিনের রুল জারি করেছেন। আশা করি, আদালতে ন্যায়বিচার পাব এবং বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল থাকবে।”
গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেয় তারা।
তবে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) নির্ধারণ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল