হতাশা রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ঠেলে দিতে পারে: ক্রাইসিস গ্রুপ
Published: 18th, June 2025 GMT
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের উত্তরের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। সেখানে আরাকান আর্মির উত্থানে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করতে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে সদস্য সংগ্রহের গতি বাড়িয়েছে।
রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু। আর আরাকান আর্মির প্রধান সমর্থক রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী।
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে এবং ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দলে টেনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তা শাসকদের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় দেশজুড়ে আরাকান আর্মির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এ সময়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে মিয়ানমারের অনেক সাধারণ নাগরিকের চোখে রোহিঙ্গাদের ‘ভুল’ পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া। এতে জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাড়বে নিপীড়নের ঝুঁকি এবং এটা দেশটির বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।যদিও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং রোহিঙ্গাদের এই বিদ্রোহ মিয়ানমারে আন্তসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ভয়াবহ ক্ষতি করবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ করে তুলবে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের তৈরি করা ‘বাংলাদেশ/ মিয়ানমার: রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদের কী করা উচিত, সে বিষয়েও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাখাইনে নিজেদের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বলে দাবি করে। বাংলাদেশে শরণার্থীশিবিরগুলোতে তারা কয়েক বছর ধরে রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল।
তবে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থানের পর শরণার্থীশিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পারস্পরিক দখলদারির সংঘাত দ্রুত কম গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছায়—একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন তাদের লক্ষ্য আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করা, এ জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দলে সদস্য বাড়াচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত রয়েছে, তার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।
রাখাইনে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান হামলা আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের এই আলোচনাগুলোকে দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু তা–ই নয়, বরং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব আরও প্রবল হতে পারে—যা প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরাকান আর্মি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ গ ল আর ক ন আর ম র শরণ র থ র খ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত
খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতাশরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে
ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে
ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)
জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়
আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।
সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)
শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলানবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:
দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)
বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।
তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)
তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)
সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)
কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫