কৃষিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং আয়ের নতুন পথ খুলতে পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হচ্ছে কফি ও কাজুবাদাম। পুষ্টিগুণ ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশে কাজুবাদামের চাহিদা ব্যাপক। পাহাড়ি ফল হিসেবে বেশি পরিচিত কাজুবাদামের পুরোটাই একসময় ছিল আমদানিনির্ভর।
মাঠ ফসলের সাফল্যের পথ ধরে এখন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলেও এগিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের জুনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিয়েছে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রকল্প। এ প্রকল্পের লক্ষ্য– অনাবাদি জমি কাজে লাগিয়ে আধুনিক, বহুমুখী ও রপ্তানিমুখী কৃষির ভিত শক্ত করা।
চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল আগে ‘জুম’ চাষের জন্য পরিচিত ছিল। প্রকল্পের আওতায় এখন এসব জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম ও কফি। শুরুর দিকে যেখানে দেশে কাজুবাদামের চাষ হতো মাত্র ১ হাজার ৮০০ হেক্টরে, সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২০০ হেক্টরে। কফির ক্ষেত্রেও একই চিত্র– মাত্র ৬৫ হেক্টর থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে কফি চাষ।
কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু এ দুই ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ হুমকিতে না ফেলে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক ফসল চাষ সম্ভব হচ্ছে। দেশে এখন প্রায় দুই লাখ হেক্টর অনাবাদি পাহাড়ি জমি আছে, যা কাজুবাদাম ও কফির চাষে ব্যবহার করা সম্ভব। এই জমি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশ শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদাই পূরণ করবে না, বরং এ দুই ফসল রপ্তানির মাধ্যমে অর্জন করতে পারবে বৈদেশিক মুদ্রা।
চাষ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে উদ্যোক্তা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ২২টি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, যার সবই বেসরকারি উদ্যোগে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণ সহজ হয়েছে। সিলেট, বান্দরবান ও কক্সবাজারে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে উঠে এসেছেন অলবিনা গার্ডেন, মুবিন, আমানউল্লাহর মতো চাষিরা। তাদের অনুসরণ করে আরও অনেক চাষি এ ফসলে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এ ছাড়া বিএসআরএম ও কাজী ফার্মসের মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীও এগিয়ে এসেছে। তারা কফি ও কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগে কারখানা স্থাপন করছে, যেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে। বর্তমানে এসব খাতে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের একটি বড় অংশ নারী।
ব্যতিক্রমও আছে। ২০২০ সালে যশোরের চৌগাছার পাতিবিলা গ্রামের চাষি মাহাবুবুর রহমান লিটন হর্টিকালচার সেন্টারের ৩০টি চারা রোপণের মাধ্যমে ড্রাগন ও পেয়ারার সাথি হিসেবে কাজুবাদাম চাষ শুরু করেন। দুই বছর ধরে সেই গাছে ফল আসছে।
চৌগাছার পাঁচনামানা গ্রামের উদ্যোক্তা সুমন হোসেন জানান, বিদেশি ফল চাষে বড় সংকট ভালো মানের চারার সংকট। ফলন ভালো হলেও বিদেশি ফল বিক্রিতে ব্যাপারী সংকটে ভোগেন তারা।
বর্তমানে দেশে কাজুবাদামের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকায়। প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টন কাজুবাদাম আমদানি করতে হয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ও আমদানি-নির্ভরতা কমাতে হলে স্থানীয় উৎপাদন আরও বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
কফির বাজারও বড় হচ্ছে দ্রুত। দেশে কফির বার্ষিক চাহিদা এখন প্রায় দুই হাজার টন, যার বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকার মতো। গত এক দশকে চাহিদার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫৬ শতাংশ। শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কফির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, যা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার একটি বড় ভিত্তি তৈরি করছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, কাজুবাদাম ও কফি চাষ শুধুই বাণিজ্য নয়, এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবিকার উন্নয়ন, জলবায়ু সহনশীল কৃষির প্রসার এবং টেকসই উন্নয়নের পথও। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য– ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে কৃষিকে করতে হবে আরও উৎপাদনমুখী, রপ্তানিমুখী ও সহনশীল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প প রস র ফসল র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত, থাকবে সাধারণ ছুটি
৫ আগস্টকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দিনটি সাধারণ ছুটি থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
উপদেষ্টা পরিষদের আজকের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই প্রেস ব্রিফিং করা হয়। সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, প্রতি বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালিত হবে। ৫ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করা হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। কিন্তু মূল ইভেন্ট শুরু হবে জুলাইয়ের ১৪ তারিখ থেকে। এটি চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে জুলাইয়ে যেরকম পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল, আবার সে অনুভূতিটাকে ফিরিয়ে আনা। এটার জন্য কিছু কর্মসূচি নিয়ে কাজ চলছে।’
এসব বিষয়ে আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিস্তারিত জানাবে বলে উল্লেখ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকের বৈঠকে নয়জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে একটা কমিটি হয়েছে। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
জুলাই সনদ ঘোষণার জন্য একটি কমিটি হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, জুলাই প্রক্লেমেশন (সনদ) ছাত্র-জনতার একটা দাবি। জুলাই প্রক্লেমেশন যাতে ৫ আগস্টের আগে দেওয়া যায়, সে জন্য একটা কমিটি হয়েছে। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। কমিটিতে আরও কয়েকজন উপদেষ্টা থাকবেন। দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির জন্য কমিটি শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।