দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে: এনসিপি
Published: 19th, June 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সমর্থকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
নারীদের প্রতি এই ধরনের নিপীড়ন ও যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছে, এই ধরনের প্রচারণার অব্যাহত থাকলে তারা ভবিষ্যতে সব অনলাইন-অফলাইন নারী নির্যাতক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এনসিপির এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। দলের পক্ষ থেকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও কল ফাঁসের ঘটনায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং পতিত ফ্যাসিবাদী দলের নেতা-কর্মীরা চরম কুরুচিপূর্ণ, যৌন হয়রানিমূলক ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে নানা সময়ে এনসিপির নারী নেত্রীদের লক্ষ্য করে একই ধরনের অবমাননাকর প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ প্রচার ও প্রোপাগান্ডা কেবল নারীর প্রতি অবমাননা ও নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি তাদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা ও সক্ষমতাকে অস্বীকার করা এবং রাজনৈতিক পরিসরকে সংকুচিত করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
এনসিপি বলেছে, দীর্ঘ দেড় যুগের গুম-খুন-ধর্ষণ ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে নারীরা নিজেদের কর্তাসত্তাকে পুনরুদ্ধার করেছেন। সুতরাং তাঁদের প্রতি যেকোনো ধরনের অবমাননাকর ও নিবর্তনমূলক আচরণ জুলাই অভ্যুত্থানের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শকে অস্বীকার করে। এনসিপি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, এমনকি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কিছু নেতা-কর্মীও এই যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেক অনলাইন মিডিয়া ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বও এ ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা, অপেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন। একটি মূলধারার দৈনিক পত্রিকাও তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে, যা জনপরিসরে তাঁকে আরও বেশি অরক্ষিত করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্যকে উসকে দিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এনসিপি রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ফলে এনসিপির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সমর্থকগণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এনসিপি নারীদের প্রতি এই ধরনের নিপীড়ন ও যৌন হয়রানিমূলক ক্যাম্পেইনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এই ধরনের ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এনসিপি সব অনলাইন-অফলাইন নারী নির্যাতক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে তা মোকাবিলা করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ধরন র র জন ত ক এনস প র র র জন ত কর র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদ কে লিখেছে—মানুষ না এআই, এতে বিশ্বাসযোগ্যতা বদলায়
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কিংবা করপোরেট বিবৃতি—পাঠকের কাছে এসব কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নির্ভর করে লেখকের পরিচয়ের ওপর। যদি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।
বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ‘করপোরেট কমিউনিকেশনস: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।গবেষণাটি পরিচালনা করেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্যামেরন পিয়ার্সি, পিএইচডি গবেষক আইমান আলহাম্মাদ ও সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এথারিজ। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা—লেখাটি মানুষ লিখেছে নাকি এআই, জানলে কি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে তার জায়গা করে নিচ্ছে। মানুষ এটি ব্যবহার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। এর ফল ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই হতে পারে। প্রায়ই এর ব্যবহারের কথা জানানো হয় না। কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবিষয়ক একটি স্নাতক ক্লাসে দেখা হয়, মানুষ ও এআইয়ের লেখার মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় কি না, আর তখনই এ গবেষণার ভাবনাটি আসে।
একজন সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সি বলেন, ‘মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।’
দি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।গবেষণা পদ্ধতিগবেষণাটি ছিল বহুপদ্ধতিভিত্তিক বিশ্লেষণ। এতে অংশগ্রহণকারীদের একটি কাল্পনিক করপোরেট সংকট পরিস্থিতি জানানো হয়। ‘চাঙ্কি চকলেট কোম্পানি’-এর কিছু পণ্যের গ্রাহক অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মীদের ইচ্ছাকৃত অপকর্মের কারণে এটা হয়েছিল।
অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পড়তে দেওয়া হয়: তথ্যভিত্তিক, সহানুভূতিশীল ও ক্ষমা প্রার্থনামূলক। প্রতিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই বলে দেওয়া হয়, সেটি একজন মানুষ কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লিখেছে।
মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সিমানুষের লেখা হলে বিশ্বাস বেশিগবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁরা মনে করেছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাঁরা সেটিকে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর বলে মনে করেছেন। কিন্তু যদি বলা হয়, একই বার্তাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছে, তখন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা নিরপেক্ষ বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে যায়।
তবে বার্তার ধরন—তথ্যভিত্তিক, ক্ষমা প্রার্থনামূলক বা সহানুভূতিশীল—এই তিনটির ক্ষেত্রে পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় তেমন পার্থক্য দেখতে পাননি গবেষকেরা।
আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজদায় মানুষেরইগবেষকেরা বলেছেন, সংকটকালীন সময়ে বা অন্য সময়ে করপোরেট বার্তায় যদি লেখকের পরিচয় গোপন রাখা হয়, তাহলে পাঠক মনে মনে প্রশ্ন তোলেন—কে দায়ী?
অন্যদিকে গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজ বলেন, ‘আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।