আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত বেহায়া-নির্লজ্জ: শবনম ফারিয়া
Published: 19th, June 2025 GMT
ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। এতদিন নাটক-টেলিফিল্মের কাজ নিয়েই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতেন। তবে তুলনামূলক এখন কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। স্বভাবে অনেকটা—ঠোঁটকাটা। যার কারণে প্রায় সময়ই আলোচনায় থাকেন তিনি।
গত বছর গণঅভ্যত্থানে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান শবনম ফারিয়া। কিন্তু কিছু মানুষের আচরণে ভীষণভাবে আহত তিনি। কেবল তাই নয়, জাতি হিসেবে অত্যন্ত বেহায়া, নির্লজ্জ বলে উপলদ্ধি তার। বুধবার (১৮ জুন) শবনম ফারিয়া তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে কখনো অভিমান, কখনো ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই অভিনেত্রী।
একটি গল্প দিয়ে লেখা শুরু করেন শবনম ফারিয়া। তিনি লেখেন, “একটা গল্প আছে না, শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোরের! ইমাম ভাবে, কি ভালো একটা মানুষ এই ঠান্ডায় ফজরের নামাজ পড়তে এসেছে। চোর ভাবে, কি ভদ্রলোক দেখতে, দাড়িদুড়ি রেখে আবার চুরি করে! এই গল্প থেকে আমরা কি শিখেছিলাম? শিখেছিলাম যে যেমন, যার চিন্তাধারা যেমন, অন্যদেরও তাদের সেইম মনে হয়!”
আরো পড়ুন:
নরমাল ডেলিভারির ‘মিশন’ নিয়ে থাইল্যান্ডে স্বাগতা
‘মিমির মানবিক আচরণে চোখে পানি চলে এসেছিল’
শবনম ফারিয়ার দাবি, পৃথিবীর সব মানুষ টাকার জন্য নীতি বিক্রি করেন না। তার মতে, “বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব মানুষ ‘টাকার’ (ডলারও পড়তে পারেন) কাছে তাদের ‘এথিক্স’ বিক্রি করে না। দুনিয়ার ‘সব মানুষের’ কাছে টাকাই ‘সব’ না। কিন্তু মানুষ নিজস্বতায় বিশ্বাস করে! স্রোতের বিপরীতেও যায়! রিস্ক নেয়!”
গণঅভ্যত্থানের সময়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করে শবনম ফারিয়া লেখেন, “জুন মাসে যখন আন্দোলন তুঙ্গে, ইন্টারনেট চলে যাওয়ার পরপর যেসব সেলিব্রিটিদের কাছে, মেট্রোরেল/বিটিভিতে আগুন দেয়ার প্রতিবাদ করার জন্য ভিডিও বানাতে বলা হয়, আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমি প্রথমে সময় চেয়ে বলি, ভেবে জানাব! স্বাভাবিক, সে সময় ডাইরেক্ট না করার মতো সাহস যোগার করতে পারিনি। তারাও বলে সময় নেন, আপাতত এমনেতেই ইন্টারনেট নাই। যেহেতু হোয়াটসআপ বন্ধ, তাও সিয়ামকে ডাইরেক্ট মেসেজ দেই, তুমি কি ‘এস’ ভাইয়ের কল পেয়েছো? ও রিপ্লাই করে, ‘হ্যাঁ পেয়েছি এবং না বলেছি।’ তখন সাহস পাই এবং আমিও তখন না বলি।”
এই ঘটনা প্রকাশ করার কারণ জানিয়ে শবনম ফারিয়া লেখেন, “এইসব কথা অযথা বলে বেড়ানোর কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না! সেসময় এইটাই করার কথা, না বলেছি বলে আমি বিশেষ কোন ক্রেডিট নিতে চাইনি। যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনোভাবেই জড়িত না, অদূর ভবিষ্যতেও কোনো ইচ্ছা কিংবা পরিকল্পনা নেই তাও যখন দেখি কেউ লেখে, ‘এরা তো ডলার খাইছে’ মার্কা কল্পনিক গল্প, হাসা ছাড়া কিছু করার থাকে না। ভাই, আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি, যারা মন থেকে আওয়ামীলীগ ভালোবাসে কিন্তু জুলাইতে লাল ডিপি দিসিলো! হয়তো জুলাইকে আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যেভাবে সে সময় পোট্রে করা হইছে এখন বিষয়টা তেমন নাই, কিন্তু সেসময় আপনি যদি মানুষ হয়ে থাকেন, অমানুষ না হন তাহলে আপনি কোনো মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারতেন না, আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মতাদর্শ যাই হোক!”
আর রাজনৈতিক কোনো স্ট্যাটাস দেবেন না শবনম ফারিয়া। তার কারণ ব্যাখ্যা করে এই অভিনেত্রী লেখেন, “এই স্ট্যাটাস দিয়ে বাংলাদেশের পলিটিক্স নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া বন্ধ করলাম! কারণ ফাইনালি আমি বুঝে গেছি, জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ, আমরা কক্ষনো ভালো হবো না, যত আন্দোলন হোক, সরকার পরিবর্তন হোক, যতই শান্তিতে নোবেল পাওয়া মানুষ আসুক, আমাদের কেউ দুর্নীতি এবং চুরি করা থেকে আটকাতে পারবে না! শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ যেই ক্ষমতা পাবে সেই অসৎভাবে ব্যবহার করবে। আমি আর আমার নিজ দেশের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা রাখি না! পরিশেষে বলতে চাই, সত্যি সত্যি ডলার পেলে আসলে ভালোই লাগতো! শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোরর্স করতে খুবই কষ্ট হইছে।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র শবনম ফ র য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবার নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে একদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে মিল, আর অন্যদিকে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে মতভেদ।
তবে সম্প্রতি এই দুই দেশের কূটনৈতিক অস্থিরতা ভারতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই ভাবছেন, দুই দেশের সম্পর্ক কি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে?
ভারতীয় কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অস্বস্তিকর ভূরাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থামাতে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ভারতকে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েই তিনি মূলত দুই দেশের সংঘাত থামিয়েছেন।
ভারত এই দাবি শুনে চটেছে। একদিকে দেশটির সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তারা খুবই সংবেদনশীল, অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মিল খায় না।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ভারত: সামরিক জোট না করেও তারা সামরিক মিত্র১০ জুলাই ২০২৩ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে ট্রাম্প তাঁদের ফোন পর্যন্ত করেননি। এমনকি তখন কোনো মার্কিন কর্মকর্তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়েও কোনো মন্তব্য করেননি।
ট্রাম্প হয়তো পাকিস্তানের ওপর চাপ দিয়েছিলেন সংঘাত বন্ধ করার জন্য। এর ফলে ভারতকে রাজি করানোর দরকার ছিল না। কারণ, ভারত এমন একটি দেশ, যারা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় এবং নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই মনোযোগী।
দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংঘাতে জড়ানো ভারতের একেবারেই পছন্দ নয়। তাই গত এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতীয় পর্যটকদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর পর ভারত দ্রুত ও পরিমিত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই প্রতিক্রিয়ার নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি পরিচিত জঙ্গি ঘাঁটি এবং অন্যান্য স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়।
শুরু থেকেই ভারত স্পষ্ট করেছে, এটি কোনো যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ নয়, বরং যারা নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের টার্গেট করেছিল, এটি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ এড়িয়ে যেখানে সফল ভারত২৯ মার্চ ২০২৩পাকিস্তান পরে পাল্টা আক্রমণে নামে। সেই আক্রমণে তারা নির্বিচারে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এর জবাবে ভারত আবারও নির্ভুল ও নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এবার তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। ভারতের এই কড়া জবাব এবং এর সঙ্গে সম্ভবত পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ—এই দুইয়ে মিলে পাকিস্তানকে সংঘর্ষ বন্ধের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করে।
এ কারণে এই সংঘাত বন্ধের জন্য ট্রাম্প কোনোভাবেই একক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না। অথচ তিনি ঠিক সেটাই করছেন। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। ভারত তাঁর স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত এবং তারা কখনোই মেনে নেবে না, তারা ট্রাম্পের হুমকি বা প্রলোভনে নতি স্বীকার করেছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ এটিই প্রথম নয়। গত জুন মাসে তিনি হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আসিম মুনিরকে ভারতের সরকার ও বিরোধী দল—দুই পক্ষই একজন কট্টর ইসলামপন্থী মতাদর্শী বলে মনে করে। ওই বৈঠকে পাকিস্তানের বেসামরিক নেতৃত্বকে রাখা হয়নি।
ভারতের কর্মকর্তারা ও ব্যবসায়ী মহল চীনকে এখন এক হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা বোঝা কঠিন। বিশেষ করে ট্রাম্প যখন পাকিস্তানকে চীনের দেওয়া সহায়তার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো নিন্দা করেননি, তখন চীন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রহস্যজনক মনে হচ্ছে।চীনের বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভঙ্গিও ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর আচরণ অস্থির ও দোদুল্যমান। কখনো তিনি চীনের ওপর বড় রকমের শুল্ক আরোপ করছেন। আবার কখনো বলছেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফরে যেতে পারেন এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করতে চান।
এসব হিসাব-নিকাশে ভারতের স্থান আসলে কোথায় বা আদৌ কোনো স্থান আছে কি না, তা এক রহস্য। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং পরে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের বিরুদ্ধে এক গণতান্ত্রিক প্রতিরোধশক্তি হিসেবে দেখত।
যদিও ভারত তার পররাষ্ট্রনীতির ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’র নীতি মেনে চলে এবং চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না জড়ানোর কৌশল নেয়, তবুও ভারত এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সে বিবেচনায় ভারত ২০১৭ সালে ‘কোয়াড’ (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নিয়ে গঠিত জোট) পুনরুজ্জীবনের পক্ষে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা