উত্তরায় নগদের কোটি টাকা লুটের ঘটনায় সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্য জড়িত
Published: 19th, June 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের পরিবেশকের কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে নগদ ২২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো.
পুলিশ বলেছে, ডাকাত দলের নেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং শেখ মো. জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে র্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ১৪ জুন সকালে নগদের পরিবেশক আবদুল খালেক ওরফে নয়ন তাঁর উত্তরার বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে করে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। পথে উত্তরা ১২ ও ১৩ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরা ও মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছয়-সাতজন হাতে অস্ত্র নিয়ে নামেন। এ সময় নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীরা টাকার ব্যাগ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে দৌড় দেন। তখন দুষ্কৃতকারীরা তাঁদের ধাওয়া করে চারটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে একজন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হন। পরে ডাকাতেরা তিনজনকে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে টাকা, পাঁচটি মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়।
রাজধানীর উত্তরা থেকে নগদের লুটের ১ কোটি ৮ লাখ টাকার মধ্যে ২২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগদ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের বিষয়গুলো সরকারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার: আমরা কোথায়’ শীর্ষক নীতি সংলাপে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এই কথা বলেন। বেসরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহায়তা করে ইউনিসেফ।
সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নে বুদ্ধিমত্তা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কোন কাজের পর কোন কাজ বা কোন কাজের সঙ্গে কোন কাজ (সিকোয়েন্সিং) সেই বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার।
প্রথম উপস্থাপনায় ইউএসসি ফোরামের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ মো. আমিনুল হাসান বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রথমেই দরকার একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। টাস্কফোর্সের কাজ কী হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। সংস্কারের শেষ কাজটি হবে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। কমিশন গঠিত হলে টাস্কফোর্সের বিলুপ্তি ঘটবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ৬০০ এর বেশি সুপারিশ রয়েছে। সব সুপারিশই সঠিক, সব বাস্তবায়ন করা উচিত। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং অত্যাবশ্যক জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এক শ দিনও সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কেউ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। একজন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য যেন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়া জরুরি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করতে পারে।
আমলাতন্ত্র যেকোনো সংস্কারের সবচেয়ে বড় বাধা—এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্য একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল অবস্থা। এ রকম অগোছালো মন্ত্রণালয় আর একটিও নেই। এখনই বড় কোনো কিছু করার উপযুক্ত সময়।’
অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাত নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানেরা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্যোগী ও সক্রিয় হয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ওষুধ খাত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি এনজিওর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।