জনস্বাস্থ্যবিরোধী বাজেট: সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করার দাবি
Published: 19th, June 2025 GMT
সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু বাড়বে এবং রাজস্ব আয় কমবে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বৃদ্ধি না করায় ভোক্তার কমদামি সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে।
চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি শুধু সিগারেট খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা আয়োজিত তামাক কর-বিষয়ক বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব আলোচনা উঠে আসে।
আরো পড়ুন:
ঢাবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রকাশ, অবহেলিত গবেষণা ও স্বাস্থ্য খাত
বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞা ও আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী বিগত ১ বছরে জনগণের মাথাপিছু আয় (প্রভিশনাল) বেড়েছে প্রায় ১১.
প্রস্তাবিত বাজেটে টানা ষষ্ঠবারের মতো বিড়ির দাম এবং দশমবারের মতো এর করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে বিড়ি ব্যবসা আরো লাভজনক হবে। দাম অপরিবর্তিত রাখায় জর্দা এবং গুলের সহজলভ্যতা বাড়বে। এসব ক্ষতিকর পণ্যের প্রধান ভোক্তা নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য অনুযায়ী, ১ বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন নিত্যপণ্য যেমন- চালের (মিনিকেট) দাম বেড়েছে ১৩.৫৭%, সয়াবিন তেল (খোলা) ১১.৬৭%, লেখার কাগজ (সাদা) ৭.৬৯%, রুই মাছ ৭.৩৫% এবং ডিমের দাম বেড়েছে ৩.৬৬%। অথচ তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি না করায় প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হবে সিগারেটসহ সব তামাকপণ্য।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, “নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। এই দুই স্তরকে একত্র করে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে- নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
এছাড়া সকল তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ এবং দাবি তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র হেড অব প্রোগ্রামস হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব ত ব জ ট র খ চর ম স তর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, গবেষণায় মাত্র ২.০৮%
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। এতে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২.০৮ শতাংশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বাজেট সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাজেটের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন।
এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের এক সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছর প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ বছরে গবেষণাখাতে ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেটি শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট বাজেটের ২৮.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন, ২০.৮৪ শতাংশ তথা ২১৫ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ভাতা বাবদ, পণ্য ও সেবা বাবদ ২৭.৬২ শতাংশ তথা ২৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং পেনশন বাবদ ১৩.৪১ শতাংশ তথা ১৩৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত বাজেটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ৮৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎস থেকে ৯০ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এতে ঘাটতি থাকবে ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
গবেষণাখাতের অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাজেট প্রণয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা এর বাইরে যেতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে গবেষণাখাতে বাজেটের বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাদের প্রস্তাব আকারে এটি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
সাধারণত সিন্ডিকেট সভায় বাজেট অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে চূড়ান্তভাবে বাজেট পাশ করা হয়। তবে এবার সিনেট অধিবেশন আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এবারই প্রথম সিনেটে বাজেট উপস্থাপন না করে কোষাধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলন করলেন।
এর কারণ হিসেবে কোষাধ্যক্ষ বলেন, সিনেটে ২৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির মেয়াদ ১৫ জুন শেষ হয়েছে। ৩৫ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সিনেটে সরকার থেকে প্রতিনিধি থাকে, এখনও সরকার থেকে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের কারণে নয়, প্রশাসনিক জটিলতায় আমরা এ বছর নির্ধারিত সময়ে সিনেট অধিবেশন করতে পারছি না।