দেশের ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। 
জরিপের তথ্য প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এদিন সংবাদ সম্মেলন করে বিবিএস। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬ নম্বর অভীষ্টের ছয়টি সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গত ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই জরিপে দেশের ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

ফলাফল প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে যারা মতামত প্রকাশ করতে পারেন বলে মনে করেন তাদের মধ্যে আছেন শহরের ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও গ্রামের ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গ্রাম ও শহরে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ মতামত দিতে পারলেও নারীর ক্ষেত্রে তা ২৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন বলে যারা মনে করেন (২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ), তাদের মধ্যে নারী ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ পুরুষ ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। 

প্রতিবেদনে আরও যা আছে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন এমন নাগরিকের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ সরকারি সেবা গ্রহণে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে আছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর পর রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৬১ দশমিক ৯৪, পাসপোর্ট অফিস ৫৭ দশমিক ৪৫ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
জরিপে জানা গেছে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নারীর ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে নিরাপধ বোধ করেন ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলে ৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিজ বাসায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি– ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার চিত্র
গত এক বছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে সহনীয় মনে করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সময় দেওয়া নিয়ে ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সরকারি শিক্ষায় ইতিবাচক প্রবণতা
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক বিদ্যালয়ে সহজ প্রবেশাধিকার আছে বলে মনে করেন। ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ নাগরিক ব্যয়কে সহনীয় বলে মনে করেন। মাধ্যমিক স্তরে এ হার কিছুটা কম– ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শিক্ষার মান নিয়ে প্রাথমিক স্তরে ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

অন্যান্য সরকারি সেবার মান
পরিচয়পত্র বা নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক সেবার প্রাপ্যতা এবং ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তবে কার্যকারিতা ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, সময়মতো সেবা ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সমআচরণ ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ– এ তিনটি সূচকে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলক কম।

বিচারপ্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (এলাকার নেতা বা আইনজীবী) প্রক্রিয়ায় সেবা পেয়েছেন।

বৈষম্য ও হয়রানি
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার ১৯ দশমিক ৬২ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার ২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা গ্রামাঞ্চলের ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতির তথ্যে হতাশা ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তো এখনও দাঁড়াতেই পারেনি, তারপরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। এটি ভালো কথা নয়। আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয়। সেটি বেশির ভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ব এস দশম ক শ ন য র জন ত ক প রক র য় হয় ছ ন কর ছ ন মত মত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে

ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে। জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা)। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের পর গত বছরই বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে সুইস ব্যাংকগুলোতে।

এ বছরের (২০২৪) ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। বিগত সরকারের সময়ের সুবিধাভোগীদের একটি বড় অংশ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে শুরু হয়েছে। এতে অনেকে বিশ্বের এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ স্থানান্তর করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সুইস ফ্রাঁর খুব বেশি লেনদেন হয় না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য প্রায় ১৪৯ টাকা। সেই হিসাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা ছিল, যা প্রায় ৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০২৩ সালে ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ। এক বছরে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ ফ্রাঁ।

বাংলাদেশে সুইস ফ্রাঁর খুব বেশি লেনদেন হয় না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য প্রায় ১৪৯ টাকা। সেই হিসাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা ছিল, যা প্রায় ৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।

এসএনবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর দুই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গিয়েছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ঠদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে শুরু হয়েছে। এতে অনেকে বিশ্বের এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ স্থানান্তর করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা বলছেন স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হয়। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকও বৈধ পথে দেশটির ব্যাংকে অর্থ জমা রাখে। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুইস ব্যাংকের শাখাগুলোতে সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও অর্থ জমা রাখেন, সেগুলোও সুইস ব্যাংকে জমা অর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশ থেকে জমা হওয়া এসব অর্থ সে দেশের দায় হিসাবে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে থাকে।

সুইজারল্যান্ডের বাইরে এখন পাচারের অর্থ গোপন রাখার সুবিধা অন্য অনেক দেশে রয়েছে। ফলে ওই সব দেশেও পাচারের অর্থের বড় অংশ চলে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, একসময় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো পাচার হওয়া অর্থ জমা রাখার জন্য অন্যতম পছন্দের গন্তব্য ছিল। কারণ, তখন দেশটির ব্যাংকগুলো এসব তথ্য অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আদান–প্রদান করত না। অর্থ পাচারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় ছিল না সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। আন্তর্জাতিক নানা চুক্তির কারণে এখন সুইজারল্যান্ড বিভিন্ন দেশের সরকারের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করে। এ কারণে যাঁরা পাচারের অর্থ আগে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখতেন, তাঁরা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সুইজারল্যান্ডের বাইরে এখন পাচারের অর্থ গোপন রাখার সুবিধা অন্য অনেক দেশে রয়েছে। ফলে ওই সব দেশেও পাচারের অর্থের বড় অংশ চলে যাচ্ছে।

আমাদের হিসাবে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ পাচার হতো। সেই তুলনায় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের জমা অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুইজারল্যান্ড এখন অর্থ পাচারকারীদের কাছে খুব বেশি আকর্ষণীয় গন্তব্য নয়। বিকল্প হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশ গড়ে উঠেছে। যেখানে পাচারকারীদের জন্য সহজে ও নিরাপদে পাচারের সুযোগ রয়েছে। তাই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে হঠাৎ বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের হিসাবে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ পাচার হতো। সেই তুলনায় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের জমা অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়।’

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে শুধু যে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ বেড়েছে, তা নয়। ভারতের নাগরিকদের অর্থও বেড়েছে। ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ফ্রাঁ, গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৫০ কোটি সুইস ফ্রাঁ।

এ ক্ষেত্রে আমি তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিচ্ছি। প্রথমত, জমা অর্থের হিসাবের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, যার কারণে অতীতে যেসব হিসাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, সেগুলোকে গত বছর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়ে সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে কি না। তৃতীয়ত, সরকার বদলের পর পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সুইস ব্যাংকে একলাফে বাংলাদেশিদের এত অর্থ বৃদ্ধির ঘটনা পাচার বন্ধের নিশ্চয়তা দেয় না।’সিপিডি সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এসএনবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৯ বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে কম অর্থ ছিল ২০২৩ সালে। আর সর্বোচ্চ জমা ছিল ৮৭ কোটি ফ্রাঁ, ২০২১ সালে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমি তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিচ্ছি। প্রথমত, জমা অর্থের হিসাবের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, যার কারণে অতীতে যেসব হিসাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, সেগুলোকে গত বছর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়ে সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে কি না। তৃতীয়ত, সরকার বদলের পর পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সুইস ব্যাংকে একলাফে বাংলাদেশিদের এত অর্থ বৃদ্ধির ঘটনা পাচার বন্ধের নিশ্চয়তা দেয় না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ