গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত (১২ জুন) থেকেই ইসরায়েলি বিমানগুলো তেহরানের আকাশে এসে বারবার বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে। রাজধানীর ওপর দিয়ে নানা দিকে উড়ে বেড়াচ্ছে ওই বিমানগুলো। বিমান বিধ্বংসী গুলি চলছে সেগুলোর দিকে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তেহরান ছেড়েছেন। তবে এখনও যারা সেখানে আছেন, তারা কেমন আছেন তা উঠে এসেছে বিবিসির সাংবাদিক কাসরা নাজির প্রতিবেদনে।
তিনি জানান, তেহরান থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে তাঁর বোনের গলা শুনে বোঝাই যাচ্ছিল যে তিনি কতটা ভয়ে আর মানসিক চাপে আছেন। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ কলটার কথা মাঝে মাঝেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমার বোন যে এলাকায় থাকেন, কয়েক কিলোমিটারজুড়ে থাকা ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে তাঁর বোন ওখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বোন বলছিলেন যে, তিনি যতদূর জানেন, তাদের বাড়ির কাছাকাছি কোনো সামরিক স্থাপনা নেই। তবুও তাঁর একটা চিন্তা আছে, কারণ ওই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে, যেটির মালিকানা রেভল্যুশনারি গার্ডসের। সেটি একটা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
এ রকম বহু মানুষই জানেন না, তাদের প্রতিবেশীরা কারা বা তাদের এলাকায় কোনো সামরিক স্থাপনা রয়েছে কিনা। এর কারণ হলো, রেভল্যুশনারি গার্ডসের কাজকর্ম লুকানো আস্তানা থেকে খুবই গোপনে চালানো হয়ে থাকে।
রাজধানীর অনেক এলাকাতেই এখনও বিদ্যুৎ আর পানি পাওয়া যাচ্ছে, তবে খাবারের জোগানে ঘাটতি থাকছে। অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে, আরও বহু দোকানও ঝাঁপ ফেলতে শুরু করেছে। কিছু পাউরুটির বেকারিও বন্ধ হচ্ছে। কিছু বেকারি বন্ধ হয়েছে সেগুলোর মালিকরা পালিয়ে গেছেন বলে। অন্য কিছু কারখানা বন্ধ হচ্ছে ময়দার অভাবে। কয়েক হাজার মানুষ, সংখ্যাটা লাখও হতে পারে। তারা শহর ছেড়ে চলে গেছেন।
রাস্তায় যানজট আর পেট্রোলের অভাব সত্ত্বেও বহু বাসিন্দা গত কয়েকদিনে তেহরান থেকে চলে গেছেন। শহরের যেসব রাস্তায় একটি সময় ব্যাপক যানজট থাকত, এখন সেখানে এক অদ্ভুত নীরবতা। যারা এখনও রয়ে গেছেন, তারাও হামলার ভয়ে খুব একটা বের হচ্ছেন না।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘যথাযথ অঞ্চলে মোতায়েন’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “ওই মন্তব্য় যদি নেহাতই বোকামি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য না হয়ে, তার থেকে বেশি কিছু হয়, তাই আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।” খবর বিবিসির।
ট্রাম্প আরো লিখেছেন যে, “শব্দগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাবও অপ্রত্যাশিত হতে পারে। তবে আশা করি এই বিবৃতি তেমন কিছু ঘটাবে না।”
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন সামরিক প্রোটোকল মেনে দুটি সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হচ্ছে, তা তিনি বলেননি।
একদিন আগেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে মস্কোকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপরই প্রতিক্রিয়া দেন মেদভেদেভ।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ, যিনি বর্তমানে রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, তার অত্যন্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে উপযুক্ত অঞ্চলে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।”
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক চালিত নাকি পারমাণবিক অস্ত্রধারী সাবমেরিনের মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি।
রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং উভয় দেশেরই পারমাণবিক সাবমেরিনের বহর রয়েছে।
শুক্রবার পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “একটি হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা এটিকে উপযুক্ত মনে করিনি। তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “আমি মার্কিন জনগণের নিরাপত্তার ভিত্তিতে এটি করেছি। রাশিয়ার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছিলেন। এবং আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করব।”
ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি, তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর মস্কোর শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প এবং মেদভেদেভ সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই দফায় নতুন করে সময় বেধে দিয়েছেন, তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ পুতিন এখনও দেখাননি।
মেদভেদেভ- যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন- এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার সঙ্গে আল্টিমেটাম খেলা’ খেলার অভিযোগ করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে মেদভেদেভ বলেছিলেন, “প্রতিটি নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে একটি পদক্ষেপ।”
এর আগে, তিনি জুলাইয়ের শুরুতে তিনি ট্রাম্পের আল্টিমেটামকে ‘নাটকীয়’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, “রাশিয়া এসবের পরোয়া করে না।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) টেলিগ্রামে একটি পোস্টে মেদভেদেভ ট্রাম্পকে রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পর্কে সতর্ক করেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেড হ্যান্ড’ হলো রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক হামলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোডনাম।
এরপরই শুক্রবার ট্রাম্প মেদভেদেভের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মেদভেদেভকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, নিজেকে এখনো প্রেসিডেন্ট বলে ভাবেন’ বলে কটাক্ষ করেন।
ট্রাম্প মেদভেদেভকে ‘তার কথার দিকে নজর রাখার’ বিষয়ে সতর্কও করে বলেন, “তিনি খুব বিপজ্জনক অঞ্চলে প্রবেশ করছেন!”
মেদভেদেভ ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণকে সমর্থন করেন এবং পশ্চিমাদের একজন স্পষ্ট সমালোচক।
ঢাকা/ফিরোজ