রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় ছুরিকাঘাতে এক তরুণ খুন হয়েছেন। তাঁর নাম অমিত হাসান (২২)। তিনি পেশায় একজন চা–দোকানি। আজ বুধবার ভোর ৪টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কের পদচারী–সেতুর নিচে এ খুনের ঘটনা ঘটে।

নিহত অমিতের মামা ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকায় অমিত হাসানের চায়ের দোকান আছে। দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে আজ ভোর ৪টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কের পদচারী–সেতুর নিচে একটি দোকানে তিনি খিচুড়ি খাচ্ছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন লোক গিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে অমিতের কাছ থেকে টাকা, সোনার চেইন ও মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় অমিতকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১০টায় অমিতের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, যাঁরা অমিতকে হত্যা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল। এর জেরেই অমিতকে হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো.

ফারুক বলেন, নিহত অমিত হাসানের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভেবেছিলাম, বাবা ফিরে আসবেন, বাবাকে ছুঁয়ে দেখব’

বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ‘আর কত কান্না করলে, আর কত দিন স্বজনের ছবি বুকে নিয়ে ঘুরলে গুম-খুনের বিচার পাব।’ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ না দেওয়ারও সমালোচনা করেন তাঁরা।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে আয়োজিত এক জাতীয় পরামর্শ সভায় গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এ কথা বলেন।

মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র (এইচআরডিসি), মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন ও এসডব্লিউএবি–এর পক্ষ থেকে নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস পালনে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, গবেষক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিন।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শাহবাগ থেকে তুলে নেওয়া হয় তৎকালীন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনকে। অনুষ্ঠানে এসেছিল তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি। সে বলে, ‘৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম, আমার বাবা ফিরে আসবেন। আমি বাবাকে ছুঁয়ে দেখব। কিন্তু ১০ মাস হয়ে গেলেও বাবা ফিরে এলেন না। বাবা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সেটাও জানতে পারলাম না।’

আদিবা ইসলাম বলেন, ‘একটা দল করার কারণে আমার বাবাকে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে গুমের শিকার পরিবারগুলোর বড় ভূমিকা ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আর কোনো পরিবার যেন এমন অন্যায়ের শিকার না হয়, আর কখনো যেন আয়নাঘর না হয়; সে জন্য যা করার, করা হবে।

গত ১৭ বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যতগুলো গুম-খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার বিচার দাবি করেন বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন। তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) পুলিশ দিয়ে তাঁকেও গুমের চেষ্টা করেছিল।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলেই তাঁরা জানতে চান, আর কত দিন কান্না করলে তাঁরা স্বজন হারানোর বিচার পাবেন।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে আটকের ঘটনায় ‘মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ)’ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এটা বেআইনি কাজ। তবে এ দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মব’ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার প্রতিটি ঘটনার বিচারের দাবি জানান তিনি।

স্বজনদের গুম-খুনের বিচার চাইতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানান মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুনের সত্য ঘটনাগুলো সামনে আনতে দিত না। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে কোথাও দাঁড়াতে দিত না। অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই এসব গুম-খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এসডব্লিউএবি–এর চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম, পুলিশের গুমের শিকার সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা প্রমুখ।

আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ গুম ও খুনের সরকার কায়েম করেছিল: সানজিদা ইসলাম২৯ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ