একটি নির্বাচিত সরকার অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যেনতেন একটি নির্বাচন তাঁরা চান না।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এই সংলাপের আয়োজন করে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)। এতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।

জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘যেনতেন নির্বাচন চাই না মানে আমরা নির্বাচন চাই না—এ বিষয়টা না কিন্তু। ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে এবং সন্দেহ তৈরি করা হচ্ছে। আর যেনতেন ইলেকশন যদি কেউ চান, আমরা তাদেরকেও চাই না। যেনতেন নির্বাচন যারা করেছে, আমরা তাদেরকে বিতাড়িত করেছি।’

যেনতেন নির্বাচন হলে দেশে বিচার ও সংস্কার বৃথা যাবে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে আসা উচিত এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হতে পারে এ ব্যাপারে আমরা নিজেদের ভেতরে আলোচনা করতে পারি। আমি মনে করি, এ রকম আলোচনায় আমরা যুক্ত হলে যেসব (মত) পার্থক্য রয়েছে, সেগুলো দূর হয়ে যেতে পারে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে, যেমন আমরা ট্র্যাডিশনাল (গতানুগতিক) নির্বাচনের বিপরীতে পিআর পদ্ধতি চাচ্ছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে চাচ্ছি, এটা আমাদের দলীয় এজেন্ডা, অন্যদের এজেন্ডা আছে। সুতরাং প্রতিটি দলের এজেন্ডায় পার্থক্য হলেই বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, নির্বাচন চাচ্ছে না—এগুলো বলাটাই আমি মনে করি ষড়যন্ত্রের একটা অংশ হতে পারে।’

সংলাপে অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, আলোকচিত্রী সাংবাদিক শহিদুল আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) নূর উদ্দিন খান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ