৫৩ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেন সালেহা বিবি
Published: 8th, July 2025 GMT
সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম সপ্তাহেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল সালেহা বিবিকে। সংসারে ঢুকে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পাট। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কষ্ট কখনোই ভুলতে পারেননি। এরপর সংসারের অভাব অনটন ও ছেলেদের পড়াশোনা সব মিলিয়ে আর নিজের পড়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে সেই ইচ্ছা পূরণ করছেন তিনি। চলতি বছর ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অংশ নিচ্ছেন ৫৩ বছর বয়সী সালেহা।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তক্তপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বিবি তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহার আলীর স্ত্রী। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী সালেহার জন্ম ১৯৭২ সালের মার্চে।
সোমবার শাহার–সালেহা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সালেহা বিবি। তিনি জানান, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই আবার তার লেখাপড়া শুরু। স্বামী ও ছেলেদের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে উপজেলার শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভোকেশনাল শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ৪.
স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সালেহার পরিবার। বড় ছেলে শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।
সালেহার স্বামী শাহার আলী বলেন, অল্প বয়সে আমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে আর পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। এজন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাই তাকে নতুন করে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। সে পড়াশুনায় ভালো করছে। তিনি নিজে স্ত্রীকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেন এবংপরীক্ষা শেষে বাড়ি নিয়ে আসেন।
সালেহার বড় ছেলে শামীম হোসেন বলেন, এখন সুযোগ হয়েছে তাই আমরা মাকে আবার পড়াশোনা করাচ্ছি। এই বয়সে মায়ের লেখাপড়ার ধৈর্য দেখে অবাক হয়ে যাই। মায়ের জন্য গর্ব হয়।
ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান মনি জানান, সালেহা বিবি তার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, এই বয়সে লেখাপড়া সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সালেহা বিবি অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এইচএসস পর ক ষ পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।