সাত খুন ও ত্বকী হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
Published: 9th, July 2025 GMT
অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ত্বকী হত্যা মামলাটি অত্যন্ত সেনসেটিভ মামলা। এই মামলার স্থবিরতা কোন স্টেজে রয়েছে সেটি জেনে নিয়ে দ্রুত নিস্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে। আপনারা দেখেছেন সেনসিটিভ মামলার মধ্যে আবরার ফাহাদ মামলা টপ প্রায়োরিটি দিয়ে করেছি। মেজর সিনহা হত্যা মামলা টপ প্রায়োরিটি দিয়ে করেছি। ত্বকী হত্যা মামলাটিও এ ধরনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আমরা চিন্তা করবো কিভাবে এটিকে দ্রুত ত্বরান্তিত করা যায়। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলাও দ্রুত নিস্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আপনার দেখবেন এটিও দ্রুত নিস্পত্তি হবে।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি এবং জেলার সকল সরকারি কৌসুলী ও পাবলিক প্রসিকিউটরগণের সঙ্গে মত বিনিময় সভার পূর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তির জন্য প্রায়োরিটি বেসিসে তদন্ত সম্পন্ন করা এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। সেই প্রয়োরিটি ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।
নিহতের পরিবার মামলার বাদি না হওয়া এবং মিথ্যা মামলার হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা যথাযথভাবে তদন্ত করছি। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করছি ভিকটিমের পরিবার যাতে ন্যায় বিচার পায় এবং কেউ যাতে মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী না হয় এজন্য আইন মন্ত্রনালয় থেকে ফৌজদারি কার্যবিধিতে একটি সংশোধনী প্রস্তাবনা করা হয়েছে। যাতে অন্তর্র্বতীকালিন অবস্থায় একটি ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া যায়। তদন্তের মাঝখানে যেয়ে কোন কোন আসামির বিরুদ্ধে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া যেতে পারে যাদের বিরুদ্ধে এপারেন্টলি মনে হবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
 উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থানান্তর সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রস্তাবনা এসেছে। এটি এখনো বিচার বিবেচনাধীন রয়েছে। এটা পরে বলা যাবে কতটা ফলপ্রসু হবে। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। 
হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটিও প্রস্তাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলে বিবেচনায় নিয়ে এর সাংবিধানিক ব্যাখ্যা কি আছে সেগুলো বিবেচনা করে তারপর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিগত সরকারের আমলে নির্মিত নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনটির বিষয়েও আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সারাদেশের আইনজীবীদের চলমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচী যাতে যথাযথভাবে হয় এটি কক্সবাজারে আইনজীবীদের ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করার পরিকল্পনা করছি। আইনজীবীদের জন্যও আবাসন প্রকল্প করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আবু শামীম আজাদের সভাপতি আরো উপস্থিত ছিলেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রবিউল ইসলাম, জেলা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির, নারীি ও শিশু আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট খোরশেদ মোল্লা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ন কবির, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধানসহ আরো অনেকে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আইনজ ব ন র য়ণগঞ জ আইনজ ব র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।