বাসের জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় রক্ষা পেয়েছিল শিশু সোহানুর
Published: 11th, July 2025 GMT
অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হচ্ছিল যাত্রীবাহী বাসটি। রেললাইনের ওপরই হঠাৎ বাসের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যেই একটি ট্রেন এগিয়ে আসে। বাসের যাত্রীদের মধ্যে চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু হয়। বাসের জানালা দিয়ে ৮ বছরের শিশু সোহানুরকে ফেলে দেন দাদা আবদুল হামিদ। সোহানুর বেঁচে যায়; ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় দাদার। সোহানুর রহমান এখন ২৮ বছরের যুবক। সেই দিনের দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো তাঁকে তাড়া করে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় ২০০৬ সালের ১১ জুলাই ট্রেনের ধাক্কায় আবদুল হামিদসহ বাসের ৪০ জন নিহত হন। এতে আহত হয়েছিলেন আরও ৩৮ জন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার আমুট্ট রেলক্রসিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনার ১৯ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ওই দুর্ঘটনার পর এটি বৈধ রেলক্রসিং করা হয়। তখন দিনটিকে স্থানীয়ভাবে শোক দিবস পালন ও দুর্ঘটনাস্থলে নিহতের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবছর নীরবেই কেটে যায় দিনটি।
ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া সোহানুর রহমানের বাড়ি আক্কেলপুর পৌর শহরের পশ্চিম আমুট্ট মহল্লায়। ওই দিনের স্মৃতি মনে করে সোহানুর বলেন, ‘আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। দাদা (আবদুল হামিদ) জয়পুরহাট শহরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। আমিও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরি। আমরা দুজন বাড়ি থেকে বের হয়ে আক্কেলপুর রেলগেটে যাই। আমাদের সামনে দিয়ে জয়পুরহাটগামী দুটি বাস চলে যায়। এসব বাস অনেকটা ফাঁকা থাকলেও দাদা উঠলেন না। পরে আমাকে নিয়ে খেয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসে যাত্রীবোঝাই। আমরা বাসের একদম পেছনের লম্বা সিটে জানালার পাশে গিয়ে বসি। সোয়া ১০টার দিকে বাসটি রওনা হয়। ১০ মিনিট পর বাসটি আমুট্ট রেলগেটে পৌঁছায়। হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমার ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। হঠাৎ দাদা আমাকে জানালা দিয়ে রেললাইনের পাশের জঙ্গলে ছুড়ে ফেলেন। পরে হাসপাতালে আমার জ্ঞান আসে। ওই দিনের কথা মনে হলো, এখনো ভয় লাগে। দাদার জন্য কষ্ট পাই।’
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের আমুট্ট রেলক্রসিংয়ে ২০০৬ সালের ১১ জুলাই ট্রেন-বাসের সংঘর্ষে ৪০ জন বাসযাত্রী নিহত ও ৩৮ জন আহত হন। এতে লন্ডভন্ড হয় খেয়া পরিবহনের বাসটি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান
একটা রাষ্ট্রের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছু মানদণ্ড আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্পন্ন যুগোপযোগী শিক্ষার প্রসার করা। শিক্ষকদের দুর্বল বেতনকাঠামো দিয়ে এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তা–ই নয়, অনেক সময় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষকদের বেতনও আটকে যায়। যেমন আমরা দেখছি সারা দেশে মোট ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক–কর্মচারীরা ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হলেও সেখানে নানা অবহেলা বিদ্যমান। এটি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০৬ সাল থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীন দেশের ১০টি জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প শুরু হয়। ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। এরপর তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিতকরণ হওয়ার পর ২০১৪ সালের জুনে শেষ হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতেন। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অনিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
শিক্ষকদের অভিযোগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। ফলে বাড়িভাড়া, সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসা—সবই ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকেরা যে আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা তাঁদের পেশাদার জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়কেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
যে শিক্ষকেরা দেশের টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের এমন করুণ দশা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এই শিক্ষকেরা মনোবল হারিয়ে ফেলছেন, ক্লাসে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে পারছেন না এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। এমন অবস্থায় কীভাবে দেশের টেক্সটাইল খাতকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা সম্ভব, তা একটি বড় প্রশ্ন।
শিক্ষকদের এই দুর্দশা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত এই ইনস্টিটিউটগুলো বহু বছর ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। আদালতের রায়ের পরও এ অচলাবস্থা কাটছে না। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট এবং চলতি বছরের ২১ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিলেও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তা কার্যকর করছে না। এই দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচার বিভাগের আদেশকে উপেক্ষা করার প্রবণতা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।
আমরা আশা করব টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের এ দুর্দশা দ্রুত কেটে যাবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের দিকে সুদৃষ্টি দেবেন।