২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তখন থেকে নোবেল পুরস্কারের পিছু নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পর বহুলোককে ধরেছিলেন পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করতে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো  শিঞ্জে আবে তাঁর অনুরোধে তেমন একটি চিঠি লিখেওছিলেন। ট্রাম্প নিজে বেশ গর্ব করেই বলেছিলেন, আবে তাঁর জন্য পাঁচ পাতার যে চিঠি নোবেল কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন, সেটি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় উপহারের একটি। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি, নোবেল পুরস্কার তাঁর জন্য সোনার হরিণ হয়েই থেকেছে। তবে এবার ভাগ্য বদলাতেও পারে।

এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে এসেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নৈশভোজের নিমন্ত্রণ গিয়েছিলেন। টেবিলের দুই ধারে দুই দেশের ডজন দুয়েক গণ্যমান্য ব্যক্তি, খানা শুরুর আগেই হঠাৎ বেশ নাটুকে কায়দায় পকেট থেকে একখানা চিঠি বের করলেন নেতানিয়াহু। জানালেন তিনি ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করে নোবেল কমিটির কাছে চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠির কপি। ‘একের পর এক দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন ট্রাম্প, এই পুরস্কার তাঁর অবশ্যই প্রাপ্য।’

আরও পড়ুনট্রাম্প যেভাবে যুদ্ধবাজদের জন্য পথ খুলে দিলেন২৩ জুন ২০২৫

দৃশ্যত বিস্মিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। জানালেন এই সুপারিশে তিনি যারপরনাই খুশি হয়েছেন। কিন্তু সন্দেহও ছিল। নোবেল কমিটির ‘লিবারেল’ সদস্যরা কি আর আমাকে এই পুরস্কার দেবে?

এর আগেও ট্রাম্প নোবেল কমিটির আপাতপক্ষপাতিত্বে তাঁর মনঃপীড়ার কথা বলেছেন। ২০২০ সালে লাস ভেগাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন কথাও বলেন, তাঁর নাম যদি ওবামা হতো তাহলে চোখের পলকেই তিনি এই পুরস্কার পেতেন।

নোবেল কমিটির নীতিমালা অনুসারে, যেসব ব্যক্তি বা সংগঠন দেশে দেশে বন্ধুত্ব বাড়াতে, পৃথিবী থেকে নিয়মিত সেনাবাহিনীমুক্ত করতে অথবা শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে, তারাই এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবে। যাঁরা মনোনয়ন পাঠাতে পারেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রিবর্গ বা শীর্ষস্থানীয় বিচারপতিরা। এর বাইরেও কমিটির নিজের অনুমোদিত ব্যক্তি ও সংস্থা রয়েছে, যারা নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ পাঠাতে পারে।

এ বছর নেতানিয়াহু ছাড়াও পাকিস্তান ট্রাম্পকে এই পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছে। গত মাসে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খানা খেতে এসে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিফ মুনির তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো সে সুপারিশের একটি কপি ট্রাম্পকে হস্তান্তর করেন।

শুধু ট্রাম্প চান বলেই এসব বিভিন্ন প্রশ্নে ভোজবাজির মতো সমাধান অর্জিত হবে, তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ, জটিল ও বহুপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা। তেমন আলাপ-আলোচনার মানুষ ট্রাম্প নন, কিন্তু তিনি যদি এ কথা বুঝতে সক্ষম হন যে তার ব্যক্তিগত প্রভাব ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো সম্ভব, তাহলে হয়তোবা নিকট ভবিষ্যতে এসব প্রশ্নেই অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। ট্রাম্প যাতে সেই পথে আসেন, হয়তো সে জন্যই বিশ্বের কোনো কোনো নেতা ট্রাম্পের নাকের ডগায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের মুলোটি ঝোলাতে চাইছেন।

আমরা জানি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে তাঁর ভূমিকার জন্য ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছে। কিন্তু নেতানিয়াহু কোনো বিশেষ শান্তি উদ্যোগের জন্য নয়, বিশ্বশান্তির প্রবক্তা হিসেবেই ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেন। স্মরণ করা যেতে পারে, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য এই মনোনয়ন পাওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ৩০ হাজার পাউন্ডের ডজনখানেক বোমা বর্ষণের নির্দেশ দেন।

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধ নেই। কোনো আশু হুমকি রয়েছে, সে কথাও কেউ বলবে না। বরং উল্টো, ইরানের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক অস্ত্র সংবরণ চুক্তি সম্পাদনের কাজে দুটি দেশ তাদের আলোচনায় বেশ এগিয়ে ছিল। এরই মধ্যে বোমা। তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন, এমন সগৌরব দাবি ট্রাম্প নিজেই করেছিলেন, যদিও পরে সে দাবি সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সম্ভবত নোবেল পুরস্কারের কথা মাথায় রেখেই ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় দফায় তিনটি জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রশ্ন তিনটি হলো ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির নবায়ন, গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সমাপ্তি। তাঁর ‘ব্যক্তিগত কূটনীতি’-এর সাফল্যের ব্যাপারে ট্রাম্প এতটাই আস্থাবান যে ক্ষমতা গ্রহণের এক দিনের মধ্যেই সমস্যাগুলো সমাধান করবেন, এমন আগাম ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

বলা বাহুল্য, ইউক্রেনে এখনো রাশিয়া দেদার মানুষ মেরে চলেছে, গাজার গণহত্যা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি আপাতত শিকেয় তোলা আছে। তারপরও কেন ভাবা হচ্ছে এই পুরস্কারের জন্য ট্রাম্প একজন যোগ্য ব্যক্তি?
মনে রাখা উচিত, এই সুপারিশগুলো আসছে এমন ব্যক্তি বা দেশের কাছ থেকে যারা তৈলমর্দনের মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় আছে।

আরও পড়ুনট্রাম্প কেন ঠান্ডা মাথায় মার্কিন প্রতিরক্ষা দুর্বল করছেন০২ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বা যুদ্ধনীতি কোনোটাই এখন আর ব্যাপক-আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নয়, একা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নির্ধারিত হয়। তিনিই ঠিক করেন, কখন কোন দেশকে নিজের নবতম অঙ্গরাজ্য বানাবেন, কোথায় বোমা ফেলবেন, কার ওপর বাণিজ্য শুল্ক বসাবেন।

ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, তিনি কী করবেন, সে কথা একা তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। সব বিষয়েই তিনি অন্য সবার চেয়ে বেশি জানেন, বেশি বোঝেন। যেমন তিনি নিজেই বলেছেন, যুদ্ধসংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন তিনি জেনারেলদের চেয়েও বেশি জানেন। জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে আলাদা কোনো উপদেষ্টাও তিনি এবার নিয়োগ দেননি। এর ফলে পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে অনেক কিছুই একতরফা ও অপরিকল্পিত। তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এতটাই বিশৃঙ্খল যে আজ তিনি এক কথা বলেন, তো ২৪ ঘণ্টা পর ঠিক তার উল্টো কথা বলেন।

কোনো কোনো পণ্ডিতজন তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পাগলামি বলেও উপহাস করেছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো তাঁর এই খামখেয়ালি ব্যবহারে এতটাই উদ্বিগ্ন যে তারা ট্রাম্পকে খুশি রাখতে এখন চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে। ন্যাটোর মহাসচিব গত মাসে তাঁর শান্তি উদ্যোগের প্রশংসা করতে গিয়ে মুখ ফসকে ‘ড্যাডি ট্রাম্প’ বলে ফেলেছিলেন। সন্দেহ নেই, সেটিও তৈলমর্দনেরই অংশ।

ট্রাম্পের এই অভিনব ‘ব্যক্তিগত কূটনীতি’র পেছনে এমন একটি বিশ্বাস কাজ করে যে বিবদমান দেশগুলোর নেতাদের কারও কারও সঙ্গে তাঁর সখ্য এত নিকট ও গভীর যে তিনি চাইলে তাদের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। যেমন তাঁর দাবি অনুসারে, ঘটেছে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে। তবে অন্য অধিকাংশ ব্যাপারে সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়নি। এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থের ওপর নির্ভরশীল, তিনিও ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি দাবি উপেক্ষা করে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড’ বলে তিনি যতই ঢোল পেটান না কেন, ট্রাম্পের দাবি মেনে এখন পর্যন্ত শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তবে এ কথা অংশত ঠিক যে গাজা ও ইউক্রেন প্রশ্নে নতুন আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনে স্পষ্ট আগ্রহও দেখিয়েছেন তিনি, অদূর ভবিষ্যতে সে আলোচনা আবার শুরু হবে, এ কথা ভাবা অযৌক্তিক নয়।

গাজা প্রশ্নে ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব শুধু অবাস্তবই নয়, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য তা অপমানজনক। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো আরব দেশ, বিশেষত মিসর, কাতার ও সৌদি আরব, ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসতে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই সম্মতি দিয়েছে, কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গে একটি আলাদা শান্তি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অনুমোদনে।

শুধু ট্রাম্প চান বলেই এসব বিভিন্ন প্রশ্নে ভোজবাজির মতো সমাধান অর্জিত হবে, তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ, জটিল ও বহুপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা। তেমন আলাপ-আলোচনার মানুষ ট্রাম্প নন, কিন্তু তিনি যদি এ কথা বুঝতে সক্ষম হন যে তার ব্যক্তিগত প্রভাব ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো সম্ভব, তাহলে হয়তোবা নিকট ভবিষ্যতে এসব প্রশ্নেই অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। ট্রাম্প যাতে সেই পথে আসেন, হয়তো সে জন্যই বিশ্বের কোনো কোনো নেতা ট্রাম্পের নাকের ডগায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের মুলোটি ঝোলাতে চাইছেন।

২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ পাঠানোর তারিখ ছিল ফেব্রুয়ারি। ফলে এ বছর ট্রাম্পের নাম বিবেচিত হবে, সে কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত উদ্যোগ কোনো সাফল্য বয়ে আনে, তাহলে নোবেল পুরস্কারের সোনার হরিণটি তিনি আগামী কোনো সময়ে পেলেও পেতে পারেন।

হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ল কম ট র র জন য প ইউক র ন মন ত র গ রহণ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানের পরও কেন আমলাতন্ত্রের সংস্কার হলো না

‘রাষ্ট্রকে শুধু দখল করলেই হবে না, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভেঙেও ফেলতে হবে।’ অভ্যুত্থান আর বিপ্লবের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জায়গা থেকে পার্থক্য এইটুকুই। দেড় শ বছর আগে ঘটে যাওয়া প্যারিস কমিউনের ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে গিয়ে জন্ম নেওয়া এই উপলদ্ধি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে বারবার ফিরে ফিরে এসেছে, নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণ করতে না পারা যেকোনো বিজয়ী রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রসঙ্গে—পরিণামে সেটা হয়েছে বেহাত বিপ্লব অথবা প্রতিবিপ্লব।

পেছনের দিক থেকেই আলাপটা টানা যাক। খুব অদ্ভুত শোনালেও, ক্ষমতাকাঠামোর প্রশ্নে বাংলাদেশে আদতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশের জনগণের আর সব রূপান্তর নির্ভর করে যে মূল জায়গায় সংস্কারের ওপর, সেইখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাকাঠামো প্রায় অটুট রয়েছে। এর বহিরাবরণে নানান বদল এসেছে বটে, কখনো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, কখনো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, কখনো একনায়কতন্ত্র, কখনো জোট-মহাজোটের অন্তর্লীন কাঠামোটি প্রবলভাবেই আমলাতান্ত্রিক।

সুদক্ষ ও যোগ্য আমলা পৃথিবীর যেকোনো বন্দোবস্ত চালাতে অপরিহার্য। কিন্তু কখনো কখনো আমলাতন্ত্র নিজেই এমন একটি স্বয়ম্ভু অস্তিত্ব হয়ে দাঁড়ায়, যার পরিপোষণ এবং পুষ্টি সরবরাহই বাকি রাষ্ট্রের প্রধান কাজে পরিণত হয়। রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি যে কাঠামোর লক্ষ্য নয়; বরং রাষ্ট্রটা তার পোষক দেহ—এই ভয়ংকর নিয়তি আমাদের দেশটিরও হয়েছে।

দুই.

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ঔপনিবেশিক আমলে ভারতের রাজনৈতিক দল–বিষয়ক অভিসন্দর্ভে লিখেছিলেন ‘(ঔপনিবেশিক) ভারতের দলীয় ব্যবস্থা বিষয়ক একটা অনুসন্ধান (আদতে) নিজেকে এর অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে পর্যবসিত করে।’ এই অনুপস্থিতির কারণটি কী? অধ্যাপক রাজ্জাক বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়েই বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন—পরাধীন ভারতে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রই কার্যত শাসনের কাজটি করত।

মনে হবে যেন, এরই জের ধরে ১৯৭০–এর দশকের শুরুতে পাকিস্তানের প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী হামজা আলাভি দেখিয়েছেন, উপমহাদেশে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের মতো রাষ্ট্রের এই অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গগুলো স্থানীয় উৎপাদক চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে যেমন আদৌ গড়ে ওঠেনি, তেমনি শুরু থেকেই তারা রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বহুভাবে শক্তিশালী ছিল।

সংগত কারণেই, ব্রিটিশরা বিদায় নেওয়ার পরপর পাকিস্তানে এই আমলাতন্ত্রই প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো। হামজা আলাভি ১৯৭২ সালের একটি লেখায় পাকিস্তানের অভিজ্ঞতার একটা সারসংক্ষেপ করেছিলেন এই বলে যে ‘উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজগুলোতে সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্রকে ধ্রুপদি মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একক একটি শাসকশ্রেণির নিছক হাতিয়ার হিসেবে দেখার উপায় নেই। কেননা, পশ্চিমা সমাজগুলোতে স্থানীয় বুর্জোয়ারা জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছে, ক্ষমতায় তাদের অধিষ্ঠানের ফল হিসেবে আইন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাঠামো প্রদানের জন্য, যেগুলো উৎপাদনের একটি পুঁজিবাদী বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। উপনিবেশিত দেশগুলোতে এই প্রক্রিয়া তাৎপর্যপূর্ণভাবে আলাদা।’

আরও পড়ুনএকচেটিয়াত্বে আমলাতন্ত্র নিরপেক্ষ থাকতে পারে না০৭ জুলাই ২০২১

পাকিস্তানের ইতিহাস যাঁরা জানেন, ইস্কান্দার মির্জা ও আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণের আগে বেসামরিক আমলাতন্ত্রের এবং আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণের পর সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভুত্বের এই ব্যাখ্যা তাঁদের কাছে হয়তো জুতসই মনে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মধ্যেও এই ঘটনাপ্রবাহের ছাপ আছে; জন্মলগ্নেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংকটকে তিনি চিহ্নিত করছেন, ‘এরা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে শুরু করলেন ইংরেজ আমলের আমলাতন্ত্রের ওপর। আমলাতন্ত্রের কর্ণধাররা যা বলতেন, তা–ই শুনতেন।’

একই বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘খাজা নাজিমউদ্দিন সাহেব তাঁর মন্ত্রিত্বে একজন সরকারি আমলাকে গ্রহণ করলেন, তাঁর নাম চৌধুরী মোহামাদ আলী। তিনি পাকিস্তান সরকারের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তাঁকে অর্থমন্ত্রী করা হলো। এরপর আমলাতন্ত্রের প্রকাশ্য খেলা শুরু হলো পাকিস্তানের রাজনীতিতে। একজন সরকারি কর্মচারী হলেন গভর্নর জেনারেল, আরেকজন হলেন অর্থমন্ত্রী…আমলাতন্ত্রের জোটের কাছে রাজনীতিবিদরা পরাজিত হতে শুরু করল।’

আবুল মনসুর আহমেদও তাঁর জীবনস্মৃতিতে রাজনীতিবিদদের দুর্বলতাকেই আমলাতন্ত্রের প্রবল হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে দেখেছেন।

তিন.

সামরিক আমলাতন্ত্র ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের মধ্যে সামান্য টানাপোড়েন সত্ত্বেও তাদের পারস্পরিক পরিপূরক সম্পর্কের সোজাসুজি স্বীকৃতি মিলবে আলতাফ গওহর লিখিত আইয়ুব খানের জীবনীতে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, (লিয়াকত আলীর মৃত্যুর পর) ‘সরকারের ওপর রাজনীতিবিদেরা তাঁদের কর্তৃত্ব হারালেন এবং রাষ্ট্রের কাজকর্ম সবই একদল বেসামরিক আমলার হাতে চলে এল।’

এরপর সংবিধান স্থগিত করা হলো, ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করলেন, অচিরেই বেসামরিক আমলাদেরও ঠেলে সত্যিকারের শাসকেরা ক্ষমতায় চলে এলেন; কেননা, ‘ইস্কান্দার মির্জা শাসনতন্ত্র স্থগিত করতে পারলেও সামরিক বাহিনীর সম্মতি ব্যতীত সামরিক শাসন স্থগিত করার ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। সামরিক আদেশগুলো এবার নিজেই নিজের আইনের উৎসে পরিণত হলো আর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হলেন আইনদাতায়। সামরিক বাহিনী তিন সপ্তাহের বেশি মির্জার উপস্থিতি সহ্য করেনি।’

আরও পড়ুনআমলাতন্ত্র ও রাজনীতির পুরোনো ধারাই শক্তিশালী হয়েছে১৩ জুলাই ২০২৫

আইয়ুব খান ক্ষমতায় এলেন। এর মধ্য দিয়ে বেসামরিক আমলাতন্ত্র সহকারীর ভূমিকায় চলে গেল। কিছু দ্বন্দ্ব–বিরোধ সত্ত্বেও পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়েই এই সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের জুটি রাষ্ট্রটিকে পরিচালনা করেছে। এই মিত্রতার সংগত কারণ ছিল রাজনৈতিক দলগুলো। এই প্রসঙ্গে আলতাফ গওহরের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, ‘শাসক জান্তাটির অভ্যন্তরীণ বিবাদ আর টানাপোড়েন যা–ই থাকুক, একটা বিষয়ে তাঁরা একমত ছিলেন, দেশটাকে কিছুতেই একটা সাধারণ নির্বাচনের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।’

সাধারণ নির্বাচন ঝুঁকি কেন? বিষয়টাকে সারসংক্ষেপে বোঝা যাবে উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানে পাকিস্তানের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা তারিক আলী একটা বক্তৃতায় যা বলেছিলেন, একভাবে সারসংক্ষেপ করলে এভাবে বলা যায়, ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের প্রথম অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে না দেওয়ার যে তাড়না আমলাতন্ত্রের মাথায় চাড়া দিয়ে উঠছিল, সেটাই ছিল পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবরের অভ্যুত্থানের প্রধান কারণ। আশু একটা নির্বাচনের সম্ভাবনা জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছিল, আর এর ফলে বিরোধী দলের নেতারা বিপ্লবাত্মক সব সংস্কারের অঙ্গীকার করতে প্ররোচিত হচ্ছিলেন। জনমতের এই প্রকাশগুলোকে কিছুটা ছাড় দিতেই হতো পাকিস্তানের নির্বাচিত যেকোনো সরকারকে, একই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের প্রভাব মোকাবিলায় এবং সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ আরোপেও একটা নির্বাচিত সরকার হতো অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী।

আরও পড়ুনজনপ্রশাসন ঠিক হোক, তা ভেতরের লোকজনই চায় কি২৬ ডিসেম্বর ২০২৪চার.

এটা সত্যি কথা যে পাকিস্তান আমলে শুরুতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি ও দুর্বল দশা যতটা ছিল, বাংলাদেশে বিষয়টা হুবহু তেমন নয়। এমনকি দেশীয় একটা বণিক ও শিল্পপতি শ্রেণিও এই দেশে বিকশিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা আজও রয়ে গেছে—এই রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রের তুলনায় শ্রেণি হিসেবে দেশীয় উৎপাদক গোষ্ঠী সামষ্টিকভাবে কতটুকু শক্তিশালী?

প্রশ্নটাকে অন্যভাবেও বলা যায়, ব্যবসা, শিল্প, কর নির্ধারণ—এমনকি দুর্নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কে কার মুখাপেক্ষী? রেহমান সোবহান তাঁর আত্মজীবনীতে ষাটের দশকে ছোটখাটো আমলাদের হাতেও চামড়া ব্যবসায়ী হিসেবে হেনস্তা হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। আজও কি প্রায় অনুরূপ ঘটনা আমরা দেশে দেখতে পাই না?

নানান অভিজ্ঞতায় প্রায়ই মনে হয়, রাষ্ট্রের যেকোনো সংস্কারের প্রশ্নে হামজা আলাভির বক্তব্য এখনো অনেকটাই প্রাসঙ্গিক রয়েছে। পুঁজিবাদী রূপান্তর সম্পন্ন হয়েছে, এমন যেকোনো রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠানমাত্র, জরুরি; কিন্তু সিদ্ধান্তদাতা বা নিয়ন্ত্রক নয়। রাজনৈতিক দলগুলো হলো সমাজের শ্রেণিগুলোর প্রতিনিধি, সাধারণভাবে আমলাতন্ত্রের কাজ বিজয়ী দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গোটা উৎপাদক শ্রেণিটি কি আমলাতন্ত্র নামের একটা প্রায় স্বয়ম্ভু এবং আত্মপর সত্তার সঙ্গে বোঝাপড়া করে টিকে থাকা একটা গোষ্ঠী নয়?

আরও পড়ুনজনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কেন জরুরি২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান আমলাতন্ত্রের দেয়ালের ঠিক সামনে এসে ফেরত গেছে। কিন্তু পুরোনো বন্দোবস্ত যে শেষ পর্যন্ত টিকবে না, সেই বার্তাও শত ব্যর্থতাও সত্ত্বেও এই অভ্যুত্থানেই পরিষ্কার। কেননা, বাইরের খোলস সরিয়ে ভেতরে তাকালেই আমরা দেখতে পাব, বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক কাঠামোটি আর জনগোষ্ঠীর আবেগ–অনুভূতি–প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারছে না।

আমলাতন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুঁজির সম্পর্ক এবং যোগসাজশও প্রায়ই তাৎপর্যপূর্ণ। একটা সহজ উদাহরণ দেখানো যেতে পারে। কিছুকাল আগে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি অনুযায়ী দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের ১১ ভাগ রাখা হয়েছে আমলাদের প্রশিক্ষণের জন্য, আরও প্রায় ১৩ ভাগ রাখা হয়েছে পরামর্শকদের জন্য। এই ঋণের বাকি অর্থও কিন্তু দেশে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সফটওয়্যার খাতের বিকাশের জন্য নয়; বরং সরকারি নানান দপ্তরের জন্য বহুগুণ বেশি দামে সফটওয়্যার আমদানির জন্য। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের অনুমান, এতে সামনের দশকজুড়ে সফটওয়্যার খাতে দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান কয়েক হাজার হ্রাস পাবে। অথচ বিরাট একটা দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞান এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আছে।

বিষয়টাকে বড় চিত্রে বোঝা যাবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের পটভূমি পড়লে: গত ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জানি, এই প্রশিক্ষণের ব্যয়ের একটা বড় অংশ প্রধানত বহুগুণ বেশি মূল্যে কিংবা একদমই অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পণ্য ও সেবা গছিয়ে দেওয়াকে সহজতর করার উপায়; অর্থাৎ ঘুষ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।

প্রশিক্ষণ জরুরি, কিন্তু এই প্রশিক্ষণ পাওনা ছিল বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও গবেষকদের; যাঁরা ওই প্রশিক্ষণকে আজীবন ধরে ব্যবহার ও নতুনদের—এমনকি আমলাদেরও প্রশিক্ষিত করতে পারতেন। দপ্তর থেকে দপ্তরে ভ্রাম্যমাণ আমলা নয়; বরং কৃষি বা শিল্পোৎপাদন কিংবা ময়লা নিষ্কাশনে স্থায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল।

আমলাতন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুঁজির এই গাঁটছড়াকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? এখানে উদ্যোক্তা শিল্পপতির ভাগ্য নির্ধারণ করছেন আমলা, আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সীমা নির্ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছে না উদ্যোক্তার স্বার্থ। রাষ্ট্রের সম্পদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কোনো উৎপাদক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সরকার নিচ্ছে না, সব সিদ্ধান্তের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা দেশের আমলা সম্প্রদায়।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যেন শিক্ষা, শিল্প, কৃষিসহ যেকোনো খাতে আমলাতান্ত্রিকতার এই বিপর্যয়ের একটা গোরস্তান। একেকজন উৎপাদক যে বিপুল শ্রম ও অধ্যবসায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তুলছেন, কিংবা সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম—এই সবকিছুর লক্ষ্য যেন একটি বিপুল আমলাতন্ত্রের জন্য পুষ্টির জোগান দেওয়া।

পাঁচ.

জুলাইয়ের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের কোনো মৌলিক কাঠামোগত রূপান্তরে সক্ষম হয়নি, এ কথা অনেকেই বলছেন। এবারের গণ–অভ্যুত্থানের বহু সংগঠকের মধ্যে এবং গণ–অভ্যুত্থানের পরিণামে উপদেষ্টা হওয়া অধিকাংশের মধ্যে আমলাতন্ত্র বিষয়ে কোনো উপলব্ধি, এর রূপান্তর বা সংস্কার বিষয়ে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি অথবা সাহসী উদ্যোগেরও হয়তো ঘাটতি ছিল।

কিন্তু আকারবিহীন জনসাধারণের মতো বিস্মৃতিপ্রবণ নয় আমলাতন্ত্র। তাদের রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি; তাই দেখা যাবে, একদম শুরুতেই আমলাতন্ত্রের ভেতরের লোকদের নিয়েই গঠিত হয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাঁরা এলেন, তাঁদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে বশীভূত করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকল করে দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার আমলাতান্ত্রিক চরিত্র সম্পূর্ণ বহাল রাখতে পেরেছে। বরং এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই প্রায় চুপিসারে তারা স্থানীয় সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব আরও এক ধাপ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান আমলাতন্ত্রের দেয়ালের ঠিক সামনে এসে ফেরত গেছে। কিন্তু পুরোনো বন্দোবস্ত যে শেষ পর্যন্ত টিকবে না, সেই বার্তাও শত ব্যর্থতাও সত্ত্বেও এই অভ্যুত্থানেই পরিষ্কার। কেননা, বাইরের খোলস সরিয়ে ভেতরে তাকালেই আমরা দেখতে পাব, বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক কাঠামোটি আর জনগোষ্ঠীর আবেগ–অনুভূতি–প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারছে না।

ইতিহাসে কখনো কখনো এ রকম ঘটে। বুদ্ধিমান শাসকেরা তখন আমলাতন্ত্রের সংস্কার করেন; তার অন্যথা হলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য তাই হয়তো জনতার নতুন নতুন আন্দোলন–অভ্যুত্থানের ঢেউয়ের জন্ম হতে থাকে।

ফিরোজ আহমেদ লেখক ও রাজনৈতিক সংগঠক

[email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ