‘সংস্কার, বিচার ও নতুন সংবিধানের জন্য আবারও মাঠে নামতে হবে’
Published: 12th, July 2025 GMT
সংস্কার, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার এবং নতুন সংবিধানের জন্য আবারও মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থান এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। জুলাই আন্দোলন কেবল নতুন বাংলাদেশের শুরু। মানবাধিকার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতা মাঠে রয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, মাঠ থেকে আমাদের সরানো যাবে না।”
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আয়োজিত পথ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এনসিপি’র খুলনা জেলা শাখা এ পথ সভার আয়োজন করে। দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার ১১ তম দিন ও ২৪ তম জেলা হিসেবে শুক্রবার খুলনা সফর করেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
নাহিদ ইসলাম গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, “যখন অভ্যুত্থানের এক বছর পার করছি, ঠিক তখনই ঢাকায় প্রকাশ্যে পাথর মেরে বিভৎস্যভাবে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। এ দৃশ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদের লগি-বৈঠার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। গণঅভ্যুত্থানের পরও এমন ঘটনা দেখতে হচ্ছে, যা কষ্টের ও দুঃখের।”
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছিলাম, ফ্যাসিবাদ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও মাফিয়া তৈরি ব্যবস্থার পরিবর্তন করে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র করে সেটি বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্ট থেকেই ছাত্র-জনতার মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে থাকলেও নতুন বন্দোবস্তের পক্ষে নেই। তারা লুটপাট, দুর্নীতি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছেন বলে মনে করছেন। তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। এখনও একটি দল তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এনসিপি চাঁদাবাজদের হাত থেকে ব্যবসায়ীদের রক্ষা করবে।”
নাহিদ ইসলাম আওয়ামী আমলে খুলনার পাটকলসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয় উল্লেখ করে বলেন, “বন্ধকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু করতে হবে। একই সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সুন্দরবন ধংসের অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।”
জুলাই শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “শহীদ ও আহতরা এমনি এমনি রক্ত দেয়নি। তারা ফ্যাসিবাদ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও লুটপাট থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে চাঁদাবাজদের উত্থান শহীদদের পরিবার দেখতে চায় না। আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় এনসিপির পক্ষ থেকে জনগণের মুক্তির ইস্তেহার পাঠ করা হবে।”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘‘আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে রাজনীতিতে আসিনি, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য এসেছি। আমাদের হারানোর কিছু নেই, সবই আছে আমাদের। সংস্কার, বিচার এবং সংবিধান পরিবর্তনে জনতার যে জোয়ার শুরু হয়েছে, তা রুখে দেওয়া যাবে না।”
তিনি বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবায় কাজ করবে, ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না। এদেশকে এমনভাবে গড়তে হবে যেখানে সাম্য, মানবাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা থাকবে। এজন্য আগে মানুষদের গড়তে হবে।”
তিনি বিচার ও সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। হাসিনার আমলেও একাধিক নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি। গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করতে হলে অবশ্যই সংস্কার বাস্তবায়ন করে নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নব্য খুনিদের বিচার করতে হবে।”
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “যারা সংস্কার পিছিয়ে দিতে চায়, তারা মুজিববাদের নতুন ঠিকাদার। তারা তরুণ প্রজন্মের ভাষা বুঝতে পারছেন না। এ কারণে দেশে চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। তাদের ভাষা এমন, ‘আমি চুরি করতে থাকবো বাসার চাবি আমাদের হাতে তুলে দিন’। এ অবস্থায় তরুণ প্রজন্মকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা কাদের হাতে দেশকে তুলে দেবেন।”
তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদেশ্য করে তরুণ প্রজন্মের ভাষা বোঝার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা রাজনীতির ধারা পরিবর্তন করব। এজন্য চাঁদা নয়, মানুষের ভালোবাসা প্রয়োজন।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের জন্য কারও দরজা খোলা রাখার দরকার নেই। যারা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল কিছুদিন পর তাদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী বানানোর প্রস্তুতি চলছে। এ কারণেই জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করতে হবে। জুলাই যোদ্ধাদের মা-বোনদের সজাগ থাকতে হবে। খুনি হাসিনার বিচার করতে হবে। এজন্য ছাত্র-জনতাকে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে হুদার ইতিহাস থেকে, পুলিশকে বেনজিরের ইতিহাস থেকে, সংস্কৃতি কর্মীদের মমতাজের ইতিহাস থেকে এবং সাংবাদিকদের মাফিয়াদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান।
পথ সভায় দলের যুগ্ম সমন্নয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘বড় বড় শিল্পপতিরা হাসিনার সামনে উপস্থিত হয়ে দালালী করেছে, তারা এখন জেলখানায়। নতুন করে যেসব ব্যবসায়ী নব্য স্বৈরাচারের পাহারাদারের সাথে আঁতাত করেছেন, তাদেরও বিচার হবে। নব্য চাঁদাবাজরা যত বড় দলই হোকনা কেন জনস্রোতের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।”
তিনি নির্বাচন কমিশনকে উদেশ্য করে বলেন, “দেশে নতুন হুদার আবিষ্কার হয়েছে। তারা চাঁদাবাজদের পাহারাদার হয়েছেন। লন্ডন থেকে বার্তা নিয়ে সেটি প্রচার করছেন। এভাবে চললে জুলাই যোদ্ধারা বসে থাকবে না।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চালনায় পথ সভায় বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানজিম মাহমুদ, যুগ্ম সদস্য সচিব লুবনা তাবাচ্ছুম, যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক, তাসনিম জারা, শামান্তা শারসিন, মোল্লা রহমতুল্লাহ, মেজবাহ কামাল মুন্না ও নাহিদুজ্জামানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সভার মঞ্চে জুলাই শহীদ সাকিব, রায়হান, ইয়াসিন আরাফাত, নূরনবী, আব্দুল হামিদ ও রাজিবুলের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পথ সভা শেষে রাত ৯টার দিকে শিববাড়ি মোড় থেকে জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়ে খালিশপুর, পিপলস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে বিকেল থেকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে উপস্থিত হন ছাত্র-জনতা ও এনসিপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এসময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমাদের ধমনিতে লাখ শহীদের রক্ত’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’সহ নানা শ্লোগানে মুখরিত হয় শিববাড়ি মোড়।
এসময় মঞ্চে স্থানীয় সংগঠক এস এম আরিফুর রহমান মিঠু, জেলা শাখার প্রধান সমন্নয়ক মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ, নগর সংগঠক আহমদ হামিম রাহাত, ডা.
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন র আহ ব ন জ ন ন হ দ ইসল ম ছ ত র জনত ষড়যন ত র ব যবস য় উপস থ ত এনস প র আম দ র র জন য শ বব ড় স গঠক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’
নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।