শেওড়াপাড়ায় বহুতল ভবনের আগুন নিভেছে
Published: 22nd, July 2025 GMT
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় নূর জাহান গার্ডেন নামের বহুতল আবাসিক ভবনের আগুন নিভেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে শামীম সরণির ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। আগুনে চারতলা ভবনের চতুর্থ তলা পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ভবনটির বাসিন্দা কিশোর জাওয়াদ ওমর প্রথম আলোকে বলে, ‘পাশের মাঠে খেলার সময় আমি আগুন দেখতে পাই। এরপর বাসায় এসে মা-বাবাকে নিয়ে নিরাপদে নিচে নামি। কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সোফা ও কিছু জিনিসপত্র পুড়েছে৷’
রায়হান হোসেন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি কালো ধোঁয়া ও শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
মিরপুর ১০ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬টা ১৪ মিনিটে আমরা খবর পাই। তিনটি ইউনিট কাজ করে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ৭টা ২০ মিনিটে পুরোপুরি আগুন নিভিয়ে ফেলি।’
ভবনটির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাড়িটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আরও পড়ুনরাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বহুতল ভবনে আগুন২ ঘণ্টা আগেমিরপুর মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নিরঞ্জন কুমার প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ দিলে আবারও শর্টসার্কিট বা কোনো বিপদের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই তাঁরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগ ন ন ভ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে চট্টগ্রামের ‘হাতির বাংলো’–এর কথা এখন সারা দেশের মানুষ কমবেশি জানেন। ইউটিউবে ‘হাতির বাংলো’ লিখে সার্চ দিলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। ভ্রমণবিষয়ক ভ্লগার আর কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে এটি এখন রীতিমতো ট্রেন্ড। এর মধ্যেই ভবনটি যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানের তালিকায়। কিন্তু শতবর্ষী এই স্থাপনা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী? এর উত্তর পাওয়া গেল হাতির বাংলোর সম্মুখ দর্শনের পর।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির বিপরীতে রেলওয়ের ছোট টিলা ধরে উঠতেই চোখে পড়ল ভবনটি। কাউকে চিনিয়ে দিতে হলো না। একটা আস্ত হাতির মাথা যেন কেউ বসিয়ে দিয়েছেন। বোঝা গেল লোকমুখে এমন নামকরণের কারণও। এমন একটি ভবন নিয়ে মাতামাতি না হওয়াটাই তো অস্বাভাবিক।
যাঁরা জে আর আর টলকিয়েনের ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই হবিটদের কথা মনে আছে। খর্বকায় হবিটদের বাড়ির মতোই অনেকটা রূপকথার আদল আছে এতে। আর পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে এশিয়ান হাতির আকৃতি। রূপকথার আবেশে মিশেছে প্রকৃতির মূর্ত প্রতিকৃতি। সব মিলিয়ে ভবনটি অনন্য। ডুপ্লেক্স এই বাড়ি নিয়ে মানুষের কৌতূহল দীর্ঘদিনের। প্রতিদিনই বাংলোটি দেখতে আসেন অনেকেই। ছবি ও ভিডিও তুলে রাখেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুক, ইউটিউবে তা ছড়িয়েও দেন। এভাবে হাতির বাংলো নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল বেড়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার আর সিআরবির মাঝের পাহাড়ে অবস্থিত রেলওয়ের হাতির বাংলো। যেতে হয় নগরের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও লেডিস ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে।
এই বাংলো ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই রেলওয়ের কাছে। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৮৯৮ সালের দিকে এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে। ওই সময় চট্টগ্রামে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। তখন নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের থাকার জন্য এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে।
ব্যতিক্রমী স্থাপত্য
এখন যেমন পাহাড় কেটে, গাছপাল কেটে ভবন নির্মাণ করা হয়, হাতির বাংলো নির্মাণে তার কিছুই হয়নি। চারপাশের সৌন্দর্যকে এতটুকুও ব্যাহত করা হয়নি, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে এই স্থাপনা।
পাহাড়ি এলাকায় পিচঢালা সড়কের পাশে খোলা প্রাঙ্গণ। তা পেরিয়ে হাতির বাংলো। হাতির বাংলোর প্রবেশফটকে রয়েছে হাতির মুখ, শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে। শুঁড় যেমন ঢেউয়ের মতো, ঠিক তেমনই ডুপ্লেক্স বাড়ির ওপরের অংশটিও। এর খোলা অংশটি দোতলার ব্যালকনি। এরপর রয়েছে বড় একটি কক্ষ, যা প্রায় হলরুমের সমান। কেউ থাকেন না এই কক্ষে। সামনে, পেছনে ও পাশে ছোট-বড় আটটি জানালা রয়েছে। বাংলোর নিচতলায় দুটি আলাদা বড় কক্ষ।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ডেপুটি চেয়ারম্যান আদর ইউসুফ জানান, বাংলোটি নির্মিত হয়েছে হাতির আদলে, যা দেশের স্থাপত্য ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। বাহ্যিক কাঠামোটি ত্রিমাত্রিকভাবে হাতির মতোই—মাথা, শুঁড়, কানের পরিণত অংশ, শরীরের বর্ধিত কায়া ইত্যাদি রূপে গঠিত। ভবনটির মূল কাঠামো নির্মিত হয়েছে ইট ও পাথরের গাঁথুনির ওপর। তবে এর হাতির রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে ফেরো সিমেন্ট, যা উনিশ শতকে উন্নত নির্মাণপ্রযুক্তির নির্দেশক। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কাঠ ব্যবহার করে নির্মিত দরজা ও জানালাগুলোতে কারিগরি দক্ষতার পরিচয় রয়েছে। প্রচলিত ঔপনিবেশিক বাংলোর গঠন থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। স্থাপত্যশৈলীতে কোনো সুপরিকল্পিত আদর্শ অনুসরণ না করলেও একে ঘিরে আছে একধরনের আভিজাত্য ও প্রকৌশলগত সৃজনশীলতা।
এক সময় ডুপ্লেক্স এই ভবনটিতে থাকতেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। সস্প্রতি তোলা