কল্যাণ ভাতার চেক পেয়ে খুশি পাঁচ যুগ ধরে বাঁশি বাজানো আবদুল্লাহ
Published: 23rd, July 2025 GMT
বিখ্যাত শিল্পীদের গানের সুর বাঁশিতে তুলে পার করেছেন পাঁচ যুগ। ফোকলা দাঁতের ফাঁকে ফুঁ দিয়ে বাঁশিতে তোলেন সুরের মূর্ছনা। সুরে মুগ্ধ শ্রোতাদের বাহবা, করতালি আর শুভেচ্ছা উপহারে ধন্য হয়েছেন অসংখ্যবার। এবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কল্যাণ ভাতা হিসেবে ৩৬ হাজার টাকার নগদ চেক দেওয়া হয়েছে বংশীবাদক মো.
বুধবার বেলা ১১টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংস্কৃতিসেবীদের মাসিক কল্যাণ ভাতার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বংশীবাদক আবদুল্লাহর হাতে চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আনোয়ার হোসেন।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে ‘৬০ বছর ধরে বাঁশি বাজান আবদুল্লাহ, পূরণ হয়নি বেতার-টিভিতে বাজানোর স্বপ্ন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন প্রতিবেদনটি দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে বংশীবাদক আবদুল্লাহকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংস্কৃতিসেবী হিসেবে কল্যাণ ভাতার জন্য মনোনীত করে জেলা প্রশাসনের যাচাই-বাছাই কমিটি।
বংশীবাদক আবদুল্লাহর বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য জায়গায় সংগীতপ্রেমীদের বাঁশির সুর শুনিয়েছেন। বিভিন্ন যাত্রানুষ্ঠান, পালাগান, কীর্তন, বাউলসংগীত ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শাস্ত্রীয় সংগীতসহ সব ধরনের গানের সুর বাঁশিতে তোলার কলাকৌশল রপ্ত করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে ভারত-বাংলাদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে পাঁচ শতাধিক বংশীপ্রেমীকে বাঁশি বাজানো শিখিয়েছেন এই বংশীবাদক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে বড় হওয়া আবদুল্লাহ ভাতের জন্য মাঠে রাখালের কাজ করতেন। একই মাঠে গরু চরানোর কাজ করতেন তাঁর গ্রামের রাখাল গোপাল রায়। তিনি খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতেন। তাঁর বাঁশির সুর শুনতেন আবদুল্লাহ। বাঁশির সুর শুনে তাঁর মনের মধ্যে অন্য রকম সুর খেলা করত। একদিন ওই রাখালের হাত থেকে বাঁশিটি নিজের হাতে তুলে নেন আবদুল্লাহ। বাঁশিতে চেনা সুর আবিষ্কার করেন। পরে বাজার থেকে বাঁশি কিনে তিনি গোপাল রায়ের কাছে বাঁশি বাজানো শেখেন। সেই থেকে আবদুল্লাহর বাঁশির সুর আর থামেনি।
বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি তিনি নিজের হাতে তৈরি করা বাঁশি স্থানীয় বিভিন্ন মেলাতে বিক্রি করেন। সংগীতপ্রেমীদের কাছে তিনি নামমাত্র মূল্যে বাঁশি বিক্রি করেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মেলাতে বাঁশি বাজান। জীবিকার সন্ধানে কাঁধে বাঁশিভর্তি ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন পথের পর পথ পাড়ি দেন ৭৩ বছর বয়সী আবদুল্লাহ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বংশীবাদক আবদুল্লাহ অত্যন্ত গুণী একজন শিল্পী। এমন গুণী শিল্পীকে তো টাকা বা চেক দিয়ে সম্মানিত করা যায় না। সরকারের পক্ষ থেকে কল্যাণ ভাতা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে চেকটি দিতে পেরে জেলা প্রশাসনও গর্বিত। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বংশীবাদক আবদুল্লাহ বাঁশি বাজিয়ে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। ভবিষ্যতে বংশীবাদক আবদুল্লাহর পাশে সব সময়ই থাকবে জেলা প্রশাসন।
বংশীবাদক আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ দিনাজপুর ডিসি অফিসে আমাকে যেভাবে সম্মান করা হয়েছে, তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। ডিসি স্যারের কাছ থেকে চেক নিয়েছি, অন্য রকম ভালো লেগেছে। এখন শুধু বেতার ও টিভিতে বাঁশি বাজাতে চাই। বেঁচে থাকা অবস্থায় সরকারের কাছে এই সুযোগ চাই। আশা করি কর্তৃপক্ষ আমার এই স্বপ্নও পূরণ করবে।’
আরও পড়ুন৬০ বছর ধরে বাঁশি বাজান আবদুল্লাহ, পূরণ হয়নি বেতার-টিভিতে বাজানোর স্বপ্ন১৩ ডিসেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আবদ ল ল হ কল য ণ ভ ত অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ