কর্মক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক নিয়ে জারি করা সার্কুলারকে ‘পরামর্শমূলক’ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলছে, এই সার্কুলারের মাধ্যমে অতিশয় কারুকার্যপূর্ণ পোশাককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে অফিসে কারও পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা খর্ব হবে না।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৫১ মিনিটে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল রাত ১০টা ২ মিনিটে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ এ নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। পরিহার করতে বলা হয়েছে জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এ বিষয়ে গতকাল দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবৃতি দিল।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত বিভিন্ন বয়সী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বয়সের পার্থক্যজনিত কারণে পুরুষ ও নারী উভয় সহকর্মীদের মধ্যে পোশাকের বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। পোশাকের ধরনের নানা পার্থক্য হেতু নারী-নারী ও পুরুষ-পুরুষ সহকর্মীদের মধ্যে মানসিক বৈষম্য দূর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া (বন্ডিং) আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে অফিসে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আলোচ্য সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, এটা একটি পরামর্শমূলক সার্কুলার। নারী সহকর্মীদের বোরকা ও হিজাব পরিধানের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা বা নির্দেশনা আরোপ করা হয়নি।

এই সার্কুলারের মাধ্যমে অতিশয় কারুকার্যপূর্ণ পোশাককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আশা করি এই সার্কুলারের মাধ্যমে অফিসে কারও পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা খর্ব হবে না।’

আরও পড়ুননারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ধ ন র ক ষ ত র কর মকর ত কর ম দ র প শ ক পর

এছাড়াও পড়ুন:

দুই ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না’ বাবা

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন রাজশাহীর বাসিন্দা। সম্পর্কে তাঁরা ভাই। বড় ভাই সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব—দুজনেই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

তাঁদের বাবা এস এম কবিরুজ্জামান পেশায় একজন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। দুই ছেলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলছেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।

এস এম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ১১ ঘণ্টা আগে

পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফিলিং স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন কবিরুজ্জামান। যার মধ্যে বেশির ভাগ দেন বাড়িভাড়া। আগে দুই ছেলে টিউশন করে খরচ চালাতেন, তবে কয়েক মাস হলো তা ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও আর টাকা পাঠাতে হয় না তাঁদের।

আজ সোমবার বিকেল চারটায় ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কবিরুজ্জামান নিজেই গাড়িতে গ্যাস দিচ্ছেন। সেখানেই বলেন, ‘আমার আয় খুব কম। বাসাভাড়ায় প্রায় সবটাই চলে যায়। ছেলেদের পড়াশোনায় মাসে ২০ হাজার টাকার মতো লাগে। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে, সেটা দিয়ে চলি।’

কবিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুই ছেলে আগে টিউশনি করত। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে শুনেছি। রোববার সকালে জানলাম, তারা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। ওদের জীবনধারা আলাদা—দাড়ি রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
ফিলিং স্টেশনের কয়েকজন সহকর্মীও নিশ্চিত করেছেন, কবিরুজ্জামানের রাজশাহীতে কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নেই। তাঁর ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে তাঁরাও বিস্মিত।

আরও পড়ুনআদালতে রাজ্জাকদের প্রতি দুয়োধ্বনি, ‘তোরা জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস...’২১ ঘণ্টা আগে

চাঁদাবাজির অভিযোগে গত শনিবার রাতে গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর সংগঠন থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। অন্য দুজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তাঁদেরও নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান আবদুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ। ফেসবুকেও তাঁর সঙ্গে তাঁদের চলাফেরার একাধিক ছবি রয়েছে।

সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা শুনে আমি হতবাক।’

আরও পড়ুনঅনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ উঠছে ভবন, এলাকায় নানা আলোচনা২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না’ বাবা