যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম রেকর্ড বেড়েছে, কারণ কী
Published: 26th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দামে রেকর্ড হয়েছে। সাধারণত বারবিকিউ মৌসুম উপলক্ষে বছরের এ সময় দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তবে চলতি বছর রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দামে এমন ঊর্ধ্বগতি থেকে ক্রেতারা খুব শিগগির রেহাই পাচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এক পাউন্ড (প্রায় আধা কেজি) গরুর মাংসের কিমার গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৬ ডলার ১২ সেন্টে। বছরের ব্যবধানে এ দাম প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে সব ধরনের রান্না না করা মাংসের বড় টুকরার (বিফ স্টেক) গড় দাম বেড়ে হয়েছে পাউন্ডপ্রতি ১১ ডলার ৪৯ সেন্ট। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ।
তবে এ মূল্যবৃদ্ধি নতুন নয়। ২০ বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কারণ, মাংসের চাহিদা বেশি থাকলেও গরুর সরবরাহ কমতির দিকে।
এমনকি কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। দেশটির কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৬৭ লাখ। এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ কম ও ১৯৫১ সালের পর সর্বনিম্ন।
এই বেশি দাম অনেক খামারিকে এখনই গরু বিক্রি করে বেশি মুনাফা তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রজননের উদ্দেশ্যে তাঁরা গরুগুলো না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন। টেক্সাস এঅ্যান্ডএমের ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, ভবিষ্যতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেকেই এখন গরু বিক্রির দিকেই ঝুঁকছেন।খরা, গরুর মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে গবাদিপশুর সংখ্যা কমে গেছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মেক্সিকোতে একটি পরজীবীর বিস্তার ও ব্যাপক শুল্ক আরোপের আশঙ্কা। আর এসব কারণে গরুর মাংসের সরবরাহ আরও কমতে ও দাম আরও বাড়তে পারে।
গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাসটেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় আকৃতির গরু উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়লেও ২০২০ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ খরার কারণে পশু খাবারের দাম বেড়েছে। এর পর থেকে পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে খরা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই স্বল্প লাভে পরিচালিত খামারগুলো চাপে পড়ে যায়। ফলে অনেক খামারি তাঁদের প্রজননক্ষম গরু জবাই করে দেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে গরুর মাংসের জোগান বাড়লেও গরুর সংখ্যা কমে যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দাম আকাশচুম্বী। এখন একেকটি গরু বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার ডলারে। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, একেকটি গরু ১০০ পাউন্ড (প্রায় ৪৫ কেজি) ২৩০ ডলারের বেশি দাম ধরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে দাম বাড়লেও ক্রেতাদের মধ্যে এখনো মুরগি বা শূকরের মাংসের মতো বিকল্প পণ্য কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। স্টেক হোক বা কিমা—ভোক্তারা এখনো গরুর মাংসই বেশি কিনছেন।এমন বেশি দাম অনেক খামারিকে এখনই গরু বিক্রি করে বেশি মুনাফা তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রজননের উদ্দেশ্যে তাঁরা গরুগুলো না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন। টেক্সাস এঅ্যান্ডএমের ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, ভবিষ্যতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেকেই এখন গরু বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন।
রোগের ব্যাপকতামেক্সিকোর গবাদিপশুর পালে একটি মাংসাশী পরজীবীর আবির্ভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংস সরবরাহ আরও চাপে পড়েছে। এ ঝুঁকির কারণে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রে জবাই হওয়া ৪ শতাংশ গরুই আসে মেক্সিকো থেকে। ওই পরজীবী টেক্সাসে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র বছর র আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’