রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত শফিকুল ইসলাম নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ মাস ২০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার (২৫ জুলাই) তিনি মারা যান। 

শফিকুল হত্যার বিচার দাবিতে তার মরদেহ নিয়ে শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রংপুর শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও সহকর্মীরা। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নিহত শফিকুল উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি সাহপাড় এলাকার মৃত আফসার আলীর ছেলে। 

আরো পড়ুন:

লোহাগড়ায় সাপের কামড়ে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৩, হাসপাতালে ভর্তি ৩৩১

আরো পড়ুন: রংপুরে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গত ৫ এপ্রিল বদরগঞ্জ পৌর শহরে দোকান ভাড়াকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ হয় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও বদরগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান মানিক মিয়া এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর গ্রুপের মধ্যে। সংঘর্ষ  চলাকালে মানিক মিয়ার অনুসারীদের আঘাতে ওই দিন মারা যান বিএনপি কর্মী লাভলু মিয়া। আহত হন ১০-১৫ জন।

আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ৩ মাস ২০ দিন থাকার পর গতকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে শফিকুলের মৃত্যু হয়।

শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে শহীদ মিনারে যান শফিকুলের স্বজনরা। তারা দাবি করেন, শফিকুল সহজ-সরল ও নিবেদিত প্রাণ বিএনপি কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই ইউপি চেয়ারম্যান মানিক মিয়ার গ্রুপ সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাকে আঘাত করে হত্যা করেছে। 

তারা অভিযোগ করেন, থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ এখনো কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেনি।

আরো পড়ুন: রংপুরে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৫ 

শফিকুলের সন্তান মুরাদ বাবু ও মেয়ে ইতি বানু জানান, দোকান ভাড়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া আধিপত্যের লড়াইয়ে তাদের বাবাকে টার্গেট করে আঘাত করা হয়। সেই আঘাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার তাদের বাবা মারা যান। তারা দ্রুত পিতা হত্যার বিচার চান। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মানিক মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

শহীদ মিনারে শফিকুলের স্বজনদের সঙ্গে বিক্ষোভে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন,  “মানিক মিয়া বিএনপির সঙ্গে জড়িত নন। ২০ বছর আগে পদ হারানোর পরও দলের নাম ব্যবহার করে তিনি ক্ষমতা বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠেন।” 

তিনি জানান, গত ৫ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মহড়া দেয় মানিক মিয়ার বাহিনী। পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তার কিছু কর্মী হামলার শিকার হন। সংঘর্ষে নিহত হন বিএনপি কর্মী লাভলু মিয়া, গুরুতর আহত হন শফিকুল। তিনি মারা যান গতকাল শুক্রবার। তিনি শফিকুল হত্যার বিচার দাবি করেন 

বদরগঞ্জ থানার ওসি জানান, ৫ এপ্রিলের সংঘর্ষে আহত শফিকুল ইসলাম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এর আগে শফিকুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। 

তিনি জানান, মারা যাওয়া শফিকুলের পরিবার ও স্বজনরা আজ শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ অভ য গ বদরগঞ জ শ ক রব র ব এনপ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল। 

আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’ 

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’ 

আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’ 

নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে। 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঢাকা/মাসুম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা