আগামী ১ আগস্টের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গেল। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আর ৩০ শতাংশ নয়, বরং ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করতে হবে।

এ নিয়ে মোট ছয়টি দেশের সঙ্গে কাঠামোগতগত চুক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রের। সেই সঙ্গে আরও ২৪টি দেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১ আগস্ট থেকে তাদের কী হারে শুল্ক হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ১ আগস্টের পর কী হবে।

১ আগস্টের সময়সীমা অতিক্রান্ত হতে আর বেশি সময় নেই। এর মধ্যে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হবে না, তাদের নতুন হারে পাল্টা শুল্ক দিতে হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র আর এই সময়সীমা বাড়াবে না বলেও জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ার্ড লাটনিক। মোট ২৪টি দেশকে তিনি পৃথকভাবে চিঠি দিয়েছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ফিলিপাইন, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পাল্টা শুল্ক আরোপের সময়সীমা ১ আগস্টের পর আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাটনিক জানিয়েছেন, নতুন শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে।

তাই আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না, কোনো ছাড়ও নয়। ১ আগস্ট থেকেই শুল্ক কার্যকর হবে। শুল্ক বিভাগ সেদিন থেকেই নতুন হারে শুল্ক আদায় শুরু করবে, তারপর যা হওয়ার তা–ই হবে। ফক্স নিউজ সানডেতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন লাটনিক।

এর আগে একাধিকবার শুল্ক আরোপের সময়সীমা বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন ট্রাম্প।

চলতি মাসের শুরু থেকেই ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দেশে শুল্ক আরোপের হুমকিসূচক চিঠি পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ছোট দেশগুলোর ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও করছেন।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভেন ডারলফ আল–জাজিরাকে বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব শুল্ক চুক্তি হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে মোটেও ছোটখাটো পরিবর্তন নয়। এসব চুক্তি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এসব চুক্তির প্রভাব হুমকির চেয়ে কম হলেও তা অবহেলা করার মতো নয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এখনো শুল্কের পুরো প্রভাব বাজারে পড়েনি। অনেক প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই পণ্য মজুত করে রেখেছে, যাতে দাম বাড়লেও তাৎক্ষণিক চাপ না পড়ে। বর্তমানে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, গাড়ি ও ইস্পাতের ক্ষেত্রে রয়েছে আরও বেশি হারে শুল্ক। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্ক হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ; ১ আগস্ট থেকে তা বেড়ে ২০ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছাবে।

ট্রাম্প যদি ১ আগস্ট অধিক হারে শুল্ক নাও বাড়ান, তারপরও অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও বাড়বে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে প্রবৃদ্ধিতে। বিবিবিএ রিসার্চের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুধু বর্তমান শুল্ক হারেই বৈশ্বিক জিডিপি স্বল্পমেয়াদে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং মধ্যমেয়াদে ২ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে।

ইউরোপের ফ্লোরেন্সে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল ইকোনমিকসের পরিচালক বার্নার্ড হোকম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো তেমন একটা মূল্যস্ফীতি দেখা যায়নি। কারণ, শুল্কের আশঙ্কায় অনেক দেশ আগেই পণ্য পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অপেক্ষায় আছে, শেষ পর্যন্ত শুল্ক কীভাবে তাদের প্রভাবিত করবে, সেটা বোঝার চেষ্টা করছে তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই গড় শুল্ক হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করে, তাহলে প্রভাব হবে আরও ব্যাপক।

ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা এসব আশঙ্কা একাধিকবার উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, যেসব ইতিবাচক অর্থনৈতিক তথ্য আসছে, তা থেকে প্রমাণিত হয়, অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস সব সময় ঠিক নয়।

এদিকে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শুল্কের সময়সীমা না বাড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে এই যে বাজার এখন পর্যন্ত ট্রাম্পর ঘোষণা গুরুত্বসহকারে নেয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যদি আরও একবার মেয়াদ বাড়ান, তাহলে বাজারের কাছে ট্রাম্পের ঘোষণা ও অবস্থান লঘু হয়ে যাবে।

যারা চিঠি পেয়েছে

যেসব দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে শুল্কের হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তার মধ্যে আছে ব্রাজিল (৫০%), মিয়ানমার (৪০%), লাওস (৪০%), কম্বোডিয়া (৩৬%), থাইল্যান্ড (৩৬%), বাংলাদেশ (৩৫%), কানাডা (৩৫%), সার্বিয়া (৩৫%), ইন্দোনেশিয়া (৩২%), আলজেরিয়া (৩০%), বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভেনিয়া (৩০%), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৩০%), ইরাক (৩০%), লিবিয়া (৩০%), মেক্সিকো (৩০%), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩০%), শ্রীলঙ্কা (৩০%), ব্রুনেই (২৫%), মলডোভা(২৫%), জাপান (২৫%), কাজাখস্তান (২৫%), মালয়েশিয়া(২৫%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৫%), তিউনিসিয়া (২৫%) ও ফিলিপাইন(২০%)।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র ১ আগস ট থ ক ১ আগস ট র র সময়স ম ল টন ক সব দ শ

এছাড়াও পড়ুন:

অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।

ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।

রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
  • ট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন