আজ ১ আগস্ট শুক্রবার থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কহার কার্যকর হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বেশির ভাগ দেশের জন্য এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা ইতিমধ্যে দুই দফা পেছানো হয়েছে। ২ এপ্রিল ‘স্বাধীনতা দিবস’ থেকে ৯ জুলাই এবং সেখান থেকে আবার ১ আগস্ট পর্যন্ত। খবর এনবিসি নিউজের। ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্কহার ঘোষণার দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এপ্রিল মাসে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ২০০টির বেশি বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। তাঁর উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছিলেন, ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি সম্ভব।’ অর্থাৎ ৯ এপ্রিল প্রথমবার যখন পাল্টা শুল্ক স্থগিত করা হয়, তখন ট্রাম্প প্রশাসনের ভাবটা ছিল এ রকম: ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মধ্যে ৯০টি চুক্তি করে ফেলা যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ১২০ দিনে মাত্র ৮টি চুক্তি হয়েছে, যার একটি আবার তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কেবল আটটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এর মধ্যে ৮ মে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে; ২ জুলাই ভিয়েতনামের সঙ্গে; ১৫ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে; ২২ জুলাই ফিলিপাইনের সঙ্গে; ২৩ জুলাই জাপানের সঙ্গে; ২৭ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে এবং ৩১ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয় যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়েছে গত ১২ মে, যদিও তাদের সঙ্গে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আরও চারটি দেশের সঙ্গে জোর আলোচনা চলছে।

যুক্তরাজ্য: চুক্তিতে প্রথম

গত মে মাসে যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে। এই চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক ধার্য করা হয়, যদিও কিছু পণ্যে ছাড় ও কোটার ব্যবস্থাও রাখা হয়।

তবে সম্প্রতি স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পরও এই বাণিজ্য চুক্তির কিছু বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক। এই শুল্ক কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হলেও এখনো বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল পরিষেবা কর বাতিলের বিষয়েও আলোচনা চলছে। ট্রাম্প চান না মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্যে এই শুল্কের কবলে পড়ুক।

ভিয়েতনাম: শুল্ক কমেছে অর্ধেকের বেশি

যুক্তরাষ্ট্র ২ জুলাই দ্বিতীয় চুক্তিটি করে ভিয়েতনামের সঙ্গে। এই চুক্তিতে ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’-এর মাধ্যমে ভিয়েতনামের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্য যাওয়া ঠেকাতে ৪০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়। তবে এর প্রয়োগ নিয়ে এখনো স্পষ্টতা নেই। পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম ১১ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাশা করলেও ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০ শতাংশ ঘোষণা করেন।

ইন্দোনেশিয়া: শুল্কবাধা সরানো হচ্ছে

১৫ জুলাই ঘোষিত চুক্তি অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার ওপর শুল্ক ৩২ শতাংশ থেকে থেকে কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। ৯৯ শতাংশের বেশি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

ফিলিপাইন: সামান্য পরিবর্তন

ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। তবে মার্কিন পণ্যের ওপর তারা কোনো শুল্ক আরোপ করবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। সামরিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

জাপান: চাল ও গাড়ি খাতে ছাড়

২৩ জুলাই জাপানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। গাড়ি খাতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প এটিকে ‘সম্ভবত সবচেয়ে বড় চুক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দাবি করেছেন, জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন বা ৫৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যার ৯০ শতাংশ মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পকেটে যাবে।

ইইউ: বিভক্ত প্রতিক্রিয়া

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী একে ‘আত্মসমর্পণ’ এবং ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইইউ কমিশনার মারোশ সেফচোভিচ অবশ্য এটাকে ‘চরম বাস্তবতায় সেরা চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়া: একই পথে

দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানির ওপরও ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। শুধু তা–ই নয়, এই বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প নিজে তা বাছাই করবেন।

চীন: আলাদা কৌশল

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো চুক্তি হয়নি, চলছে সাময়িক শুল্ক বিরতির পালা। বর্তমানে চীনের ওপর ৩০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। স্টকহোমে সাম্প্রতিক বৈঠকেও বিরতির সময় বাড়েনি। একধরনের বন্দোবস্ত হয়েছে।

ভারত: শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা

ট্রাম্প গত বুধবার ঘোষণা দেন, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, সঙ্গে অতিরিক্ত এক ‘শাস্তিমূলক’ কর আরোপিত হতে পারে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার কারণে। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের শুল্ক বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২ এপ্রিল ট্রাম্প ভারতের পণ্যে ২৬ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ভারতের পণ্যে শুল্ক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে।

কানাডা: কঠিন আলোচনার পর্যায়ে

কানাডার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। মাদক পাচার নিয়ে উদ্বেগের কারণে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, আলোচনা এখন ‘গুরুতর পর্যায়ে’ রয়েছে।

মেক্সিকো: অগ্রগতি নেই

মেক্সিকোর পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্প বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষায় মেক্সিকো যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই পাল্টা ব্যবস্থা নিলে শুল্ক আরও বাড়ানো হবে।

অস্ট্রেলিয়া: আপাতত ১০ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে ঘাটতি থাকায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য এখনো ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক রাখা হয়েছে। তবে ট্রাম্প এ হার বাড়িয়ে ১৫–২০ শতাংশ করতে পারেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংস আমদানির ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এসব দেশের বাইরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মোট ২২টি দেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে তাদের কী হারে শুল্ক দিতে হবে। সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। মোট ১৫০টি দেশকে এমন চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের আছে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ১ আগস্টের সময়সীমা পেছানোর পরিকল্পনা নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র য ক তর জ য র র ওপর শ ল ক ১ আগস ট কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।

তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ