দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা চায়, মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ঘোষণা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে।...এই নির্বাচনটা আমরা চাই। দেশের মানুষ চায়।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় রবীন্দ্র সরণিতে আয়োজিত এক সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

নির্বাচন কেন দরকার, তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন আমার কোনো সমস্যা হলো, আমার তো যাওয়ারই জায়গা নেই। কার কাছে যাব, কোনো এমপি নেই তো। আছে? আমার কথা কে সংসদে বলবে, লোক নাই। কে সংসদে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে, লোক নাই। এ জন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, দ্রুত সংসদ দরকার, যে সংসদে আমরা আমাদের কথা বলতে পারব।’

‘ভয়ংকর একটা স্বৈরাচার’ থেকে আপাতত মুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে, যখন তাদের রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। যারা চাঁদাবাজি করে, ব্যাংক লুট করে নিয়ে যায়, তাদের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপস থাকবে না। তাদের কোনোমতেই সামনে আসতে দেওয়া যাবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রত্যেকবার আওয়ামী লীগ আসবে, অন্যান্য দল আসবে, আমাদের লুট করবে, সেটা আমরা আর হতে দিতে চাই না। আমরা বলেছি, গণতন্ত্র চাই। গণতন্ত্র কী, সাধারণ মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করবে। তারা ভোট দেবে, ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেই প্রতিনিধিরা দেশ চালাবে। হাসিনার মতো দিনের ভোট রাতে করা, ডামি ভোট করা, তাঁর ইচ্ছেমতো এমপি তৈরি করা, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া, ব্যাংকগুলোকে লুট করে ফেলা, এই কাজগুলো আর হবে না, এ জিনিসটা আমরা দেখতে চাই না।’

অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন, বকাবকি করেন, তাদের অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, তাদের অভিজ্ঞতা বেশি নেই, এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এক বছরের মধ্যে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য, পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে। গতকালই সংস্কারের বৈঠক শেষ হয়েছে। আশা করছি, দু–এক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কমার বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভালো একটা খবর আছে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছিল। ৩৫ শতাংশ করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার, উপদেষ্টারা সেটাকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছেন। সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।

‘স্লোগান আর হাততালি পুরোনো ব্যাপার, মানুষ এগুলো দেখতে চায় না’

মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে মুগ্ধের বাবা, জাফরের মা আছেন, যাঁরা এক বছর আগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁদের সন্তানদের হারিয়েছেন। শুধু এক–দুজন নয়, শত শত প্রাণ গেছে গত এক বছর আগে এবং তারও আগে গত ১৫ বছরে। জাফরের মা বলে গেছেন, ছেলে খুব ভালো ছাত্র ছিল, প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই ছেলে শহীদ হয়েছে। মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের জন্য পানি দিচ্ছিল। বারবার বলছিল, পানি লাগবে, পানি লাগবে? এত তাড়াতাড়ি এগুলো ভুলে যাবেন না।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এক বছরের মধ্যে হাততালি দিয়ে এগুলো ভুলে যাবেন না। যারা প্রাণ দিল আমাদের জন্য, দেশের জন্য, দেশের সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য, তাদের ভালো করে মনে করেন। এই বোধ ভেতর থেকে না এলে, যদি অনুভূতি না আসে, তাহলে দেশের জন্য কিছু করতে পারবেন না। যত স্লোগান দেন, চিৎকার করেন, পোস্টার লাগান, কোনো লাভ হবে না। দেশকে বদলাতে হবে। স্বৈরাচারদের ঘৃণা করতে হবে। হাসিনা যাতে কোনো দিন ফিরে না আসে, আমাদের সন্তানদের আর না হত্যা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেন।’

স্লোগান আর হাততালি পুরোনো ব্যাপার, মানুষ এগুলো দেখতে চায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি আমাদের ছেলেদের এত আত্মত্যাগ, মানুষের এত আত্মত্যাগ, মেহনতি মানুষের আত্মত্যাগের পরেও দেশে অস্থিরতা দেখতে পাই। আমরা সবাই চেয়েছিলাম, এখনো চাই, সবাই মিলে সুন্দর একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। সে জন্যই বলছি, শুধু হাততালি দিলেই, পোস্টার নিয়ে ঘুরলেই আর ভাইয়ের নামে স্লোগান দিলেই কিন্তু কাজ হবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনামুক্ত হয়েছি, কিন্তু পরিপূর্ণভাবে এখনো স্বৈরাচারমুক্ত হতে পারিনি। আমরা গণতন্ত্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি, কিন্তু পরিপূর্ণভাবে এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি।’

আমিনুল হক আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছি, এ দেশের মানুষ সমর্থন দিয়েছে, সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে কিছু নতুন দল, আলবদর বাহিনী ঢুকে আবার ফ্যাসিবাদকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সবার আগে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, দেশ সেইভাবে চলবে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব মোস্তফা জামান বলেন, ‘আমাদের উত্তরা পশ্চিম থানাসহ তুরাগ ও আশপাশের কয়েকটি থানা এলাকায় দু–একটা ছেলের জন্য আমাদের দলের বদনাম হচ্ছে, যাদের আর্মিরা বারবার ধরেছে, আবার বারবার ছুটে এসেছে। আবার আর্মিরা ধরেছে এখন, আমাদের কিছু গডফাদার আছেন, যাঁরা ছুটিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছেন। সতর্ক থাকবেন, বিএনপির বদনাম হয়, এমন কাজ যে করবে, সে আমার ভাই হোক, দলের নেতা হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ জাফরের মা বক্তব্য দেন। সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে রাস্তায় অস্থায়ী ট্রাকের মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করা হয়। এ সময় দক্ষিণ পাশের রাস্তা পুরোটা বন্ধ ছিল। উত্তর পাশের রাস্তাও নেতা-কর্মীদের ভিড়ে সমাবেশের সময় বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ মঞ্চের ঠিক পেছনেই উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (মা ও শিশু) তিন নম্বর ইউনিট ভবন হওয়ায় রোগী ও স্বজনদেরও সমাবেশ চলাকালে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে দেখা যায়। হাসপাতালের ওই ভবনের ফটকের সামনেও নেতা-কর্মীদের ভিড় ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র এক বছর র জন য আম দ র হ তত ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে সাত ধরনের খাবার খেলে ৭০ বছর বয়সেও থাকবেন তরুণ

গত মার্চ মাসে ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, উদ্ভিজ্জ খাবার খেলে বয়সজনিত জটিলতার হার কমে। গবেষণাটির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী সুস্থ ব্যক্তিদের। অর্থাৎ যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা নেই। ৩৯–৬৯ বছর বয়সী ১ লাখ ৫ হাজার ব্যক্তিকে ৩০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন গবেষকেরা। মধ্যবয়সে খাদ্যাভ্যাস কীভাবে তাঁদের পরবর্তী বছরগুলোর সুস্থতাকে প্রভাবিত করেছে, সেটিই দেখা হয়েছে সেই গবেষণায়।

সুস্থ থাকার সম্ভাবনা কতটা

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট স্কোর দেওয়া হয়েছে। এই স্কোর হার্ভার্ডের উদ্ভাবিত অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং’ অনুসারে, যাঁদের এই স্কোর সবচেয়ে বেশি ছিল, ৭০ বছর বয়সে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তাঁদের সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে ৮৬ শতাংশ; ৭৫ বছর বয়সে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে ২ দশমিক ২ গুণ। বুঝতেই পারছেন, এই অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্সই দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
কী আছে হার্ভার্ডের এই খাদ্যভ্যাসে, যা দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

বাদামের পুষ্টিগুণ অনেক

সম্পর্কিত নিবন্ধ