ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর ও পৌষার পুকুরপাড়সহ জলাবদ্ধতা আক্রান্ত এলাকাগুলোর স্থায়ী সমাধানের দাবিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নারায়নগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানীয়  ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।

একইসাথে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আরেকটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

রবিবার (৩ আগস্ট) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে ফতুল্লা ইউনিয়নের ০১, ০২, ০৩, ০৪, ০৫ ও ০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ফতুল্লা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নলখালি ও বাগডুমারী খাল দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে খনন না হওয়ায় এবং শিল্পবর্জ্য ও মানবসৃষ্ট বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাওয়ায় খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

এতে অল্প বৃষ্টিতেই লালপুর, পৌষার পুকুরপাড় ও ইসদাইর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া রেলওয়ের ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

উল্লেখিত সমস্যা সমাধানে স্মারকলিপিতে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়:

১. জেলা পরিষদের বর্তমান পাম্পের স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্টেশন স্থাপন।

২. নলখালি ও বাগডুমারীসহ ডিএনডি প্রকল্পের আওতাভুক্ত সকল খাল পুনঃখনন করে কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর করা।

৩. লালপুর-পৌষার পুকুরপাড় থেকে নলখালি খাল পর্যন্ত ৫-৭ ফুট গভীরতার বক্স ড্রেন নির্মাণ এবং ২-৩ ফুট উচ্চতার রাস্তা নির্মাণ।

৪. রেলওয়ের পানি প্রবাহ বন্ধকারী বাধ অপসারণ করে পানির স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা।

৫. খালের সাথে সংযুক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেনের মুখসমূহ পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, “বছরের পর বছর ধরে আমরা পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। জেলা প্রশাসক আমাদের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত নারায়নগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধূরী, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম  সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার,ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন,ফতুল্লা থানা যুব দলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল খালেক টিপু,জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল আরমান,ফতুল্লা থানা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাগর সিদ্দিকী,ফতুল্লা ইউনিয়ন ৪  নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কাজী মাঈনুদ্দিন,লালপুর-পৌষাপুকুর পাড় পাঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা, সাধারন সম্পাদক আব্দুল বারী,সহ সভাপতি আজাদুর রহমান আজাদ,রেজাউল হক চেঙ্গিস,স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজানুর রহমান মিজান,ফেরদৌস পারভেজ ড্যানি,গাবতলী মাজার রোডের তাতা, মুকুল, সামছুল ইসলাম, লালপুর -আলআমিনবাগ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আরিফুর রহমান জনি,সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক সহ ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ম রকল প ম হ ম মদ প রব হ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ