পৃথিবী আল্লাহর আমানত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানিয়েছেন।’ (সুরা আন‘আম, আয়াত: ১৬৫)

প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়ের এই যুগে পরিবেশ–সচেতন শিশু লালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা শুধু আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার পথও।

ইসলামে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব

ইসলামে পৃথিবীকে একটি আমানত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আমাদের সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষের হাতের কাজের কারণে স্থল ও সমুদ্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।’ (সুরা আর-রুম, আয়াত: ৪১) এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের ক্রিয়াকলাপ পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে এবং আমরা এর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করব।

পরিবেশ রক্ষা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব; কারণ, এটি আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের সঙ্গে জড়িত।ইউসুফ আল কারজাভি, রিয়ায়া আল-বিয়া ফি শারিয়া আল-ইসলাম

খ্যাতিমান ইসলামবেত্তা ইউসুফ আল কারজাভি তাঁর বই রিয়ায়া আল-বিয়া ফি শারিয়া আল-ইসলাম-এ বলেছেন, পরিবেশ রক্ষা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব; কারণ, এটি আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের সঙ্গে জড়িত।

আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.

) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫শিশুদের পরিবেশ–সচেতন করতে কিছু পদক্ষেপ

শিশুদের পরিবেশ–সচেতন করে গড়ে তোলা জরুরি। এই শিক্ষা শুধু তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তেও সহায়তা করবে। আমরা কয়েকটি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরছি।

১. ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে পরিবেশের গুরুত্ব শেখানো

শিশুদের কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা শেখান। সুরা আর-রহমান (আয়াত: ৭-৯) প্রকৃতির ভারসাম্য ও ন্যায়বিচারের কথা বলে। শিশুদের বোঝান যে পানি, গাছপালা এবং প্রাণী সবই আল্লাহর সৃষ্টি এবং এগুলো রক্ষা করা আমাদের ইবাদতের অংশ। গল্পের মাধ্যমে নবীজি (সা.)-এর পরিবেশবান্ধব আচরণ, যেমন পানি সাশ্রয় বা গাছ রোপণ, ব্যাখ্যা করুন।

শিশুদের পানি, বিদ্যুৎ ও খাবারের অপচয় রোধ করতে শেখান। দাঁত ব্রাশ করার সময় কল বন্ধ রাখা বা অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ করা।

২. প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন

শিশুদের পার্ক, বন বা সমুদ্রসৈকতে নিয়ে যান, যাতে তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। সুন্দরবন, কক্সবাজার বা স্থানীয় পার্কে ভ্রমণ তাদের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগাতে পারে। বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় গাছ লাগানোর অভ্যাস গড়ুন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি গাছ রোপণ করে, তা থেকে যা উৎপন্ন হয়, তা তার জন্য সদকা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫২)

শিশুরা বীজ থেকে গাছ বড় হতে দেখে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝবে।

৩. সম্পদ সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা

শিশুদের পানি, বিদ্যুৎ ও খাবারের অপচয় রোধ করতে শেখান। দাঁত ব্রাশ করার সময় কল বন্ধ রাখা বা অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ করা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৩১)

আমাদের দেশে পানি ও বিদ্যুতের সংকট প্রায়ই দেখা যায়, এই অভ্যাস শিশুদের দায়িত্বশীল নাগরিক করে তুলবে। খাবারের বর্জ্য কমাতে কম্পোস্টিং শেখান, যা জৈব সার তৈরিতে সহায়ক।

আরও পড়ুনইসলামে পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা০১ অক্টোবর ২০১৫

৪. পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার

শিশুদের প্লাস্টিকের বোতল বা ব্যাগের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। প্লাস্টিক দূষণ নদী ও সমুদ্রের জন্য মারাত্মক। শিশুদের নিজস্ব পানির বোতল বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত করুন। এটি তাদের ‘অল্পই যথেষ্ট’ ধারণা শেখাবে, যা কোরআনের শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (সুরা তালাক, আয়াত: ৭)

৫. পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

স্থানীয় বৃক্ষরোপণ বা আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রমে শিশুদের অংশগ্রহণ করান। বেশ কিছু সংগঠন এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে। এ কার্যক্রম শিশুদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সম্প্রদায়ের প্রতি অবদান রাখার মনোভাব গড়ে তুলবে।

পৃথিবী থেকে ক্ষতিকর কিছু সরিয়ে ফেলা ইমানের একটি শাখা।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৯

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবী থেকে ক্ষতিকর কিছু সরিয়ে ফেলা ইমানের একটি শাখা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৯)

৬. পরিবেশ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা

শিশুদের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ বা বন উজাড় নিয়ে কথা বলুন। তাদের মতামত শুনুন এবং সমাধানের জন্য তাদের ধারণা জানতে উৎসাহিত করুন। আমাদের দেশে শিশুরা প্রায়ই বন্যা বা নদীদূষণের প্রভাব দেখে, এই আলোচনা তাদের সমস্যা বুঝতে ও সমাধানে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। এটি তাদের সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার মনোভাব গড়ে তুলবে।

৭. নিজে উদাহরণ হয়ে ওঠা

শিশুরা মা–বাবার কাছ থেকে শেখে। নিজে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করুন—যেমন প্লাস্টিক বর্জন, শক্তি সাশ্রয় বা বৃক্ষরোপণ। দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জ, আপনার সচেতন আচরণ শিশুদের জন্য উদাহরণ হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সৎকাজের আদেশ করো এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪)

আপনার ক্রিয়াকলাপ শিশুদের ইসলামি ও পরিবেশগত মূল্যবোধ শেখাবে।

শিশুদের পরিবেশ–সচেতন করে গড়ে তোলা একটি যাত্রা, যা ইসলামি শিক্ষা ও ব্যবহারিক পদক্ষেপের সমন্বয়ে সম্ভব।

আরও পড়ুনতিন শিশু দোলনা থেকে কথা বলেছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ দ র পর ব শ পর ব শ স প রক ত র পর ব শ র ব যবহ র আল ল হ র জন য আম দ র ইসল ম ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এই অবস্থা বজায় থাকলে খুব ভালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’’

সোমবার (৩ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ডরমেটরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমাতুল জান্নাত, পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার ও উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ উল্লাহ।

ঢাকা/রতন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ