ভূরাজনীতি ও অর্থনীতিতে যতই অনিশ্চয়তা থাক না কেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে থাকবে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস।

ব্যাংকটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় মূল্য হতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৬৪ ডলার। ২০২৬ সালে তা কমে ব্যারেলে ৫৬ ডলারে নেমে যেতে পারে। খবর রয়টার্স।

তবে যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক বা দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো যেকোনো ঘটনা এই পূর্বাভাসে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করেছে গোল্ডম্যান স্যাক্স। এদিকে রাশিয়া ও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি তেলের সরবরাহে চাপ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি হতে পারে।

এদিকে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক ৫ লাখ ৪৭ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এর আগে দীর্ঘদিন তেলের দাম ধরে রাখতে তারা উৎপাদন কমিয়েছে। সেই ধারা থেকে তারা ফিরে আসার চিন্তা করছে। রাশিয়া থেকে সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কার কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রোববার সংক্ষিপ্ত এক অনলাইন বৈঠকে ওপেকের সহযোগী আটটি সদস্যদেশ উত্তোলন বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়।

এ খবরে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। যদিও রাশিয়ার ওপর সম্ভাব্য নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।

আন্তর্জাতিক ব্রোকার প্রতিষ্ঠান পিভিএমের বিশ্লেষক তামাশ ভার্গা বলেন, ‘ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে জ্বালানি তেলের দামে চাপ তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৬ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল দৈনিক উত্তোলন হ্রাস প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে টানা দুই দিন বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম কমেছে। আজ এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৬৮ দশমিক ৬৫ ডলার। দাম কমেছে ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। দাম হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৬ দশমিক ১৭ ডলার।

চলতি বছর সামগ্রিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। গত ৫ মে ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। চলতি বছর জ্বালানি তেলের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র দ ম কম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাকশিল্পে এখনই রূপান্তরের সময়

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন ভারসাম্য তৈরি করেছে। কারণ, এখন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ভারত (২৫ শতাংশ)—তিন দেশই প্রায় সমান বা কাছাকাছি শুল্ক দেবে।

এই সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে চাপ তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশকে মানসম্পন্ন, টেকসই ও দ্রুত সরবরাহ করতে সক্ষম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য। এখনই আমাদের পোশাকশিল্পকে উৎপাদন, পণ্য বৈচিত্র্য, দ্রুত সরবরাহের পথে এগোতে হবে। তাহলে এই সুযোগ আমরা নিতে পারব।

এই সুযোগ নিতে হলে বাংলাদেশকে বেশ কিছু বিষয়ে জোর দিতে হবে।

এক. গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত মূলত টি-শার্ট, হুডি ও প্যান্টের মতো মৌলিক পণ্যের রপ্তানিতে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এখন মার্কিন ক্রেতারা ছোট ছোট ক্রয়াদেশ, দ্রুত সরবরাহ ও নতুন চলভিত্তিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। সে জন্য বড় ক্রয়াদেশের পাশাপাশি কারখানার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা ছোট ও দ্রুত উৎপাদন লাইনের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এক সপ্তাহের মতো সময়ে নানা বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করতে পারবে—এমন কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। ক্রয়াদেশের পরিমাণ অনুযায়ী দর–কষাকষি করে দাম ঠিক করতে হবে। অনেকে একটু বেশি দাম দিলেও দ্রুত সরবরাহ চায়।

দুই. চীন ও ভিয়েতনামের মতো পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে শুধু দ্রুত সরবরাহ করছে না, তাদের পোশাকের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। একই অবস্থা চীনেরও। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনো সুতার কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। পোশাকের বৈচিত্র্য বাড়াতে হলে উৎপাদন খাতে লেজার কাটিং, সিমলেস বন্ডিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এখনই বড় বিনিয়োগ সম্ভব না হলে ছোট দল গড়ে তুলতে হবে, যারা বিদ্যমান যন্ত্র দিয়েই সিনথেটিক বা কৃত্রিম পোশাক তৈরি করতে পারবে। শুধু বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দিকে না ঝুঁকে, মধ্যম সারির ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বৈচিত্র্যময় পোশাক নিয়ে যেতে হবে।

তিন. সিনথেটিক কাপড়ের দেশীয় উৎসে জোর দেওয়া দরকার। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম অনেক সময় সহজে ক্রয়াদেশ পায়। তারা নিজেরা যেমন কৃত্রিম কাপড়ের পোশাকের উৎস গড়ে তুলেছে, তেমনি ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে চীন থেকে কম সময়ে ও খরচে এই কাপড় আমদানি করতে পারে।

বাংলাদেশ এখনো কৃত্রিম কাপড়ের জন্য চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। এসব দেশ থেকে কাপড় আমদানিতে ১৫ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। এতে সময় ও খরচ বাড়ে। সে জন্য দেশীয় বস্ত্রকলগুলো যেন কৃত্রিম তন্তু দিয়ে কাপড় তৈরি ও রং করার জন্য বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। যাদের সক্ষমতা কম, তারা তুলার সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যে সামান্য কৃত্রিম উপাদান যুক্ত করে নতুন নকশার পোশাক তৈরি করতে পারে।

চার. শুধু কমপ্লায়েন্স নয়, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে। এখন শুধু কর্মসহায়ক পরিবেশ, অর্থাৎ কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণ করলেই হচ্ছে না। বৈশ্বিক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এখন পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, বিদ্যুৎ-পানির সাশ্রয়, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের অবস্থা, অর্থাৎ টেকসই উৎপাদনব্যবস্থা দেখতে চায়। ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষও এসব বিষয়ে সোচ্চার।

এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রতি কেজি কাপড় তৈরিতে কত লিটার পানি লাগে, প্রতি পিস পোশাকে কত ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে, কতজন শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদে কাজ ধরে রাখে—এসব তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা দরকার। এসব তথ্য সহজ ও আকর্ষণীয় প্রতিবেদনের মতো করে সাজিয়ে রাখা দরকার, যেন সহজেই বিদেশি ক্রেতাদের দেখানো যায়। অনেক ক্রেতা হয়তো নিজে থেকে এসব জানতে চান না, কিন্তু দেখলে তাঁরা এর প্রশংসা করবেন এবং আস্থাও পাবেন। পোশাকশিল্পে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে এসব বিষয় এখন অপরিহার্য।

পাঁচ. অর্থায়নের সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। অনেক কারখানা বড় পরিসরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। অর্থায়ন, কাঁচামালের দাম ও ক্রয়াদেশের অনিশ্চয়তা তাদের আটকে রাখছে। অথচ এখনই সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের মতো অর্থায়নের স্কিমগুলো সম্পর্কে জানা দরকার। নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে কিছু অগ্রিম নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবার অন্য কারখানার সঙ্গে ক্রয়াদেশ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। এতে একবারে বড় ক্রয়াদেশ নেওয়া সম্ভব হয়। সঠিক বিনিয়োগ করলে নতুন বাজার ধরা সম্ভব।

সময় এখন এগিয়ে যাওয়ার

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক প্রথমে বাড়তি চাপ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি সম্ভাবনার নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ যেভাবে সস্তা শ্রম আর শুল্ক সুবিধার ওপর নির্ভর করে এসেছিল, সেই যুগ শেষ।

এখন আমাদের লড়তে হবে গুণগতমান, বৈচিত্র্য, উদ্ভাবন, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে। বৈশ্বিক ক্রেতারা এখনো বাংলাদেশকে পছন্দ করে। তাদের পছন্দের জায়গা ধরে রাখতে হলে আমাদেরও পরিবর্তিত হতে হবে। পিছিয়ে পড়ার সময় নেই। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।

সাইয়েদ তানজিম মোজাহের: পরিচালক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস

চট্টগ্রামভিত্তিক দ্বিতীয় প্রজন্মের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিম্মিদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত হামাস, আছে যেসব শর্ত
  • শাহজীবাজার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবার অগ্নিকাণ্ড
  • রাজশাহীতে বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবজির দাম
  • হবিগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ সরবরাহ
  • ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেসব পণ্যের দাম বাড়বে
  • ফ্লাইট এক্সপার্টের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা, তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরো ৬৮ ফিলিস্তিনির
  • ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ, মালিক ও কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
  • পোশাকশিল্পে এখনই রূপান্তরের সময়