ছবি-২: মায়ের কাঁধে ভর করে টাঙ্গাইলের একটি অনুষ্ঠানে যেতে বাড়ি থেকে বের হয় দৃষ্টি হারানো হিমেল। তাঁদের বিদায় জানান হিমেলের ভাই মো. জনি মিয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
গুলিতে দৃষ্টি হারালেও স্বপ্ন হারায়নি হিমেল, দেখতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রতিনিধি,

গত বছরের ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে চোখের দৃষ্টি হারায় হিমেল ইসলাম (১৬)। চিকিৎসকেরা তাকে ও তার পরিবারকে জানিয়েছেন, সে আর কখনো চোখে দেখতে পারবে না।

তবু চোখে স্বপ্ন আছে হিমেলের—আবার সুন্দর করে বাঁচার, আবার স্বাধীন বাংলাদেশকে দেখার। মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই বলল হিমেল।

উপজেলার লালবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খাটের ওপর বসে আছে হিমেল। তার মা নাছিমা বেগম ও বড় ভাই মো.

জনি মিয়া (২৫) তাকে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন টাঙ্গাইলের শিল্পকলা একাডেমিতে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ছেলের চোখ হারানো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারে মা, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী ও এক নাতি আছে। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামী আফাজ উদ্দিন তাঁদের ফেলে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে নাছিমা বেগমের জীবনে নামে দুর্ভোগ। ছেলেদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে থাকেন। বড় ছেলে জনি ১৩-১৪ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে শ্রমিকের কাজ শুরু করে। হিমেলও ১২-১৩ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় এক ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করত।

গত বছরের ৪ আগস্ট গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয় হিমেল। সে সময় তার চোখ, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর ছুটি দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সে আর চোখে দেখতে পারবে না। পরে চোখের ক্ষত না শুকানোয় হিমেলকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। এখন নিয়মিত তাকে সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে হয়।

নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স হইছে। এখন আর কাজ করতে পারি না। বড় ছেলেডা এক ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে, ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। তা দিয়্যা ছেলে, বউ, মা আর নাতি নিয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতাছি।’

হিমেলের ভাই জনি মিয়া বলেন, ‘আমি উত্তরা স্পিনিং মিলে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। সংসারে ছয়জন মানুষ নিয়া খুব কষ্টে চলি। আল্লায় ভাইডারে যদি ভালো কইর‍্যা দিত, তাইলে আগের মতো কাজ করা পারত। আমাগো সবাই ভালো কইর‍্যা চলতে পারতাম।’

হিমেল ইসলাম বলে, ‘আমি ৫ আগস্টের আগে পড়ালেখা করতাম। ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিলাম। ডেকোরেশনের কাজ করতাম। এখন আমার চোখে গুলি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। আগস্টের ৪ তারিখে আন্দোলনে যোগ দিই। হাইওয়ে থানায়। থানা থেকে আমাদের গুলি করে। আহত অনেকের মধ্যে আমি একজন। আমার সারা মুখে এখনো বুলেট আছে। এই বুলেটে আমার অনেক ক্ষতি হয়। দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবারের অনেক কষ্ট এখন। এখন আমার চাওয়া একটাই—আবার আমি সুন্দর করে বাঁচতে চাই; স্বাধীন বাংলাদেশ আবার দেখতে চাই।’

নাছিমা বেগম জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং রাজনৈতিক দল ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। এর সবই হিমেলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে।

এদিন হিমেলকে নিয়ে টাঙ্গাইলের পথে রওনা দেন মা নাছিমা বেগম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভাই জনি মিয়া হিমেলের পায়ে জুতা পরিয়ে দেন, ময়লা মুছে দেন। এরপর গাড়িতে তুলে দেন মা ও ভাইকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

হস্তক্ষেপ নয়, পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী টিম ডিরেক্টর রাজ্জা

সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। আব্দুর রাজ্জাককে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘‘বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর কিন্তু টসেও ইনপুট দিতেন। আপনি কি…?’’ রাজ্জাক মুখে হাসি আটকে রাখেন। এই পদে আসন্ন আয়ারল‌্যান্ড সিরিজে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাক স্রেফ এতোটুকুই বলতে পারেন, ‘‘আমাদের থেকে এমন কিছু কখনোই দেখতে পারবেন না। আমরা নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।’’ 

জাতীয় দলকে নিয়ে সেই ভাবনা থেকেই ‍আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড একজনকে টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের জাতীয় পুরুষ দলের ব‌্যর্থতার কারণে আলোচনা হচ্ছিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ওপরে একটি ছায়া বিভাগ থাকবে যারা সরাসরি জাতীয় দল পর্যবেক্ষণ করবে।

সেই ছায়া বিভাগে সাবেক ক্রিকেটাররাই থাকবেন। প্রথম টিম ডিরেক্টর হিসেবে রাজ্জাক পেলেন দায়িত্ব। কেন টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হলো সেই প্রশ্ন করা হয় তাকে। নাজমুল হাসান বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় টিম ডিরেক্টর পদটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি সিরিজে। দলের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যেতেন তিনি। টস থেকে শুরু করে টিম মিটিংয়ে দিতেন ইনপুট। যা নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন কোচ ও অধিনায়ক।

তবে রাজ্জাক নিজের কাজ, পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলেই নিশ্চিত করলেন,"অন্যান্য যে কোনো টিম ডিরেক্টরের মতোই হবে আমার কাজ। আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, সব কিছুতে নজর রাখব। আর কখনও যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে সেটিও দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি করব।"

"ক্রিকেট বোর্ডের মনে হয়েছে, দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর থাকলে ভালো হবে। এই পদটি কিন্তু আগেও ছিল। অনেক দিন ধরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা কম থাকায় হয়তো দলের সঙ্গে কেউ যায়নি। তবে এর আগে প্রায় সিরিজেই দলের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকত।" - যোগ করেন তিনি।

ঢাকা/ইয়াসিন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ