জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বাষির্কী উপলক্ষ্যে পূর্ব কর্মসূ‌চির অংশ হি‌সে‌বে রাজধানী‌তে গণ‌মি‌ছিল ‌বের ক‌রে বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামী।

মঙ্গলবার মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে মহানগরী আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের  বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে। এর আ‌গে সকাল ১০টায় মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে এক সং‌ক্ষিপ্ত সমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছি‌লেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তি‌নি বলেন, ‘‘জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।’’

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পিআর পদ্ধ‌তিতে নির্বাচন দা‌বি ক‌রে ডাক্তার তা‌হের ব‌লেন, ‘‘গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সকল নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপকভিত্তিক রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত, এসব ছিল নির্বাচনের নামে প্রহসন। তাই দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্রদখল হবে না। থাকবে না টাকার খেলা।’’

মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধীতা করছেন। তারা মাস্তানী ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদের সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না ব‌লেও জানান তি‌নি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.

মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা: ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো: আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহনগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আগামীর বাংলাদেশ হবে ইনসাফ ও ইসলামের বাংলাদেশ। যেখানে সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে।’’ তিনি গণহত্যাকারীদের বিচার এবং পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সে সনদে জনপ্রত্যাশার বাইরে কিছু থাকলে তা দেশপ্রেমী জনতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। শুধু ঘোষণা নয় বরং তা নির্বাচনের আগেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই। নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। চাই প্রয়োজনীয় সংস্কারও। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’’

ঢাকা/নঈমুদ্দীন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হ ম মদ জনগণ র সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান শুধু জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সম্ভব নয়। জনগণের ঐক্য, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করেছে নীতি গবেষণা কেন্দ্র।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ করতে পারবে না। দেশের জনগণের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এ কারণেই সমস্যার মূল সমাধান নির্ভর করছে জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।ফরহাদ মজহার, কবি ও চিন্তক

৮ আগস্ট জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধানের নামে একই ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিষ্ঠান বজায় রেখে দেশের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

সংলাপে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা ও গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

নুরুল ইসলাম বলেন, সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা তোলা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের নাগরিকত্ব ও জাতিগত পরিচয় সুরক্ষিত রাখা এবং উপযুক্ত শিক্ষা ও পুনর্বাসনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যাবর্তনের পথে রাজনৈতিক বাধা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। —পিটার কার্ন, আইওএম বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান পিটার কার্ন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে উদারতা প্রদর্শন করেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে আরও স্বীকৃতি প্রাপ্য।

পিটার কার্ন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে সমর্থন দিয়ে স্বীকার করেছে, এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশ একা বহন করতে পারবে না। এর মাধ্যমে বিশ্ব বাংলাদেশের ভূমিকা ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট জটিল হচ্ছে। অর্থের ঘাটতি প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা সীমিত করছে। বড় দেশগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখছে, আঞ্চলিক দেশগুলোও তেমন সক্রিয় নয়। বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা, শিক্ষা, কাজের সুযোগ ও চলাচলের স্বাধীনতার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হলেও রাখাইন ও মিয়ানমারে সহিংসতার বিষয়টি প্রায় অবহেলিত। নিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে; রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর কার্যক্রম বেশি তুলে ধরা হয়, আর রাখাইন জাতীয়তাবাদীদের কর্মকাণ্ড তেমন আলোচনায় আসে না।

আরও পড়ুনআসিয়ান জোট রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণকে উপেক্ষা করেছে: এপিএইচআর০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে প্রবন্ধে বলা হয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এড়াতে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা হুমকিমুক্ত রাখতে মাদক, মানব পাচার, সীমান্ত লঙ্ঘন এবং জেলেদের অপহরণ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং সমাজে সমান অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক হিসেবে একীভূত করার জন্য পন্থা নির্ধারণ করা। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’
  • ‘জনগণ এবারও তাদের পিআর বোঝাবে, পিআর ছাড়া নির্বাচন হবে না’
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীতে সাত দলের বিক্ষোভ-সমাবেশ
  • চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যৌথ মহড়ায় ‘ইনক্যাপ সিরিমনি’
  • পিআরেরও দু–একটা সাইড এফেক্ট আছে, কিন্তু অধিকাংশই ভালো দিক: ইসলামী আন্দোলন
  • আস্থা রাখতে চাই, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে: টুকু
  • ‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’
  • পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে