গাজা যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস। পাশাপাশি তারা যুদ্ধের ইতি টানতে আলোচনা শুরু করতেও প্রস্তুত। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি মধ্যস্থতাকারীদের এমনটা জানিয়েছে।

গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনি নারী–পুরুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির চাপিয়ে দেওয়া অনাহারেও কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির নতুন হুমকি তৈরি করেছে ইসরায়েল।

হামাস গতকাল সোমবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে, তারা ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গতকাল কাতার ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার এ বার্তা পেয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল ও চ্যানেল ১২।

আরও পড়ুনগাজা সিটির বাসিন্দাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করল হামাস২২ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র আল–জাজিরাকে বলেছে, সবশেষ ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ৬০ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, এ সময়ে ইসরায়েলি সেনারা অন্যত্র সরে যাবেন; যাতে গাজায় মানবিক সহায়তা ঢুকতে পারে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে ৫০ ইসরায়েলি জিম্মির অর্ধেককে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে ফিলিস্তিনি বন্দীদের।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জসিম আল থানি কায়রোতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার এই ঘোষণা এল।

তবে আগের ব্যর্থ আলোচনাগুলো বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, এ ঘোষণার অর্থ এই নয় যে যুদ্ধ খুব শিগগিরই শেষ হতে চলেছে।

সবশেষ ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ৬০ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, এ সময়ে ইসরায়েলি সেনারা অন্যত্র সরে যাবেন; যাতে গাজায় মানবিক সহায়তা ঢুকতে পারে। আবার, এ সময়ের মধ্যে ৫০ ইসরায়েলি জিম্মির অর্ধেককে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে ফিলিস্তিনি বন্দীদের।

গত দুই বছর ধরে হামাস বিভিন্ন সময় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রস্তাব মানতে রাজি হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সেগুলো নানা অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করে গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।

সবচেয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। হামাস যুদ্ধের স্থায়ী অবসান চাইছে, কিন্তু ইসরায়েল চাইছে অস্থায়ী বিরতি; যাতে গাজা থেকে তাদের জিম্মিরা মুক্তি পাওয়ার পর আবার ধ্বংসযজ্ঞ ও মানুষকে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের অভিযান চালাতে পারে।

আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে ধর্মঘট-বিক্ষোভ১৮ আগস্ট ২০২৫

এদিকে ইসরায়েল গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে। গাজা উপত্যকার একসময়ের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ এ নগর থেকে হাজারো ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এ কারণে সেখানে লাগাতার বোমা নিক্ষেপ করছে তারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, ‘হামাস ব্যাপক চাপে আছে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘হামাস এখন আলোচনায় রাজি হচ্ছে শুধু এই কারণে যে তারা জানে, আমরা গাজা সিটি দখলে অটল।’

অন্যদিকে কট্টর দক্ষিণপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘হামাস নিজেদের ধ্বংস হতে দেখছে। এখন আংশিক চুক্তির মাধ্যমে বাঁচতে চাইছে। এ কারণেই আমাদের কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়।’

আরও পড়ুনগাজায় দিনে ত্রাণ দরকার হাজার ট্রাক, যাচ্ছে ১০০টি১৬ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ম ন ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ