রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন চার কন্যার পিতা ৫১ বছর বয়সি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোর্শেদ খান, যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ বছরের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেছে বলে শোনা যায়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোর্শেদ খান বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে মনোনয়নপত্র নেন।

আরো পড়ুন:

রাবিতে রানীক্ষেত ভাইরাস প্রতিরোধ-বিষয়ক সেমিনার

রাবি শিক্ষকের বাসার তালা ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা চুরি

মনোনয়নপত্র নেওয়ার পর তিনি বলেন, “আমার বয়স এখন ৫১ বছর। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়ি। 

“রাকসুতে প্রচার ও প্রকাশনা পদের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছি। এই পদে জয়ের জন্য আমি আশাবাদী; কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাকে চেনেন, ভালোবাসেন, অনুপ্রেরণা দেন। আশা করি, একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে সবাই আমার পাশে দাড়াবেন ও ভোট দেবেন। আমি জয়ী হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করব,” বলেন মোর্শেদ খান।

মোর্শেদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় থেকেই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন কয়েকবার। কেন তিনি এত বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সেই কারণ জানতে চাইলে বলেন, “২০০২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। পরিবারের কারণে তখন পড়াশোনা ছেড়ে আসতে হয়।”

মোর্শেদ খান তার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই লড়াই-সংগ্রামের ব্যাপারে অকপট। তিনি বলেন, “অনেক দিন আমি বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করি। একটা সময় মনে হলো আবার পড়াশোনা শুরু করা দরকার। তখন আমি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আবার পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৭ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে এইসএসসি পরীক্ষা দেই। তারপর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাবিতে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হই।”

সংসার জীবনে চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে যাওয়া মোর্শেদ খান চার কন্যার পিতা। তিনি বলেন, “আমি বিবাহিত, আমার চারটি মেয়ে। একটা মেয়ের বিয়ে দিয়েছি গত মাসে। সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী। আমি হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী; আমার জামাই জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।”

মোর্শেদ খানের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার রাজাপুর গ্রামে।এদিকে বুধবারই শেষ হচ্ছে রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলার সময়; ডোপ টেস্টের সময়সীমাও শেষ হয়েছে। সকাল থেকে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। সিনেটে দুজন ও কেন্দ্রীয় পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ঢাকা/ফাহিম/রাসেল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি